
ভিটামিন ‘ডি’ নামটা আমাদের সকলের পরিচিত। ডাক্তারেরা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি৩ ওষুধ দিয়ে থাকে। আবার শুনে থাকবেন রোদে দাঁড়ালে ভিটামিন ডি ঘাটতি মেটে। হাড় মজবুত রাখতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কিংবা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এই ভিটামিনের অবদান অপরিসীম। তবে অনেকেই জানেন না যে ভিটামিন ডি-এর ভিন্ন দুটি প্রকারও আছে, ভিটামিন ডি২ (D2) ও ভিটামিন ডি৩ (D3)।
ভিটামিন ডি ৩ ভিটামিন ডি ২, এদের দুজনের উৎসই আলাদা। ভিটামিন ডি ৩ আমাদের শরীরে তৈরি হয়। এর অভাব হলেই হাড় ভঙ্গুর হতে পারে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর ভিটামিন ডি ২ বাইরের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পায় শরীর।
ভিটামিন ডি২ কী?
ভিটামিন ডি২-কে বলা হয় আর্গোক্যালশিফেরল। বিভিন্ন রকম শৈবাল, ছত্রাক থেকে মূলত এই ভিটামিন পাওয়া যায়। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মিতে গাছপালায় তৈরি হয় এই ভিটামিন। খাবার থেকে এবং সাপ্লিমেন্ট হিসেবেই এই ভিটামিন নিতে হয়। মাশরুম, ছত্রাক, উদ্ভিজ্জ দুধ যেমন আমন্ড মিল্ক, সয়া মিল্ক, নারকেলের দুধ, কমলালেবুর রসে এই ভিটামিন থাকে।
উপকারিতা
* ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়।
* নিরামিষ বা ভিগান খাবারে যারা অভ্যস্ত, তাদের জন্য ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
* যদিও ডি৩-এর মতো শক্তিশালী না হলেও, নিয়মিত গ্রহণে শরীরের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কিছুটা মেটাতে পারে।
ভিটামিন ডি৩ কী?
ভিটামিন ডি৩ বা কোলেক্যালসিফেরল (Cholecalciferol) সরাসরি সূর্যের আলো থেকে আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। সূর্যের UV-B রশ্মি ত্বকের সংস্পর্শে এলে ত্বকে থাকা কোলেস্টেরল থেকে এই ভিটামিন উৎপন্ন হয়। সূর্যালোক ছাড়াও প্রাণীজ খাবার, যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাংসের মেটে। উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে দুধ, ওট্স, ডালিয়ার মতো দানাশস্য, মাশরুমে ভিটামিন ডি৩ থাকে।
উপকারিতা
* শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণে সাহায্য করে। হাড় গঠন মজবুত করে।
* পেশির শক্তি ফেরায়, কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
* স্নায়বিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দুর্বলতা কাটায়।
* মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ক্লান্তি, অবসাদ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন ডি৩ না ডি২ — কোনটি বেশি কার্যকর?
শরীরের জন্য ভিটামিন ডি২ ও ডি৩ দু’টিই জরুরি। তবে শরীরে ভিটামিন ডি৩ -এর কার্যকারিতা বেশি। শরীরের ভিটামিন ডি স্তর বাড়াতে ডি২-এর তুলনায় বেশি উপযোগী ডি৩। তাই অনেক চিকিৎসকই সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ভিটামিন ডি৩ খাওয়ার পরামর্শ দেন।নিরামিষাশীরা বা যারা সম্পূর্ণ ভিগান ডায়েট মেনে চলেন, তাদের জন্য সাধারণত ভিটামিন ডি২ গ্রহণ করাই একমাত্র বিকল্প।
শরীরে ভিটামিন ডি বজায় রাখবেন কীভাবে?
* মাঝে মাঝে রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নিন শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা ঠিক আছে কিনা।
* প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে থাকুন (বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে)।
* প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।