
Health News: কিছুদিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বছরের শুরুতেই জীবনধারায় অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ঝুঁকি নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছিল। বছরে বিশ্বে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ খারাপ খাদ্যভ্যাসের কারণে মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় ২ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ। এই পরিসংখ্যান নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞমহল সুস্থ থাকতে সতর্কতা জানাচ্ছে বার বার। WHO -এর তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক লবণ খাওয়ার পরিমাণ ৫ গ্রামেরও নীচে নামাতে হবে। কারণ সাধারণ লবণে আছে সোডিয়াম, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। WHO -এর ওই নির্দেশিকায় আরও বলা ছিল, টেবিল সল্ট বা সাধারণ লবণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
সাধারণ সাদা লবণে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হওয়ায় ভালো বিকল্প হতে পারে বিটনুন। তবে দু’টিতেই প্রায় সমপরিমাণ সোডিয়াম রয়েছে। তাহলে দুই ধরণের লবণের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
১। সাধারণ লবণ এবং বিটনুনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাত হল প্রক্রিয়াকরণে। সাদা লবণ অতিরিক্ত মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত, ফলে দেখতে হয় সাদা, মিহি, ঝরঝরে।অন্য দিকে, বিটনুনকে খুব বেশি পরিশোধন করা হয় না। বিট লবন জলে গুললে কালো পাথরের টুকরো নিচে থিতিয়ে পড়ে এর থেকেই বোঝা যায় পরিশোধন কম করা হয়। বিটনুনে কিছুটা লালচে ভাব থাকে, দানাও সমান হয় না। কিছুটা ভিজে ভাব থাকায় বিটনুন বেশি দিন পড়ে থাকলে জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
২। স্বাদেও তফাৎ আছে সাধারণ লবণ আর বিটনুনে। বিটনুনে খানিকটা নোনতা ডিমের মতো বাজে গন্ধ হয়, টক ভাবও থাকে। সাধারণ নুন শুধুই নোনতা, তবে কোনো গন্ধ নেই এতে।
৩। প্রক্রিয়াকরণের জন্য সাধারণ সাদা লবণে কোনও খনিজ অবশিষ্ট থাকে না, কৃত্রিম ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয় আয়োডিন। অন্যদিকে বিটনুন পরিশোধন কম করা হয় বলে এতে প্রাকৃতিকভাবেই খনিজের উপস্থিতি থাকে। যেমন - আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম আর ক্যালশিয়ামের মতো উপকারী খনিজ মেলে।
৪। গ্যাস-অম্বল এবং পেটফাঁপার মতো সমস্যাতেও সাহায্য করে বিটনুন। কিছুটা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস থাকায় তা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে।
তবে কতটা উপকারী বিটনুন?
প্রতি ১০০ গ্রাম বিটনুনে সোডিয়াম রয়েছে ৩৮ হাজার ২০০ মিলিগ্রামআর, আবার প্রতি ১০০ গ্রাম সাধারণ সাদা লবণে সোডিয়াম রয়েছে ৩৮ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ, সাধারণ লবণের থেকে বিটনুনে সোডিয়াম সামান্যই কম। প্রশ্ন হল তবে কেন বিটনুন খাব?
১০০ গ্রামের অনুপাতে বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রার বিশেষ তফাত নেই ঠিকই তবে আসল ম্যাজিক অন্য জায়গায়। এক চামচের হিসাবে তুলনা করে দেখলে তফাত মিলবে অনেকটাই। চামচের হিসাবে বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রা সাধারণ সাদা নুনের তুলনায় অনেকটাই কম। এক চা চামচ সাধারণ লবণে সোডিয়াম থাকে ২৩৩০ মিলিগ্রাম। সেখানে এক চা চামচ বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রা থাকে মাত্র ৪২০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ সাধারণ লবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
এর কারণ হল বিটনুনের দানার গঠন অসমান এবং অমসৃণ। এক চামচে সাধারণ নুন যে পরিমাণে ওঠে, গঠনগত কারণে বিটনুন ওঠে তার থেকে কম। সেই হিসাবে স্বভাবতই সোডিয়াম এর পরিমাণও কম হয় আর শরীরে সোডিয়াম কম ঢোকে।
১। এখন বাজারে বিটনুনেরও পরিশোধিত রূপ পাওয়া যায়, যা সাধারণ নুনের মতোই মিহি ও ঝরঝরে। এই ধরনের বেটনুন গুলিতে চামচের পরিমাণে সোডিয়ামের মাত্রাতে খুব একটা তফাত হবে না।
২। অপরিশোধিত বিটনুন ব্যবহার করলেও তা সাধারণ লবণের সমপরিমাণে বা তার কম ব্যবহার করলে তবেই সোডিয়াম গ্রহণ কম হবে শরীরে। কিন্তু যদি ১ চামচ নুনের বদলে দেড় চামচও বিটনুন ব্যবহার করা হয়, তবে চামচ হিসেবে লবণে সোডিয়াম এর মাত্রা সেই একই হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে সেদিকেও।
৩। এক চা চামচে ৬ গ্রাম নুন হয়। আর WHO -এর নির্দেশিকা অনুযায়ী সারা দিনে নুন খাওয়ার মাত্রা ৫ গ্রামের বেশি কোনোভাবেই করা যাবে না। সেদিকে খেয়াল রেখে সাধারণ লবণ বা বিটনুন খাওয়ার মাত্রা ঠিক করতে হবে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।