
পরিবেশ ও নিজের ঘর থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বিকল্প হিসেবে অনেকেই কাঁচের জিনিসপত্র বেছে নেন, বিশেষ করে কাঁচের জলের বোতল ব্যবহার করেন। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা আপনার এই ধারণাকেই পাল্টে দিতে চলেছে। ফ্রান্সের খাদ্য সুরক্ষা সংস্থা ANSES পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচের বোতলে প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্রের তুলনায় বহুগুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা রয়েছে। কি, নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তো সব?
সম্প্রতি Journal of Food Composition and Analysis-এ প্রকাশিত হয়েছে উপরোক্ত গবেষণার বিষয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সফট ড্রিংকস, লেমনেড, আইস টি এবং বিয়ারের মতো পানীয়জাত কাঁচের বোতলগুলিতে প্রতি লিটারে গড়ে প্রায় ১০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা প্লাস্টিক বা ধাতব বোতলের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা পিএইচডি শিক্ষার্থী ইসেলিন চাইব বলেন, “আমরা একেবারেই বিপরীত ফলাফলের প্রত্যাশা করিনি। তবে বোতলের ঢাকনার দিকেই সন্দেহ গিয়ে ঠেকে”।
তবে কি বোতলের ঢাকনাই বিপদের মুলে?
চাইব বলেন, “আমরা দেখতে পেয়েছি, যেসব কণা বোতল থেকে পাওয়া গেছে, সেগুলোর আকার, রঙ এবং পলিমার গঠন ঢাকনার বাইরের প্লাস্টিক রঙের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়।” অর্থাৎ কাঁচের বোতলে ব্যবহৃত প্লাস্টিক-আবৃত ধাতব ঢাকনার বাইরের রঙই এই কণার প্রধান উৎস বলে ধারণা করছে গবেষকদল।
কোন বোতলে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি?
* বিয়ারের বোতলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা সবচেয়ে বেশি মিলেছে - প্রায় ৬০টি কণা/লিটার।
* লেমনেড -এ প্রায় ৪০টি কণা পাওয়া গেছে।
* ফ্ল্যাট ও স্পার্কলিং জলের বোতলে তুলনামূলক কম কণা পাওয়া গেছে — গ্লাস বোতলে গড়ে ৪.৫টি এবং প্লাস্টিক বোতলে মাত্র ১.৬টি।
ব্যতিক্রম ওয়াইনের বোতল
ওয়াইন বোতলগুলিতে তুলনামূলক কম কণা পাওয়া গেছে কারণ সেগুলিতে সাধারণত কর্ক স্টপার ব্যবহৃত হয়, ধাতব ঢাকনা নয়।
সমাধানের চেষ্টা
ANSES-এর গবেষণা পরিচালক গিয়োম ডুফলোসের মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতির পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এক সম্ভাব্য পদ্ধতিতে সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে। বোতলের ঢাকনাগুলোকে প্রথমে বাতাস, এরপর জল, ইথানল এবং আবার জল দিয়ে পরিষ্কার করলে কণার পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসে।
ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণ এখন বৈশ্বিক হুমকি
বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক উৎপাদনের হার উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। ১৯৫০ সালে ১.৫ মিলিয়ন টন উৎপাদন হতো। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪০০.৩ মিলিয়ন টনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ মিলিমিটারের কম আকারের প্লাস্টিক কণা আজ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে শুরু করে মাউন্ট এভারেস্ট, এমনকি মানুষের মস্তিষ্ক ও গর্ভজাত প্ল্যাসেন্টা, গভীর সমুদ্রের মাছের পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা কাঁচের বোতল না প্লাস্টিকের ব্যবহার করা যেতে পারে, তা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
সারাংশ
নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ভেবে আসা কাঁচের বোতলও আজ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্ত নয়। বোতলের ঢাকনার মতো ছোট উপাদানই হতে পারে একটি বড় বিপদের উৎস। তাই ভবিষ্যতের জন্য চাই আরও সচেতনতা, আরও গবেষণা এবং কার্যকর পরিবর্তন।