
ওজন কমানো এখন আর শুধু কম খাওয়া বা বেশি ওয়ার্কআউটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আজকের ফিটনেস জগতে, হাই-প্রোটিন ডায়েট একটি বড় জায়গা করে নিয়েছে। জিমে যাওয়া থেকে শুরু করে বাড়িতে ব্যায়াম করা পর্যন্ত, সবাই বিশ্বাস করে যে প্রোটিন ওজন কমাতে সহায়ক। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে এই ডায়েট আপনার কোলন (বৃহদন্ত্র)-এর উপর কী প্রভাব ফেলে? সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যদি প্রোটিন গ্রহণ খুব বেশি এবং ফাইবার খুব কম হয়, তবে ওজন কমতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
হাই-প্রোটিন ডায়েট কী?
হাই-প্রোটিন ডায়েট হলো এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যেখানে আপনার প্রতিদিনের খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট কমিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়, যেমন - ডিম, চিকেন, মাছ, পনির, টোফু বা ডাল। এই ডায়েটের অনেক স্বল্পমেয়াদী সুবিধাও রয়েছে। যেমন পেশীর টোন এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়, খিদে কম লাগে, মেটাবলিজম দ্রুত হয় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু যদি এই ডায়েট দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ফল-সবজি, শস্য, স্যালাড বাদ পড়ে, তবে এই স্বাস্থ্যকর ডায়েটই আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্য অর্থাৎ মাইক্রোবায়োমের ক্ষতি করতে পারে।
কোলন স্বাস্থ্য কেন জরুরি?
কোলন আমাদের পাচনতন্ত্রের শেষ, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এখানেই শরীর খাবার থেকে অবশিষ্ট অংশগুলি প্রক্রিয়া করে এবং টক্সিন বের করে দেয়। আমাদের বৃহদন্ত্রে লক্ষ লক্ষ ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এমনকি মেজাজকেও প্রভাবিত করে। যখন আমরা লো-কার্ব, হাই-প্রোটিন ডায়েট গ্রহণ করি, তখন এই ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে কারণ তাদের ফাইবারের প্রয়োজন হয়।
ফাইবার কমে যাওয়ায় অন্ত্রের এই ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বাড়তে শুরু করে। গবেষণা অনুসারে, এই অবস্থায় অন্ত্রে অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো বিষাক্ত যৌগ তৈরি হতে শুরু করে, যা সময়ের সাথে সাথে কোলনের আস্তরণকে দুর্বল করে এবং ক্যান্সারের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হাই-প্রোটিন ডায়েটের লুকানো ঝুঁকি
যখন ফাইবার কম এবং প্রোটিন বেশি থাকে, তখন কোলনে প্রোটিন ফারমেন্টেশন শুরু হয়। এর ফলে উৎপন্ন গ্যাস এবং টক্সিন কোলনের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে রেড মিট বা প্রসেসড মিট দিয়ে তৈরি ডায়েট, উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করার কারণে কার্সিনোজেনিক যৌগ তৈরি করতে পারে।
ভালো ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়া এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্ত্রের প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব এবং দীর্ঘমেয়াদে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।