শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে, 'দেশ তার কণ্ঠস্বর হারিয়েছে। লতা মঙ্গেশকর দেশের জন্য ঐতিহ্যের চেয়ে কম ছিলেন না।' লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে দুই দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে, 'দেশ তার কণ্ঠস্বর হারিয়েছে। লতা মঙ্গেশকর দেশের জন্য ঐতিহ্যের চেয়ে কম ছিলেন না।' লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে দুই দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০১ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'ভারতরত্ন'-এ ভূষিত হন। লতা মঙ্গেশকরের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মন সম্মান, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধায় ভরে যায়। শুধু দেশেই নয় সারা বিশ্বে তার কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে। কোকিলকন্ঠী লতাজির মৃত্যুর পর শিল্প, সাহিত্য, সিনেমা, খেলাধুলায় সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। দেশে দুই দিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে এবং পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাহ করা হবে।
কীভাবে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়, জাতীয় শোক পালনের নিয়ম-
জাতীয় শোক ঘোষণার নিয়ম আগে সীমিত সংখ্যক মানুষের জন্য ছিল। এর আগে দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকা ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শুধু রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় শোক ঘোষণা করা হতো। তবে, স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে প্রথম জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছিল জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর। তাঁর মৃত্যুর পর বিধি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন বা অতীতে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন এমন কোনও ব্যক্তির মৃত্যুতে দেশে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়।
তবে এখন মহামান্য কোনও ব্যক্তির মৃত্যুতেও জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় শোকের নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তিত নিয়ম অনুসারে, এমনকি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রকে বিশেষ নির্দেশ জারি করে জাতীয় শোক ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দেশের যে কোনও বড় দুর্যোগের সময়ও 'জাতীয় শোক' ঘোষণা করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য
জাতীয় শোকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য। তবে প্রতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হলেই জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা উচিত নয়। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাহ করা হলেও জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী বা অন্যান্য বাহিনীতে শহিদ হওয়া সৈন্যদের শেষকৃত্যও রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে করা হয়, তবে রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা করা হয় না। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং জাতীয় শোক ভিন্ন পরিস্থিতিতে নির্ভর করে।
কে এটা ঘোষণা করতে পারেন?
আগে শুধু কেন্দ্র থেকে জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হত। কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি এটি করতে ঘোষণা পারতেন, তবে পরিবর্তিত নিয়ম অনুসারে এই ক্ষমতা রাজ্যগুলিকেও দেওয়া হয়েছে। এখন রাজ্য নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পৃথকভাবে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। যেমনটা হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পৃথকভাবে ঘোষণা করেছিল।
জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে
ভারতের ফ্ল্যাগ কোড অনুযায়ী, জাতীয় শোকের সময় সচিবালয়, বিধানসভা-সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে। একই সময়ে, দেশের বাইরে ভারতীয় দূতাবাস এবং হাই কমিশনগুলিতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে থাকে। এ ছাড়া কোনও আনুষ্ঠানিক ও সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সময় অনুষ্ঠান এবং সরকারী বিনোদনও নিষিদ্ধ।
জাতীয় শোকের সময় সরকারী ছুটি কি?
১৯৯৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কোনও সরকারী ছুটি থাকা বাধ্যতামূলক নয়। এর বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় কোনও ব্যক্তি মারা গেলে ছুটি রয়েছে। যাই হোক, কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর পর সরকারী ছুটি ঘোষণা করার অধিকার রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে বহু রাজ্যে একদিনের সরকারি ছুটি ও ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারে লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে দেশজুড়ে দুই দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।