
বর্তমানে গ্যাস-অম্বল বা বুকজ্বালার সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে দেখা যায়। অনেকেই এই লক্ষণগুলিকে সাধারণ অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা (GERD) গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ় বলে ধরে নেন। যদিও এটি অনেকাংশে সত্যি, তবু সব সময়ই এ সমস্যার পেছনে একটাই কারণ থাকে না। একাধিক রোগের উপসর্গ হতে পারে এই অম্বল।
ঘন ঘন অম্বল, বুক জ্বালা, বুকে ব্যথার কারণ অ্যাসিড রিফ্লাক্স না হয়ে হাইটাস বা হাইটাল হার্নিয়াও হতে পারে।হার্নিয়ার কথা অনেকেই জানেন, তবে হাইটাস হার্নিয়া অতটা পরিচিত অসুখ নয়।
আমাদের দেশে ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সি অন্তত ৬০ শতাংশের হাইটাস হার্নিয়া আছে। তবুও রোগটি নিয়ে সচেতনতা তেমন নেই, ফলে অনেকেই এখনও কেবল সাধারণ গ্যাস অম্বলের সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যান। পরে বাড়াবাড়ি হলে মাল্টিপল আলসার ধরা পড়লে তখন রোগটির চিকিৎসা শুরু হয়।
হার্নিয়া কী?
পেটের সামনের দিকে থাকে পেশির স্তর। সেখানে থাকে অন্ত্র, নালি, চর্বি ইত্যাদি। কিন্তু পেটের মধ্যে কোথাও ফুটো হয়ে গেলে এই ভিতরের পদার্থগুলি বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইবে। একেই হার্নিয়া বলে।
হাইটাস হার্নিয়া কী?
‘হার্নিয়া’ শব্দটা অনেকেরই পরিচিত। পেটের পেশির স্তরে ফাঁক তৈরি হয়ে অন্ত্র বা অন্যান্য অঙ্গ বাইরে ঠেলে আসলে তাকে সাধারণ হার্নিয়া বলা হয়। কিন্তু হাইটাস হার্নিয়া-র ক্ষেত্রে হয় উল্টো ঘটনা। এই রোগে পাকস্থলীর একটি অংশ বা আরও কিছু অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ঠেলে উপরের দিকে উঠে যায়, বুকের দিকে চলে আসে।
খাদ্যনালি বা ইসোফেগাসের সঙ্গে পাকস্থলীর যে সংযোগস্থল, সেখানে একটি ছোট ফাঁক বা 'হাইটাস' থাকে। সেই ফাঁক দিয়ে পাকস্থলীর উপরের অংশ বুকের গহ্বরে উঠে এলে তাকে হাইটাস হার্নিয়া বলা হয়।
হাইটাস হার্নিয়ার লক্ষণ
হাইটাস হার্নিয়ার উপসর্গগুলি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো হলেও আরও জটিল হতে পারে।
* ঘন ঘন অম্বল বা বুকজ্বালা হওয়া * শ্বাসকষ্ট হওয়া * খাবার গিলতে কষ্ট * গলায় ব্যথা বা স্বর পরিবর্তন * গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা, আলসারের লক্ষণ * মলের সঙ্গে রক্ত পড়া
হাইটাস হার্নিয়ার চিকিৎসা
হাইটাস হার্নিয়া শুধু ওষুধে সারা না, প্রয়োজন অস্ত্রপচার। রোগীর অবস্থা দেখে ল্যাপারোস্কোপি করেন চিকিৎসকেরা। ‘ল্যাপারোস্কোপিক ফান্ডোপ্লিকেশন’ নামে এক ধরনের অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি আছে, যা কাটাছেঁড়া না করেই করা হয়। খাদ্যনালি ও পাকস্থলীতে ক্ষত হলে, তা মেরামত করার জন্যই এই সার্জারি করা হয়।
হাইটাস হার্নিয়া থেকে বাঁচতে কী করণীয়?
হাইটাস হার্নিয়া থেকে বাঁচতে খাদ্যতালিকায় নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার দিনের পর দিন খেতে থাকলে, তার থেকে এই রোগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। হাইটাস হার্নিয়ার আরও একটি কারণ হল স্থূলত্ব। ওজন বাড়তে থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া বয়স্কেরাও এই রোগে ভোগেন।