প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও এখনও বহু মানুষের মধ্যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়ে গিয়েছে। বিশেষত, যারা করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। এখনও বহু মানুষ শ্বাসকষ্ট ও স্নায়বিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই নতুন বিপদ যেন হাতছানি দিচ্ছে। দুর্বল শরীর, বারবার অসুস্থ হওয়া, শ্বাসকষ্ট, স্নায়বিক সমস্যা- এই উপসর্গগুলো কি আপনারও দেখা দিচ্ছে? ভাবছেন, করোনা তো চলে গেছে, তাহলে এসব কেন? সম্প্রতি দুটি গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। করোনা সেরে গেলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যাচ্ছে শরীরে।
ফরাসি ও মার্কিন বিজ্ঞানীদের করা গবেষণা বলছে, করোনা সংক্রমণের তিন বছর পরও রোগীদের নিউরোলজিক্যাল, শ্বাসযন্ত্র ও অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের ঝুঁকি বেশি। ফরাসি বিজ্ঞানীরা ৬৪ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ৩০ মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। 'ইনফেকশাস ডিজিজেস' নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৫২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, তাদের পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রবণতাও বেশি। নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাও তাদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, মহিলাদের মানসিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আর ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ডায়াবেটিস, স্নায়বিক ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ, দীর্ঘমেয়াদী কিডনি সমস্যার ঝুঁকি ৩০ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। গবেষক ড. চার্লস বারডেট জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৩০ মাস পরেও কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু ও স্বাস্থ্যজনিত জটিলতার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাশ, ইয়েল ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ৩৬৬৩ জনের স্বাস্থ্যগত অবস্থা তিন বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। 'দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ' জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি তিন বছর পরেও। তবে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুস্থতার লক্ষণ দেখা গেছে। এই গবেষণাগুলো প্রমাণ করে, করোনা সংক্রমণ শুধু কিছু সময়ের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে। তাই করোনাকে হালকাভাবে না নিয়ে সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।