৩০০ বছরের পুরনো এই বনেদী পুজো, ভট্টাচার্য পরিবারের দেবী দুর্গা নিকষ কালো গাত্রবর্ণ

  • দেবী দুর্গা মানে  রণংদেহী মূর্তি
  • রূপে যেমন তেজ, তেমন সৌন্দর্য
  • গায়ের রঙও উজ্জ্বল বাসন্তী অথবা গোলাপি
  • তবে এই বাড়ির দুর্গা  নিকষ কালো

দেবী দুর্গা মানে  রণংদেহী মূর্তি। তাঁর  রূপে যেমন তেজ, তেমন সৌন্দর্য। গায়ের রঙও উজ্জ্বল বাসন্তী অথবা গোলাপি। কিন্তু এই  দুর্গা  নিকষ কালো।  প্রায় ৩০০ বছরের পারিবারিক দুর্গা পুজো।  বেলেঘাটার ভট্টাচার্য বাড়ির এই পুজো শুরু হয়েছিল অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুর অঞ্চলে। এখন সেই গ্রাম পদ্মার গ্রাসে চলে গিয়েছে। নাটোরের রানি ভবানীর আমলের হরিদেব ভট্টাচার্য প্রথমবার এই পারিবারিক দুর্গা পুজোর আয়োজন করেন। আদতে তিনি ছিলেন নদিয়া জেলার বাসিন্দা। নাটোরের রানিমা তাঁকে জমি দান করেছিলেন। হরিদেব হয়ে যান স্থলবসন্তপুরের জমিদার। 

প্রসঙ্গত, দুর্গা পুজো শুরুর অনেক আগে থেকেই এই ভট্টাচার্য পরিবারে কালী পুজো হয়ে আসছিল। হরিদেব ভট্টাচার্য নিজেও ছিলেন কালী ভক্ত। কিন্তু, তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হন এবং দুর্গা আরাধনা শুরু করেন। মা দুর্গা নাকি স্বপ্নে আদেশ দিয়েছিলেন কালো দুর্গামূর্তির পুজো করতে।   স্বপ্নাদেশ পেলেও পণ্ডিত হরিদেবের এই রূপ অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। অনেকে অনেক বিধান দেন। কোনওটিই তাঁর মনঃপুত হয়নি। বেনারসে গঙ্গার ঘাটে এক গ্রীষ্মের দুপুরে এক সাধুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। কথায়-কথায় সাধু তাঁকে বলেন, দুর্গার এই রূপের ব্যখ্যা রয়েছে চণ্ডীতে। সেখানে তিনি ভদ্রকালি। সেই শুরু। তারপর এতগুলি বছর পেরিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ভট্টাচার্যদের এই অভিনব রূপের দুর্গা পুজো। 

Latest Videos

আরও পড়ুন- দুর্গাপুজো তবে দুর্গামূর্তি নয় প্রচলিত রূপের
সপ্ত সিন্ধু ছাড়া পুজোয় অন্য  জল ব্যবহার করা হয় না। সাত নদীর আসল জল প্রত্যেক বছর সংগ্রহ করে রাখা হয়। সেই জলেই হয় পুজো। ও-পার বাংলার পুজো এ-পার বাংলায় এলেও, নিয়ম নীতিতে কোনও ভাঁটা পড়েনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং পুজোও ছড়িয়ে গিয়েছে পরিবারের মধ্যে। কালীঘাটের পটুয়া পাড়া অঞ্চলে রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারের দয়াময়ী কালী মন্দির, যেখানে নিত্যপুজোর আয়োজন রয়েছে। এক সময় নিজেদের বাড়িতেই আয়োজন করা হতো মাতৃবন্দনার। কিন্তু, এখন তা হয় অ্যাপার্টমেন্টের নীচেই। পুজো হয় তন্ত্রমতে। দেবী দুর্গার গায়ের রং কালো হলেও চার ছেলেমেয়ের গায়ের রঙ স্বাভাবিক। মহিষাসুর সবুজ রঙের। লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক আর গনেশের অবস্থানও আলাদা। দুর্গার  ডানপাশে লক্ষ্মী ও কার্ত্তিক, বামপাশে সরস্বতী এবং গনেশ। 

