মাসে ১৫০০০ টাকার ডোমের চাকরি - এর জন্যই কি ইঞ্জিনিয়ার, স্নাতক, স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীরা? প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের এই অবাক করা ঘটনা।
এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিভাগে মৃতদেহ পরিচালনার পরীক্ষাগার সহকারী, সহজ ভাষায় বললে ডোম। এই পদের নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র চেয়ে দেওয়া বিজ্ঞাপনে প্রার্থীদের যোগ্যতা বলা হয়েছিল অষ্টম শ্রেনী পাশ। কার্যক্ষেত্রে এই পদের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, ইঞ্জিনিয়ারদের ছড়াছড়ি। অথচ, এই পরীক্ষাগার সহকারী বা ডোমের পদের মাসিক পারিশ্রমিক মাত্র ১৫,০০০ টাকা।
এনআরএস হাসপাতালে এখন একজন মহিলা-সহ মোট চারজন ডোম কাজ করেন। এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ করা হবে। তার জন্যই আবেদনপত্র চেয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে খবর এই ৬টি পদের জন্য আবেদন করেছেন ৮০০০ জনেরও বেশি। তারমধ্যে ৫০০ স্নাতকোত্তর এবং ২,২০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী। আরও ১০০ জন আছেন ইঞ্জিনিয়ার। এঁদের মধ্য থেকে ৭৮৪ জনকে বাছাই করা হয়েছে লিখিত পরীক্ষার জন্য। এরমধ্যে ৮৪ জন মহিলা প্রার্থী আছেন। ১ অগাস্ট হবে এই লিখিত পরীক্ষা। আরও জানা গিয়েছে, এই পদের জন্য বয়সের সীমা ১৮ থেকে ৪০ বছর রাখা হলেও বাছাই করা ৭৮৪ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন কিশোর এবং ৪৪ বছরের প্রবীণও রয়েছেন। মহিলার সংখ্যাও এর আগের থেকে অনেক বেশি।
ডোমের পদে কাজ পাওয়ার জন্য করা আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের কোনও শংসাপত্র জমা দিতে হয়নি, কারণ বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চাহিদা মাধ্যমিক স্তরেরও নীচে। তাই ঠিক কতজন শিক্ষাগত যোগ্যতা সঠিক জানিয়েছেন, তা যাচাই করার উপায় নেই। তবে হাসাপাতালের একজন পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, এত বেশি যোগ্যতা সম্পন্নরা এই চাকরির জন্য আবেদন করেছেন, এতজন স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক আছেন, যা অবাক করার মতো। তিনি আরও জানিয়েছেন, সাধারণত দেখা যায়, যাদের পরিবারের কোনও সদস্য ডোম হিসাবে কাজ করেন কিংবা করতেন এবং যে কারণে এই কাজের প্রকৃতির সঙ্গে যারা পরিচিত, তাঁরাই ডোমের চাকরির শূন্যপদগুলির জন্য আবেদন করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে।
আরও পড়ুন - উচ্চ মাধ্যমিকে নম্বর কম পাওয়ায় রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ, টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ পড়ুয়াদের
আরও পড়ুন - দিল্লিতে কি 'ডেলি প্যাসেঞ্জারি' করবেন মমতা, কেন হঠাৎ তাঁকে সংসদীয় দলের নেতা করা হল
আরও পড়ুন - সোমবার থেকে বাড়ছে মেট্রো সংখ্যা, বদল সময়সূচিতেও
সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, কোভিড পর্যায়েও বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের কাজ হয়েছে। তবে ডোমের চাকরির জন্য এত বেশি যোগ্যতার আবেদনকারীদের কোভিড পর্বেও দেখা যায়নি। শিক্ষাবিদরা অবশ্য বলছেন, এর সঙ্গে সম্ভবত কোভিডের যোগ নেই। কারণ কোভিডের আগে ২০১৭ সালেও পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। অন্য কোনও সরকারী চাকরি না পেয়ে এমফিল ডিগ্রিধারী এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীরা মালদা মেডিকেল কলেজে ডোমের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। দুটি গ্রুপ ডি পদের জন্য যে ৩০০ টিরও বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল, সেগুলির এক চতুর্থাংশই ছিলেন হয় পিএইচডি করছেন অথবা আগেই এমফিল ডিগ্রি পেয়েছেন, এমন।