বাংলায় নতুন বছরের সূচণা, জানেন কিভাবে সূচণা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের

খাজনা আদায়ের সমস্যা হওয়া নিয়ে বাংলায় প্রথম সন গণনা শুরু। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায়ের শেষ দিন বলে ধরা হত। সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব তুলে রাখা হতো। সম্রাট আকবরই নাকি প্রথম বাংলায় নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির করা ভেবেছিলেন। যা পরে বাস্তবায়িত করা হয়।
 

deblina dey | Published : Apr 11, 2022 12:00 PM IST / Updated: Apr 11 2022, 05:32 PM IST

খাওয়া দাওয়া থেকে বা নানান পোশাক, এক্ষেত্রে মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য। কারণ জানতে চাইছেন পছন্দের বিরিয়ানি থেকে বছরের এই প্রথম দিন উৎযাপন এই দুই এসেছে মুঘলদের হাত ধরেই। সম্প্রীতির উৎসব পয়লা বৈশাখের সূচণাও হয়েছিল মুঘল আমল থেকেই। 'দ্য হিস্টোরিক্যাল ডিকশিনারি অফ বেঙ্গলিস'-এ উল্লেখ রয়েছে খাজনা আদায়ের সমস্যা হওয়া নিয়ে বাংলায় প্রথম সন গণনা শুরু। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায়ের শেষ দিন বলে ধরা হত। সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব তুলে রাখা হতো। সম্রাট আকবরই নাকি প্রথম বাংলায় নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির করা ভেবেছিলেন। যা পরে বাস্তবায়িত করা হয়।

পয়লা বৈশাখের সূচণা-
ঐতিহাসিকদের মতে, পয়লা বা পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত যা বৈশাখী ও অন্য নামেও পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। দেশ বিদেশে থাকা সমস্ত বাঙালি এই বিশেষ দিনটি উৎযাপন করে থাকেন। ২০২২ সালের পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হবে ইংরেজির ১৫ এপ্রিল শুক্রবার।

কোথায় কবে থেকে এই উৎসবের সূচণা হয়- 
ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নববর্ষের উৎসবগুলো হিন্দু বিক্রমী দিনপঞ্জির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে। ভারতের গ্রামীণ বাঙ্গালি সম্প্রদায়ে ভারতের অনেক অঞ্চল ও নেপালের মত বিক্রমাদিত্যকে বাংলা দিনপঞ্জির আবির্ভাবের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অঞ্চলগুলোর মত বাংলায় বঙ্গাব্দের সূচনা ৫৭ খ্রিস্টপূর্বে হয়নি, বরং ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল, যা নির্দেশ করছে বঙ্গাব্দের সূচনা প্রমাণ সময়কে কোনও এক সময় পরিবর্তিত করা হয়েছে। মনে করা হয় শশাঙ্কের শাসন আমলেই এই পরিবর্তনের শুরু হয়।
 

Latest Videos


পয়লা বৈশাখের ইতিহাস-
বাংলা বারো মাস তেরো পার্বন অনেক কাল আগে থেকেই পালিত হতো। বাংলার এই উৎসব সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ, কারণ প্রাযুক্তিক প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত।

বাংলায় পয়লা বৈশাখ উৎযাপন-
পশ্চিমবঙ্গে মহা-সমারোহে সাড়ম্বরে সঙ্গে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিতে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে সমগ্র পশ্চিম বাংলায়। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয়ে সকলে একসূত্রে বাঁধা পড়ে। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। 

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে গ্রামীণ উৎসব-
চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত হয় চড়ক মেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসী বা ভক্তগণ বিভিন্ন শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করে আরাধ্য দেবতার সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা এবং সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকেন।



পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রীতিনীতি-
এছাড়া, বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা খেয়ে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান। পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি প্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা । এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- নতুন বছরে রাহুর প্রভাব, সমস্যায় পড়তে পারে এই ৩ রাশি

আরও পড়ুন- সিংহ রাশির রয়েছে বিচ্ছেদের আশঙ্কা, জেনে নিন বাংলার নতুন বছরে কেমন হতে চলেছে আপনার প্রেম কাহিনি

আরও পড়ুন- বাংলার নতুন বছরে এই রাশিগুলির বৃদ্ধি পাবে অর্থ ও সম্পত্তির পরিমাণ, দেখে নিন সেই তালিকা


পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে মিষ্টি বিতরণ-
গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গনে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। আগেকার সময় পয়লা বৈশাখের দিনে জমির মালিকরা নিজের অঞ্চলে মিষ্টি বিতরণ করতেন। পরে এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। আকবরের সময় এই দিনে  একটি হালখাতা তৈরি করা হত।  গ্রাম বা শহরে পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হত। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও সোনার দোকানে আছে। আধুনিক নববর্ষ উদ্‌যাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পয়লা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

Share this article
click me!

Latest Videos

সাগর দত্তের নার্সিং স্টাফদের আর জি কর করে দেওয়ার হুমকি, প্রতিবাদে MSVP-কে ঘিরে বিক্ষোভ | Agitation
'পূজা হতে দেব না,' হিন্দুদের হুমকি বাংলাদেশের মৌলবাদীদের | Bangladesh News
'ডাক্তারদের জন্যই আমার বাচ্চাটা চলে গেল!' কি ঘটেছিল Sagar Dutta Medical-এ? দেখুন
আর একটু বাকি! ফুঁসছে নদী, রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল, আলিপুরদুয়ারে বন্যা পরিস্থিতি Alipurduar Flood
Daily Horoscope Live: ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সঙ্গীর সঙ্গে কোনও বিবাদ হতে পারে, দেখুন জ্যোতিষ কথা