পাবনা থেকে ১৯৪৭ সালে আসানসোল চলে আসে ভট্টাচার্য পরিবার। সেখানেই পুজো হত। তারপর স্থান পরিবর্তন করে কখনও দুর্গাপুর, কখনও সল্টলেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পূজো হয়েছে। বছর পনেরো ধরে বেলেঘাটার রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের ফ্ল্যাট বাড়ির নীচে ফাঁকা জায়গায় পুজো হচ্ছে। স্বাধীনতা, দেশ ভাগ বহু কাল আগেই হয়েছে। সমাজে বহু পরিবর্তনও হয়েছে। কিন্তু এই পুজোয় কোনওদিনই কোন বাধা পড়েনি।  হরিদেব ভট্টাচার্য কালো দুর্গা আরাধনা শুরু করেছিলেন, সেই ঐতিহ্য পদ্মা পেরিয়ে এখন বইছে গঙ্গা তীরেও। শুধু বেলেঘাটায় নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকাতেও কালো দুর্গার পুজো হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে। এই ভট্টাচার্য পরিবার বাড়ির দুর্গার মুখের রং কালো। প্রায় ৪৩১ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল ঢাকার বিক্রমপুরের বাইনখাঁড়া গ্রামে। এখন আর ওই পুজোয় সেই আড়ম্বর নেই ঠিকই তবে বনেদিয়ানাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। বাইনখাঁড়া গ্রামে পুজো শুরু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই অঘটন। পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কথা অনুযায়ী, তখন দুর্গা মন্দিরের পাশে ছিল মনসা মন্দির। পুরোহিত মনসা পুজো সেরে  দুর্গাপুজো করতে এলে একটি কাকও সে সময় উড়ে এসে বসে। এরপরই কাকটি মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের সলতে নিয়ে উড়ে যায়। কিন্তু কোনওভাবে সেটি দুর্গা মন্দিরের শনের চালে পড়ে যায়। আর তাতেই পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা। 

আরও পড়ুন- পীত বর্ণ না হরিদ্রা রঙে রাঙিয়ে থাকেন দেবী, মা দুর্গার গাত্রবর্ণ নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত

পুজোর মধ্যে এমন ঘটনায় বাড়ির প্রবীণরা পুজো বন্ধ রাখেন। এক রাতে স্বপ্নাদেশ পেলেন পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য। ওই পোড়া রূপেই যেন তিনি পুজো পান। দেবীর আদেশ পাওয়ার পর থেকে পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীরের মূর্তিতেই চলে আসছে মাতৃ আরাধনা। ভট্টাচার্য বাড়িতে গণেশ বাম দিকে থাকেন। আর ডানদিকে থাকেন কার্তিক। কার্তিকের ঠিক পাশেই থাকে নবপত্রিকা। এখন আর পাঁচটা বাড়ির পুজোর মতো আর্থিক কারণে কিছুটা আড়ম্বর কমেছে। সেই ঘাটতি নিষ্ঠা দিয়েই মেটান বর্তমান পরিবারের সদস্যরা। যে আন্তরিকতার টানে শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, দূরের মানুষ এই পুজোয় আসেন। ঢাকায় যে কাঠামোয় পুজো হত, এখনও সেভাবে একচালা মূর্তিতে পুজো হচ্ছে।

Share this article
click me!

Latest Videos

২৬ এর নির্বাচনে কী থাকবেন ফিরহাদ হাকিম? বাতলে দিলেন শমীক ভট্টাচার্য #shorts #shortsfeed #bjp #tmc
হাড়োয়ায় তৃণমূল জিততেই বিজেপি প্রার্থীর জমি তচনচ, ক্ষোভ উগরে যা বললেন Samik Bhattacharya
'ভোট ব্যাঙ্কের জন্যই WAQF Board তৈরি করেছে Congress' বিস্ফোরক PM Modi | PM Modi Speech
Live | India vs Australia : পারথে সাড়ে তিন দিনে টেস্ট জয়, বিদেশের মাটিতে ভারতের সেরা সাফল্য?
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024