
Health News: স্তন ক্যানসার এক জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ। সময়মতো ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এক বার সেরে ওঠার পরেও বহু রোগীর ক্ষেত্রে এই মারণ রোগ আবার ফিরে আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’, অর্থাৎ ক্যানসার কোষ শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া বা নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠা। এই পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এত দিন পর্যন্ত একমাত্র ভরসা ছিল দীর্ঘমেয়াদি কেমোথেরাপি ও রেডিয়োথেরাপি। তবে এবার স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসতে চলেছে এক নতুন যুগান্তকারী চিকিৎসাপদ্ধতি।
সম্প্রতি শিকাগোতে আয়োজিত আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিক্যাল অনকোলজি-র বার্ষিক সম্মেলনে গবেষকেরা ঘোষণা করেছেন, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে দুটি নতুন ওষুধ— ইনাভোসিলিব (Inavolisib) ও পালবোসিসলিব (Palbociclib)— উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষকেরা দেখেছেন, এই দুই ওষুধ ক্যানসার কোষের বিভাজন দ্রুত থামিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি, ক্যানসার কোষের ফিরে আসার পথও বন্ধ করে দেয়। কেবল তা-ই নয়, রোগীর সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার সময়কালও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ। আসলে এই গবেষণার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা, যাতে কেমোথেরাপির যন্ত্রণা ছাড়াই ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করা যায় এবং রোগীর শরীরে ক্যানসার যাতে পুনরায় ফিরে না আসে, তা নিশ্চিত করা যায়।
গবেষণায় কী বলছে?
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ বাহিত হয়ে দেহের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সেরে ওঠার পরেও তা ফিরে আসতে পারে একইভাবে ভা কখনো অন্য রূপে। যে কারণে টানা দু’বছর ধরেও কেমোথেরাপি নিতে হয় অনেককে। এর পরেও ক্যানসার কোষের ফের বিভাজন হতে পারে, আবারও ছড়াতে পারে। অনেকসময় তা পেট সিটি স্ক্যান বা ম্যামোগ্রাফির মতো পরীক্ষাতেও সহজে ধরা পড়ে না। যত ক্ষণে রোগী বুঝতে পারেন, তত ক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।
সাধারণত প্রথম বার ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার পর তিন-চার বছরের মধ্যেই আবার তা ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারও ক্ষেত্রে এই সময়টি ১০-১২ বছরও লেগে যেতে পারে। ততদিনে রোগী নিজেকে সুস্থ ভাবে নিতে শুরু করে। পরে আবারও ফিরে এলে তাদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার মতো বিপদ নেমে আসে।
ক্যান্সারের এই ফিরে আসার পথটাই বন্ধ করতে ওষুধ দু’টি নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ইনাভোসিলিব নামক ওষুধটি ক্যানসারের জন্য দায়ী ‘পিআইকে৩সিএ’ প্রোটিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এই প্রোটিন শরীরে থেকে গেলেই ক্যানসার বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়। তবে, ওষুধ দু’টি ট্রায়াল পর্ব সেরে কবে বাজারে আসবে সে নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি-সহ ২৮টি দেশে এই দু’টি ওষুধের ট্রায়াল চলছে ক্যানসার রোগীদের উপরে। পরীক্ষা করে তবেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন গবেষকেরা। আগামী দিনে ওষুধ দু’টি সাধারণের নাগালে এলে, তা কম খরচে বহু জনের প্রাণ বাঁচাতে পারে বলে আশ্বাসও দিচ্ছেন গবেষকেরা।
স্তন ক্যানসার রোগীদের জন্য এটি এক নতুন আশার আলো। ইনাভোসিলিব ও পালবোসিসলিব যৌথভাবে ভবিষ্যতে এমন এক চিকিৎসাপদ্ধতির পথ দেখাতে পারে, যা ক্যানসারকে কেমোথেরাপি ছাড়াই নির্মূল করতে পারে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।