
শরীরে 'ওয়াটার রিটেনশন’ হলে মেদ ঝরানো সহজ হয়। অনেককেই বলতে শুনেছেন, খাবার কম খেয়েও শুধু জল খেলেও নাকি ওজন বেড়ে যায়, কথাটা কতটা সত্যি বা মিথ্যা জানেন কী? আসলে জল নয়, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যভ্যাস বা অস্বাভাবিক কোনো রোগ হলেই শরীরে জলের পরিমাণ বাড়ে সাথে ফোলাভাবও বাড়ে শরীরের। চিকিৎসকেরা সতর্ক করেন যে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকলেই শরীরের টিস্যুতে , অস্থিসন্ধিতে ও নানা প্রকোষ্ঠে জল জমে।
বিশেষত নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন, নানারকম পরীক্ষার নিরীক্ষার পরও এই জল জমার কোনো বিশেষ কারণ বা রোগ ধরা না পড়লে চিকিৎসকেরা একে ফ্লুইড রিটেনশন সিনড্রোম বা ওয়াটার রিটেনশন বলে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা, নিউরোটিক সমস্যা, ওজন কমানোর জন্য ল্যাক্সেটিভস ধরণের ওষুধের প্রতিক্রিয়ার কারণে এই সিনড্রোম দেখা দেয়।
শরীরের জল অস্বাভাবিকভাবে জমার কারণ :
দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, বসা বা শুয়ে থাকা রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করতে পারে এবং শরীরের নীচের অংশে জল জমতে পারে। উচ্চ সোডিয়াম (নুন) যুক্ত খাদ্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জল জমায় শরীরে।
মাসিকের সময় হরমোনের তারতম্য, গর্ভাবস্থা, বা মেনোপজ অবস্থায় জল জমার আশঙ্কা বেশি।
উচ্চ কর্টিকোস্টেরয়েড, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) জাতীয় ওষুধগুলি শরীরে জল জমাতে সাহায্য করে। হৃদরোগ, যকৃত ও কিডনির সমস্যার কারণে শরীরে জল ধারণ হয়।
চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন?
১.নুন কম খাওয়া - প্রতিদিনের খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে তার বদলে চেষ্টা করুন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে। খাবার পাতে আলাদা করে লবণ খাওয়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার করুন। দৈনিক ২.৩ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
২. পা উঁচুতে রেখে ঘুম - ঘুমানোর সময় পা বালিশের ওপর ও মাথা দেহের সমান্তরালে রাখতে হবে। বসা বা শোয়া বা দাঁড়ানোর সময় শরীরে যাতে কোথাও রক্ত চলাচল না আটকায় টা খেয়াল রাখতে হবে।
৩. ব্যায়াম - পায়ের ব্যায়াম বেশি করতে হবে। পায়ের পেশি বেশি ব্যবহার করলেপায়ে জমা জল কমে গিয়ে ফোলা কমে যায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম বা সাঁতার কাটার মতো এক্সারসাইজ করতে পারেন।
৪. মূত্রবর্ধক ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা - বিশেষ কিছু রোগের চিকিৎসায়ে অনেক সময় মূত্রবর্ধক অথবা ডায়উরেটিক ওষুধের প্রয়োজন হয়। যার সর্বনিম্ন ডোসেজ গ্রহণ ও সকালে খাওয়াই শ্রেয়। তবে চেষ্টা করবে ওজন কমাতে যে ল্যাক্সেটিভ ওষুধের ব্যবহার হয় তা যথা সম্ভব ব্ন্ধ করা। শর্করাজাতীয় খাবার কম খেলেও অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়।
৫. তাজা ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং হলে গ্রেইন খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, অ্যাভোকাডো এবং শাক-সব্জী খেতে হবে। অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন সেবন সীমিত করতে হবে।