
Indian Chamber of Commerce Centenary: ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের শতবর্ষের অনুষ্ঠান। বাণিজ্য জগতের নক্ষত্ররা আমন্ত্রিত। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও আমন্ত্রিত। কিন্তু প্রধান অতিথি যখন কপিল দেব (Kapil Dev) ও মিতালি রাজ (Mithali Raj), তখন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হবেই। কপিল অবশ্য ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। নিজের সময়ের কথা বলতেই চাইছিলেন না। একজন প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি ১৯৮৩ বিশ্বকাপে (1983 Cricket World Cup) জিম্বাবোয়ের (India vs Zimbabwe) বিরুদ্ধে ১৭৫ রানের যে মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন, সেটার রেকর্ডিং নেই। আমরা তো দেখতেই পেলাম না। এটা আপনার কেমন লাগে?’ কপিল জবাব দিলেন, ‘আমি খুব খুশি যে রেকর্ডিং নেই। ওই ইনিংস দেখেননি বলেই আমার প্রশংসা করছেন।’
খেলার মতোই ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতৃত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীবনদর্শনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে কপিল বললেন, 'দলের চেয়ে কোনও খেলোয়াড়ের ইগো বড় হতে পারে না। অধিনায়কের কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। অধিনায়ককে নিজের কাছে সৎ থাকতে হবে। যে খেলোয়াড় ভালো খেলছে তার প্রশংসা করতে হবে। কিন্তু যে ভালো খেলতে পারছে না, তার কাছে গিয়ে বলতে হবে, তুমি ভালো খেলোয়াড়। তুমি ভালো খেলতে পারো। এই আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে। ড্রেসিংরুমে কাউকে গালিগালাজ করলেও বাইরে সে কথা বলা যাবে না। সবাইকে সম্মান জানাতে হবে। আপনি কোনও সংস্থার চেয়ারম্যান হলেন। কিন্তু যিনি ৬০ বছর ধরে এই সংস্থার হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁকেও সম্মান জানাতে হবে। তরুণ প্রঝন্মের কথা শুনতে হবে। ওদের কাছ থেকে অনেককিছু শেখার আছে। আমি মুহূর্তে বাঁচি। কালকের কথা ভেবে এখন থেকে মাথা খারাপ করি না। এই মুহূর্ত উপভোগ করতে না পারলে কালকের দিনও উপভোগ করতে পারব না। কলকাতায় এসে অনেক প্রাক্তন খেলোয়াড়ের বাড়িতে দেখি সব জায়গায় তাঁর ছবি। আমার বাড়িতে আমার খেলার কোনও ছবি নেই। আমি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া পছন্দ করি। চার দশক আগে বিশ্বকাপ জয়ের কথা আমার মনে নেই। আমি নিজের বাড়িতে নিজের ছবি কেন রাখব? অন্যদের ছবি রাখব।'
ক্রিকেট প্রসঙ্গে কপিল বলেন, 'জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে আমাদের যখন পরপর উইকেট পড়ে যাচ্ছিল, তখন মাঠে কী হচ্ছিল আমি দেখিনি। ক্রিজে গিয়ে যশপালকে (শর্মা) (Yashpal Sharma) জিজ্ঞাসা করলাম, কী হচ্ছে? ও বলল, আসছে আর যাচ্ছে। তখন আমি মাথা তুলে ঈশ্বরকে বললাম, আজ বাঁচিয়ে দাও। আমি সবসময় এরকম করতাম। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করতেন, ব্যাটিং না বোলিং ভালো লাগে? তাঁকে আমি বলতাম, ফিল্ডিং সবচেয়ে ভালো লাগে। আমি সবসময় মাঠে থাকা, ক্রিকেট খেলা উপভোগ করেছি। যে ফর্ম্যাটের ক্রিকেটই হোক না কেন, আমার কাছে সমান।'
কপিল আরও বলেছেন, 'ক্রিকেটে যে ব্যাটারের রক্ষণ যত ভালো, তিনি তত ভালো খেলতে পারেন। সুনীল গাভাসকর (Sunil Gavaskar) যদি টি-২০ ফর্ম্যাটে খেলতেন, তিনি সেরা ব্যাটার হতেন। কারণ, যাঁর রক্ষণ ভালো তিনি শট খেলার জন্য বেশি সময় পান। আমি রক্ষণাত্মক শট খেলতেই পারতাম না। একবার পাকিস্তান সফরে (India Tour of Pakistan) টেস্ট ম্যাচে আমাকে নৈশপ্রহরী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। আমি ১২ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম অধিনায়ক খুব খুশি হবেন। কিন্তু খেলা শেষে যখন ড্রেসিংরুমে গেলাম, তখন অধিনায়ক বিষাণ সিং বেদী (Bishan Singh Bedi) আমাকে বললেন, এই হনুমান এদিকে আয়। তুই নৈশপ্রহরী কাকে বলে জানিস? আমি চুপ করে আছি। উনি তারপর বললেন, তোর কাজ ছিল ক্রিজে টিকে থাকা, রান করা নয়। তোকে আর কোনওদিন নৈশপ্রহরী হিসেবে পাঠানো হবে না। আমি সে কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম।'
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।