হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের প্রতি প্রেম কিছুতেই যেন কমছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে তিনি নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিচ্ছেন বলে খোদ জানালেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট । ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে পরিচিত এই ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন ট্রাম্প। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহপোষণ করে ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। সোমবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরে তিনি প্রতিদিন একটি করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণ করছেন।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ মূলত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। করোনাভাইরাসের এখনও পর্যন্ত কোনও স্বীকৃত ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় পরীক্ষামূলক ভাবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনার চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই এটিকে ‘গেমচেঞ্জার’ আখ্যা দিয়েছেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এর প্রধান উৎপাদক ভারতকে উপর চাপ তৈরি করে নিজের দেশে এই ওষুধ আমদানিও করেছেন তিনি।
যদিও গত ২৪ এপ্রিল বিবৃতি দিয়ে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ওষুধ দুটি ব্যবহারের কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরে করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধ দুইটি প্রয়োগ না করার পরামর্শ দেওয়া হয় এফডিএ-র তরফে।
মিলে গিয়েছে কার্যকর ওষুধ, করোনায় দিশেহারা পৃথিবীকে আশ্বস্ত করছে বাংলাদেশ
করোনা ফের ঘটিয়ে দিল মিরাকল, কাঠমান্ডুতে বসেই এবার দেখা গেল এভারেস্টের চূড়া
কোথা থেকে কীভাবে ছড়ালো করোনা, চিনের উপর চাপ বাড়িয়ে ৬১টি দেশের সঙ্গে এবার তদন্ত চাইল ভারতও
এদিকে হোয়াইট হাউসেও থাবা বসিয়েছে করোনা। এমনকি খোদ ট্রাম্পের পরিচারক আক্রান্ত হয়েছেন মারণ ভাইরাসে। আক্রান্ত ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিবও। তারপর থেকেই প্রতিদিন ৭৩ বছর বয়সী ট্রাম্পের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরমাঝেই সোমবার করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন তিনি। সেই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার নিয়ে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকদের পরামর্শ জানতে চেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা তাকে এটি গ্রহণ করতে বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে তিনি অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের সিঙ্গেল ডোজ নিচ্ছেন। এছাড়া হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন-এর পাশাপাশি জিঙ্কও গ্রহণ করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘আর এখন পর্যন্ত আমি আপনাদের বলতে পারি, আমি ভালোই আছি।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এফডিএ-র নিষেধ সত্ত্বেও তিনি ওষুধটি সেবন শুরু করেছিলেন কেননা দেশের বহু সম্মুখযোদ্ধারা এটি গ্রহণে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের বহু করোনাযোদ্ধ যাঁরা ফ্রন্ট লাইনে রয়েছেন, এটি গ্রহণ করছেন। অনেকেই আমার কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত সেবন করছেন।’
তবে ট্রাম্প হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন স্তুতি করলেও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ড.বব লাহিতা এক সাক্ষাৎকারে মানুষকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এর কোনও প্রভাব দেখিনি আর আমরা একাধিক রোগীকে এটি দিয়ে চিকিৎসা করে দেখেছি।’