
ছোটরা অনেক কিছুই বোঝে না, তাই তারা জেদ, বায়না, আবদার করবেই। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনার বব্যবহার ও আচরণ নরকটা প্রভাব ফেলে তাদের মন ও মস্তিষ্কে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়।
ছোটদের মন স্পর্শকাতর বেশি, রাগ দুঃখ অভিমানও বেশি হয়। তাই তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে তাদের ভাবনা ও অনুভূতি গুলোকে গুরুত্ব দিতে বলেন মনোবিদরা। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়।
১। ছোটরা আপনার সাথে কথা বলতে এলে, তাদের পাত্তা না দিয়ে ফোন ফোন দেখা বা নিজের কাজ চালিয়ে যাওয়া, অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দেওয়া এই ব্যবহারগুলো ছোটদের খারাপ লাগে। ছোটরা সব সময়ই মনোযোগ পেতে ভালোবাসে। তাই আপনার থেকে মনোযোগ না পেলে তাদের মনে হতেই পারে মা বাবার কাছে হয়তো তারা জরুরী নয়। তাদের মধ্যেও অন্য কারোর কথায় পাত্তা না দেওয়ার স্বভাব দেখা যেতে পারে।
২। ছোটরা অনেক সময় মনযোগ আকর্ষণের জন্য বা কিছু অন্য কিছু পাওয়ার জন্য জেদ, কান্নাকাটি করে। কিন্তু তাতে বিরক্ত হয়ে ‘নাটক কোরো না’ বলা, মা মারপিট করেন, তাদের মনে কষ্ট দেয়, আপনার প্রতি তাদের মানসিকতা বদলে দিতে পারে। ছোটরা ভাবতে পারে তাদের অনুভূতির প্রকাশ বা কিছু চাওয়া বাকি বড়োদের কাছে অতিরিক্ত ও বিরক্তির। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আপনার কাছে কিছু চাইবেই না, নিজে থেকে করার চেষ্টা করবে, তাতে ভুল পদক্ষেপও নিয়ে নিতে পারে।
৩। বড়দের থেকে বেশি ছোটরা সবকিছু মনে রেখে বসে থাকে। আপনি আপনার সন্তানকে কিছু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আর পরে তা পূরণ করছেন না, এতে যিনি প্রতিশ্রুতি ভাঙলেন, তাঁর উপর থেকে বিশ্বাস হারায় বাচ্চারা। তাদের মধ্যেও প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার মনবৃত্তি তৈরী হবে।
৪। ছোটো বলে অনেক কাজেই ব্যর্থ আপনার শিশু। বাকিদের সঙ্গে তুলনায় পেরে ওঠে না, অসুবিধে হয়। অনেক মা বাবারাই আছেন যারা সর্বসমক্ষে বাচ্চাদের ব্যর্থতা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেন। তাদের দুর্বলতা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলে ভবিষ্যতে কখনোই কোনো কাজ করার চেষ্টা করবে না বা উৎসাহ পাবে না। আগ্রহ পাবে না নতুন কিছু শিখতে বা করতে।
৫। ভুল করলে তিরস্কার, ভাল কাজ করলে পুরষ্কার— ছোটরা এগুলো দেখেই শেখে। তাই আপনিও ভুল করলে ‘সরি’ বলুন। ভালো কিছু করলে আপনার সন্তানই এসে আপনাকে ভালোবাসবে। কারণ আপনিও ওই একই ব্যবহার তার সাথে করেছেন, এবং তারা খুশি এতে। এর অন্যথা হলে ছোটদের মনে হতে পারে মা-বাবার কাছে তাদের অনুভূতির কোন মূল্য নেই এবং তারাও নিজের ভুল করলে ক্ষমা চাওয়া, ভুল স্বীকার করা এগুলো করতে চাইবে না।
৬। আপনার বাচ্চা কোনো ডিহ করে এসে আপনাকে সত্যি কথা বললে আপনি হয়তো রেগে যান। এমনটা কখনোই করবেন না। ছোটরা সত্যি কথা বলার পরেও যদি রেগে অতিরিক্ত শাসন পেতে হয়, তবে তারা আর কখনোই সত্যি কথা বলবে না। মিথ্যের আশ্রয় নেবে। ভাববে সত্যিবললে বুঝি বোকাই খেতে হয়।
৭। সন্তানের সঙ্গে কেউ খারাপ কিছু করলে বা খারাপ কিছু বললে বাবা-মা যদি তার প্রতিবাদ না করে চুপ করে থাকেন, তবে মা-বাবার থেকে তারা আস্থা হারায়।
সারাংশ শিশুর কাছে সবচেয়ে আস্থার জায়গায় শিশুর মা ও বাবা। সন্তানকে ভালো মানুষ করে তুলতে, তাদের মন ও মস্তিষ্কের বিকাশে অভিভাবকের ব্যবহার ও আচরণের গুরুত্ব অনেকটা।