'কাকা' থেকেই 'কেক', কবে থেকে কীভাবে শুরু হল বড়দিনে কেকের উদযাপন, জানুন বিস্তারিত

প্রাচীন নোরস বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ ‘কাকা’ থেকেই নাকি এসেছে কেক কথাটি। তবে সেই কেকের থেকে আজকের কেক পুরোপুরি আলাদা।

‘দ্য অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি’ অনুযায়ী, কেক কথাটির খোঁজ মিলছে ১৩ শতকে। প্রাচীন নোরস বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ ‘কাকা’ থেকেই নাকি এসেছে কেক কথাটি। তবে সেই কেকের থেকে আজকের কেক পুরোপুরি আলাদা। তখন কেক ছিল মূলত পাউরুটি। তার স্বাদ মিষ্টি করা হত মধু দিয়ে। কখনও কখনও থাকত বাদাম ও কিসমিস, কারেন্টস, সিট্রনের মতো শুকনো ফল। মধ্যযুগে ইউরোপের বেকারিগুলিতে মাঝে মাঝে ফ্রুটকেক ও জিঞ্জারব্রেড বানানো হত। সে সব কেক কয়েক মাসেও নষ্ট হত না।আজকের কেক-এর শুরু ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের বেকারিতে। তখন কাঠ বা ধাতুর বেকিং ট্রে ব্যবহার শুরু হয়। দরকার মতো সেগুলি ছোট বড় করা যেত। মাঝে মাঝে কেক প্যান ব্যবহার করা হত। কখনও কখনও কেক প্যানও ব্যবহার করা হত। ওই সময় চিনির গুড়ো, ডিমের সাদা অংশ ও সুগন্ধী মিশ্রণ ফুটিয়ে কেক সাজানো বা আইসিং করা হত। ১৮৪০ সালে বেকিং পাওডারের আবিষ্কার হলে কেক তৈরি অনেক সহজ হয়ে যায়। কেকের মিশ্রণকে ইস্টের পরিবর্তে বেকিং পাউডার দিয়ে সহজেই ফারমেন্ট করা সম্ভব হয়। তবে সেই কেকও আজকের কেকের সমতুল্য ছিল না। আজকের কেক আসতে অপেক্ষা করতে হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বিশ শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্যন্ত কেকে বয়েলড আইসিংয়ের বদলে আমেরিকান বাটার ক্রিম ফ্রস্টিং ব্যবহৃত হত। সেই ফ্রস্টিং তৈরি করা হত বাটার, ক্রিম, চিনির মিহি গুড়ো এবং বিভিন্ন ফুড ফ্লেভার দিয়ে। ‘দ্য ক্যাসেলস নিউ ইউনিভার্সাল কুকারি বুক' (লন্ডন ১৮৯৪)-এ লেয়ার কেকের এক নতুন রেসিপি পাওয়া যায়। ওই রেসিপি ছিল তখনকার রেসিপির থেকে অনেকটাই আলাদা। তার আগে পর্যন্ত ফ্রান্সের অ্যান্টোনিন ক্যারিমকে বলা হত কেকের বিশিষ্ট শেফ।

আগে পাউরুটি, কেক বানানো হত হাত দিয়ে। সাধারণত রুটি তৈরির সময় যেভাবে আটা বা ময়দার বল বানানো হয়, ঠিক সেভাবে তা বানিয়ে বেলন দিয়ে একটু বেলে বা হাত দিয়ে টিপে তাওয়া কিংবা প্যানে বসানো হত। গোল তাওয়ায় গোটা কেকের সবটুকু অংশ ভালভাবে সেঁকা যেত। সে কারণে ওই সময় থেকেই কেকের আকার গোল হয়ে আসছে। পরবর্তীতে প্যান বা তাওয়ার বদলে ছাঁচ ব্যবহার শুরু হয়। সেই ছাঁচগুলির আকারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল গোল। যে কারণে এখনও বেশিরভাগ কেকের আকার হয় গোল।ক্যালেন্ডারে ক্রিসমাস বা বড় দিনের কেকের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে প্রথম ক্রিসমাস বড়দিন পালন করা হয়। ক্রিসমাসে কেক খাওয়ার রীতি অবশ্য শুরু হয়য় তারও অনেক পরে। ক্রিসমাসে কেক বানানো ও খাওয়ার ট্রাডিশনটা ইংরেজদের। তবে ক্রিসমাস পালন যখন শুরু হয় তখন তখন কেক ছিল না, ছিল প্লাম পরিজ। সেই সময় ক্রিসমাসের আগের দিন উপবাস করার নিয়ম ছিল। একদিন উপবাসের পরে বড়দিনের ঠিক আগে ইংরেজরা উপবাস ভাঙতেন পরিজ খেয়ে। কারণ বেশ কয়েক ঘন্টা খালি পেটের পর ভারি খাবার পেটে পড়লে শরীর খারাপ হতে পারে কিন্তু পরিজ খেলে সেটা হবে না। সেই রীতি চলে বেশ কিছু কাল। এরপর পরিজের মিশ্রণে শুকনো ফল, মশলা ও মধু মিশিয়ে সেটি ক্রিসমাস পুডিংয়ের আকার নেয়।

