লক্ষীপুজোর আগের রাত থেকে হিংসায় ধুন্ধুমার কলকাতার মোমিনপুর, পুলিশ প্রশাসনের দিকে ব্যর্থতার আঙুল বিজেপি-র

তিন দিন ধরে দফায় দফায় গোষ্ঠী সংঘর্ষে ধুন্ধুমার মোমিনপুর। দুই দলই একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানির অভিযোগ এনেছে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে এবং এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে আস্কারা দেওয়ার অভিযোগও এনেছে বিজেপি। 
 

Web Desk - ANB | Published : Oct 10, 2022 3:56 AM IST / Updated: Oct 10 2022, 11:18 AM IST

দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষকে ঘিরে প্রায় বনধের মত পরিস্থিতি এখন মোমিনপুরে। লক্ষী পুজোর আগের রাত থেকে এই হিংসা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসনের দিকে ব্যর্থতার আঙুল তুলেছে বিজেপি। এমনকী তাদের লাগাতার টুইট আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দায়ী করা হয়েছে এই ঘটনায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেওয়ায়। সামনে এসেছে একাধিক ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তার উপরে থাকা বিশাল বাঁশের কাঠামো ঝাঁকিয়ে ফেলে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগকারী বিজেপি-র দাবি এই সব দুর্গাপুজোর মণ্ডপের গেট। আবার দুই দলকে একে অপরের উপরে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে। এমনকী, ইকবালপুর থানায় ঘেরাও করে একদল বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। পাশাপাশি এই একই ভিডিও-তে কাউকে বলতে শোনা যাচ্ছে আরও বেশি করে মানুষকে ইকবালপুর থখানায় নিয়ে আসতে যাতে ঘেরাও আরও বেশি জোরদার করা যায়। ঘটনায় লক্ষীপুজোর রাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে চিঠি লিখেছেন বলেও জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাতে আধা সেনা নামানো হয় সেই সুপারিশও নাকি এই চিঠিতে করেছেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। কেন এই ভয়াবহ হিংসা? কেন পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থছ এমন হিংসা নিয়ন্ত্রণে? এই প্রশ্ন তুলে সকাল ১০টায় খিদিপুরে যাওয়ার কথা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের।  


জানা গিয়েছে, এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য ধর্মালম্বীদের বাড়িতে জোর করে কিছু পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এতে ধর্মীয়ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠে। পরে ওই পতাকাগুলো খুলে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এর জেরে শুরু হয় হিংসা। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় মোমিনপুরের ইকবালপুর থানা এলাকায়। এরপর রাতের অন্ধকারে একদল দুষ্কৃতী একের পর মোটরবাইক এবং দোকান ও রাস্তার পাশে থাকা গুমটিতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লক্ষীপুজোর সকালে এই নিয়ে নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে সরব হন। ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানান। 


পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন ইকবালপুর থানা দুষ্কৃতীদের না ধরে এমন একজন মানুষকে আটক করে যিনি ওই পতাকা খুলে ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি ছিল যে এই পতাকায় তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানা হয়েছে। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিলে ফের শুরু হয় সংঘর্ষ। দফায় দফায় দুই গোষ্ঠীর হিংসায় মোমিনপুরে কার্যত লক্ষীপুজোর দিনে অলিখিত বনধের চেহারা নেয়। হিংসা মোকাবিলায় পুলিশি ব্যর্থতার কথা বলে লাগাতার টুইট করতে থাকেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। 


লক্ষীপুজোর রাতে মোমিনপুর হিংসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তিনি জানান, হিংসা মোকাবিলায় আধা সেনা নামানোর দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে চিঠি লিখেছেন তিনি। সেই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যপাল এল গণেশন-কেও চিঠি দিয়েছেন  বলে টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছেন।  

স্বাধীনতার সময় নোয়াখালিতে ১০ অক্টোবর বিশাল রকমের দাঙ্গা হয়েছিল। যেখানে অসংখ্য হিন্দুদের প্রাণহানি ঘটনা ঘটেছিল এবং জখম হয়েছিলেন অসংখ্য হিন্দু। এবারের লক্ষীপুজোর দিনে সেই নোয়াখালি হিংসার বর্ষপূর্তির দিনটি পড়ে। এই নিয়ে বিজেপি-র পক্ষ থেকে টুইটারে একের পর এক পোস্ট হয়। মোমিনপুর হিংসার কথা উল্লেখ করে তাকে নোয়াখালির হিংসার সঙ্গে তুলনা করেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী নেতা অমিত মালব্য। তিনি এই পোস্টগুলির মধ্যে একটিতে আবার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। যেখানে কিছু মানুষকে কিছু অগ্নিদগ্ধ দোকানের সামনে লাঠি দিয়ে কিছু পেটাতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিও-র সঙ্গে আধৌ মোমিনপুর হিংসার কোনও সংযোগ আছে কি না তা স্পষ্ট করেননি অমিত মালব্য।

টুইটারে অমিত মালব্যের আরও একটি টুইট সামনে এসেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে একদল উত্তেজিত মানুষ রাতের অন্ধকারে বড় বড় বাঁশের স্ট্যান্ডকে ভেঙে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। অন্য একদল মানুষ বিভিন্ন জিনিসে ভেঙে ফেলে দিচ্ছে। অমিত তাঁর টুইটে দাবি করেছেন এসবই মোমিন হিংসার ছবি। যদিও, এই ভিডিও-র কোনও সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পায়নি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা।

মোমিনপুর হিংসা প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন দিলীপ ঘোষ। এই নিয়ে লক্ষীপুজোর রাতেই টুইট করেন তিনি।

বিজেপি রাজ্য নেতাদের লাগাতার টুইটেও মোমিনপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশ প্রশাসনও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বলেও অভিযোগ করেছেন আক্রান্তরা। লক্ষীপুজোর রাতেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এলাকা জুড়ে ব্যাপক বোমাবাজির অভিযোগও সামনে এসেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে এবং প্রায় বনধের চেহারা নিয়েছে এলাকা। আক্রান্তদের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতায় বারবার তারা নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের একটি সূত্রে খবর এই হিংসার পিছনেও শাসক দলের দুই গোষ্ঠী জড়িত। মোমিনপুর এলাকায় দুই বিশিষ্ট তৃণমূল নেতাদের দুই গোষ্ঠী দুটো পক্ষ নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। যদিও, পুলিশ সরকারিভাবে এই দাবিতে কোনও সিলমোহর দেয়নি।

আরও পড়ুন- 
কোজাগরী পূর্ণিমাতেও অন্ধকারে ওঁদের জীবন, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে ধর্নামঞ্চে সপরিবারে কৌশিক সেন 
লক্ষীপূজোর সন্ধ্যায় শুভেন্দুর বাড়িতে সুকান্ত মজুমদার , শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ নাকি কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি ? 
চাকরি নেই-তাই লক্ষ্মীও নেই, শুধু ফুল দিয়েই পুজো এসএসসি বিক্ষোভকারীদের     

Read more Articles on
Share this article
click me!