
গত ২২ এপ্রিলের পর থেকে দফায় দফায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে, এর জেরে নতুন এক মনোরোগ তৈরি হচ্ছে। যা মনোবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। একে ‘যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগ’ বা ‘War Anxiety' বলা হচ্ছে। মনোবিদদের মতে, কোনও দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি দেখা দিলে তা থেকে সাধারণ জনগণের মনের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। যুদ্ধের সম্ভাব্য গতিপথ বা ফলাফলের জন্য সমাজে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, আতঙ্কিত হয়ে উঠতে পারে জনগণ। যা দু দেশের জনগণের পক্ষেই প্রযোজ্য।
দেশে এই ধরনের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিটে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত রাখতে শুরু করেন। হঠাৎ বাজারে চাহিদা ও যোগানের এই তারতম্যে অর্থনীতির ওপর তো পরেই, সাথে কালোবাজারিও দেখা দিতে পারে। আবার সমাজমাধ্যমগুলিতে অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে ভুয়ো খবর ছড়াতে পারে, যা দু দেশের জনগণের মধ্যে আতঙ্কের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়। একে ই যুদ্ধের আবহ, তার ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তা মানুষের মনে আরও জেঁকে বসে। এর থেকে মানসিক উদ্বেগ, অবসাদ, এমনকি কথাবার্তা ও আচরণে বদল আসতে পারে জনগণের মধ্যে।
যুদ্ধের আতঙ্ক একটি দেশের সব অঞ্চলে একই রকম নাও হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে। যেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, বা যুদ্ধ ঘাটির আশেপাশের অঞ্চলে মানুষের মধ্যে 'যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগ' বা 'war anxiety' সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের কোনও প্রান্তে দু’পক্ষের সরাসরি যুদ্ধ না হলেও, সেখানে সমাজে ও মানুষের মনে অনিশ্চয়তা থেকেও ভীতি বা আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।
এর আগে ভারতে ২০১৬ সালের নোটবন্দি বা ২০২০ সালে অতিমারির সময়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরণের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। এবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের মনে আবারও এই ভীতি ও আতঙ্কের সঞ্চার হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারের তরফে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো’ (PIB)-র এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য ভারতে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং আতঙ্ক ছড়ানো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছড়ানো ভুয়ো খবরের শিকার হবেন না। সতর্ক থাকুন। সাবধান থাকুন।’’
যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগের উপসর্গ কী কী হতে পারে ?
১. ক্রমাগত যুদ্ধ এবং নিজের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা যদি কাউকে ভাবিয়ে তোলে, বুঝতে হবে তিনি যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগে ভুগছেন।
২. যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদে উৎসাহ বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খবরের চ্যানেল দেখতে থাকলে আতঙ্কগ্রস্ত হতে পারেন তিনি।
৩. সমাজমাধ্যমে যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন মতামত বা ভুয়ো খবরে বিচলিত হলে, তা মানসিক উদ্বেগের লক্ষণ।
৪. ঘুমের অভাব বা বার বার দুঃস্বপ্ন দেখলে সাবধান হতে হবে।
৫. এমতবস্থায় বার বার মুড সুইং, অন্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রবণতা, রাগ বা হতাশা দেখা দিলে, সাবধান হওয়া জরুরি।