Latest Videos

 

 

১৬ শতকে ক্রিসমাসের কেক বা পুডিঙের রেসিপি থেকে ওটমিল বাদ যায়, তার পরিবর্তে মাখন, ময়দা ও ডিম যোগ হয়। এই উপকরণগুলি যোগ হওয়াতে পরবর্তীতে প্লাম কেক তৈরি করা সহজ হয়ে যায়। এরপরে যে সব পরিবারে ওভেন ছিল, তাঁরা ইস্টারের জন্য মারজিপ্যান বা অ্যালমন্ড সুগার পেস্ট ব্যবহার করে ফ্রুট কেক তৈরি করতে শুরু করে। আর বড়দিনের আগে শুকনো ফল ও মশলা ব্যবহার করে কেক। এই কেকগুলিই কালক্রমে ‘ক্রিসমাস কেক’ নামে পরিচিতি পায়। ইংরেজদের ক্রিসমাস কেকের ভেতরে আবার রামে ভেজানো কারেন্টস ও কিশমিশ থাকে।স্কটিশ ক্রিসমাস কেক ‘হুইস্কি ডান্ডি’ নামে পরিচিত। এই কেকের উৎস ডান্ডি এবং তাতে স্কটিশ হুইস্কি থাকে বলে এইরকম নামকরণ। ফ্রান্স ও লেবাননের ট্রাডিশনাল ক্রিসমাস কেকের নাম ‘বুশ ডি নোয়েল’। এতে কোনও ফল থাকে না। ইংল্যান্ডে বড়দিনে ‘ইউল লগ’ বা ‘চকোলেট লগ’ নামে কেক খাওয়ার রীতি। জার্মানে স্টোলেন নামের ফ্রুটকেক জনপ্রিয়। ক্রিসমাসে যা ক্রিস্টোস্টোলেন নামে পরিচিত। ইতালিতে বড়দিনে প্যানেটোন নামে এক বিশেষ ধরনের কেক বানানো হয়। এর স্বাদ একটু টক। সাইপ্রাসের বড়দিনে স্থানীয় মানুষ অতিথিদের সাইপ্রিয়ট কেক খাইয়ে থাকেন। আমেরিকায় কেউ কেউ বড়দিনে ফ্রুট কেক উপহার দিয়ে থাকেন। তবে সগুলোকে ক্রিসমাস কেক বলা হয় না। বরং কানাডাতে ইংরেজিভাষী মানুষদের কাছে এই কেক ক্রিসমাস কেক নামেই পরিচিত। জাপানের ক্রিসমাস কেক ফ্রস্টেড স্পঞ্জি। এতে থাকে স্ট্রবেরি, চকোলেট আর ফল।

Share this article
click me!

Latest Videos

'আমরা কিন্তু চুপ করে বসে থাকব না Yunus' চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারিতে চরম হুঁশিয়ারি Agnimitra-র
রান্না করতে গিয়েই ঘটলো বিপদ! চোখের পলকে ছাই হয়ে গেলো সব, শোকের ছায়া Budge Budge-এ | South 24 Pargana
Suvendu Adhikari Live: সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
কলকাতার রাজপথে ফের প্রতিবাদের মশাল মিছিল! প্রভু চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে চললও বিক্ষোভ মিছিল
'বাংলাদেশের তালিবান ইউনূস হুঁশিয়ার' চরম হুমকি শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari on Bangladesh