
World Hand Hygiene Day 2025: একসময় কুসংস্কার আর অজ্ঞতার বেড়াজালে জড়িয়ে ছিল আজকের দিনের খুবই সাধারণ একটি অভ্যাস - হাত ধোয়া। অথচ ২০১৯ এর অতিমারীর পর এই অভ্যাসটি সবার জীবনে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ই মে, বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নতুন এক অভিযানের ওপর আলোকপাত করেছে - Save Lives, Clean Your Hands। জোর দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল গ্লাভস ব্যবহার এবং নিয়মিত সঠিক উপায়ে হাত ধোয়ার উপর। হাত ধোয়া শুধুমাত্র একটি অভ্যাস নয়, এটি জীবাণু প্রতিরোধেরও সর্বপ্রথম প্রতিরক্ষার উপায়। প্রাচীন মিশর ও গ্রিক সভ্যতার সময় পেরিয়ে, উনিশ শতকের সময় থেকে আজ অবধি হাত ধোয়ার কুসংস্কার ও আচারবিধি এখন বদলে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফিরে দেখা যাক সেই দীর্ঘ যাত্রাপথ।
মধ্যযুগীয় ইউরোপে বিশ্বাস করা হতো, গা ধুলে শরীরে ত্বকের পোরস খুলে যাবে, আর তার মধ্য দিয়ে রোগ ঢুকে পড়বে শরীরে। তাদের কাছে স্নান করা বিপজ্জনক মনে করা হত। রাজা থেকে প্রজা সবার কাছেই স্নানের তুলনায় সুগন্ধি বা আতরের জনপ্রিয়তা এবং কদর ছিল বেশি। এমনকী, হাসপাতালে একই অস্ত্রপচারের যন্ত্রপাতি দিয়ে একের পর এক রোগীর চিকিৎসা করা হতো পরিষ্কার না করেই।
স্পেনের রানী ইসাবেলা বলতেন, তিনি জীবনে মাত্র দু’বার স্নান করেছিলেন, একবার জন্মের পর, আরেকবার বিয়ের আগে। লুই চতুর্দশও নাকি সারা জীবনে মাত্র কয়েকবারই স্নান করেছিলেন, তাও গুনে বলা যাবে। এরা প্রত্যেকেই সাবান ও জলের ছেয়ে পরিষ্কার কাপড়, সুগন্ধি আর পরচুলাকেই বেশি ভরসা করতেন। কারণ সেসময় বিশ্বাস করা হত, স্নান করলে শরীরের ছিদ্র দিয়ে খারাপ বাতাস ঢুকে, শরীর অসুস্থ করবে। এর আরও একটি কারণ ছিল অনুন্নত নিকাশি ব্যবস্থা, পরিছন্ন স্নান ঘরের অভাব, এটা সংক্রমণের আঁতুড়ঘর ছিল, যে কারণেই এত ভয়।
১৮৪০-এর দশকে হাঙ্গেরির এক ডাক্তার ইগনাজ সেমেলওয়েইস লক্ষ্য করলেন, যেসব প্রসূতি মা ডাক্তারদের হাতে ডেলিভারি করান, তাঁদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। তিনি বুঝতে পারেন, ডাক্তাররা ময়লা হাতে অন্য অস্ত্রোপচার বা ময়নাতদন্ত সেরে হাত না ধুয়েই মহিলাদের ডেলিভারি করতে আসতেন। এই দেখে সেমেলওয়েইস ডাক্তারদের ক্লোরিন জল দিয়ে হাত ধুতে বলেন। এতে মৃত্যুর হার কমলেও তাঁকে অপমান ও উপহাস করে হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে পাঠানো হলো পাগলা গারদে।
প্রাচীন মিশর বা গ্রিসে ধর্মীয় আচার হিসেবে খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার রীতি ছিল। প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদে শুদ্ধতার জন্য হাত ধোয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হত ঠিকই, তবে এসবই ছিল আচার ও রীতির অংশ হিসেবে।
লুই পাস্তুর ও রবার্ট কখ, এঁরা প্রমাণ করলেন, রোগের কারণ জীবাণু। সেমেলওয়েইসের দাবি অবশেষে বিজ্ঞানসম্মত রূপ পেল। এরপর জোসেফ লিস্টার অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে জীবাণুনাশক ব্যবহার শুরু করলেন।
সাবান আগে থেকেই প্রাচীন ব্যাবিলনে ছিল, তবে তার ব্যবহার বেশি হতো জামাকাপড় ধোয়ার কাজে, স্নানের জন্য নয়। উনিশ ও বিশ শতকে শিল্পায়নের পর সঙ্গে সাবান সহজলভ্য হয়। এরপর বিশ্বযুদ্ধের সময় হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা সৈনিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরা হলেও, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোনও সরকারি গাইডলাইন ছিল না এ বিষয়ে। পরে আমেরিকা CDC স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আনুষ্ঠানিক হাত ধোয়ার নির্দেশিকা জারি করে।
৯০-এর দশকে অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজারের আবিষ্কার হয়। কয়েক বছর আগে ধাক্কা দেয় কোভিড। জীবাণুর ভয়ে হাত ধোয়ার চোটে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ে। মানুষ বোঝে, সতর্ক হয়। হাত ধোয়া মানে শুধু পরিষ্কার থাকা নয়, জীবন বাঁচানো।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।