রাত পোহালেই বাংলার ভোটের ফল ঘোষণা
আরেকদিকে বেড়েই চলেছে করোনার প্রকোপ
এর মধ্যে গণনা পরিচালনায় বিস্তৃত ব্যবস্থা নিল নির্বাচন কমিশন
প্রার্থী থেকে এজেন্ট, ভোটকর্মী সবাইকে মানতেই হবে সেইসব বিধি
মিটেছে আট দফার বিস্তৃত ভোটদান পর্ব। এখন ফল ঘোষণার পালা। রাত পোহালেই ভোট গণনা। তবে ভোটের ফল নিয়ে আগ্রহ, উন্মাদনা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে করোনা মমহামারির প্রকোপ। এরই মধ্যে, সুষ্ঠুভাবে গণনা পর্ব পরিচালনার জন্য বিস্তৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গণনার সময়, কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার সমসত প্রোটোকলগুলিকে কঠোরভাবে মেনে চলা হবে।
রাজ্যের মোট ২৩ টি জেলায় মোট ১০৮ টি গণনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সর্বাধিক গণনা কেন্দ্র হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়, ১৫টি। আর কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার এবং ঝাড়গ্রাম - এই তিন ছোট জেলায় রয়েছে একটি করে গণনাকেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলিতেই আপাতত ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে, সিল করা অবস্থায় রয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এবং ভোট যাচাই-এর ভিভিপ্যাট ইউনিটগুলি। গণনা কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ২৫৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেইসঙ্গে ২৯২ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
গণনাকেন্দ্র পাহাড়ার দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী
রবিবার, সকাল আটটায় শুরু গণনা পর্ব। ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপের মধ্যে ভোট পরিচালনায় ব্যর্থতা নিয়ে বারেবারে আঙুল উঠেছে নির্বাচন কমিশনের দিকে। গণনা পর্বে যাতে, তেমনটা না হয়, তার জন্য, গণনা চলাকালীন কোভিড নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলাটা নিশ্চিত করতে তৎপর কমিশন। তাই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের গণনার মতোই পুরো ফল সামনে আসতে আসতে অন্ধকার নেমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রক্রিয়া শুরুর ঠিক আগে, প্রতিটি কেন্দ্র এবং সমস্ত ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রকে স্যানিটাইজ করা হবে। শুধু ওই একবারই নয়, গণনা চলাকালীন প্রতিটি কেন্দ্রকে কমপক্ষে ১৫ বার স্যানিটাইজ করা হবে। এর ফলে গণনা প্রক্রিয়া যাতে খুব বেশি বিলম্বিত না হয়, তার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। এছাড়া গণনা প্রক্রিয়ায় যেসব ভোটকর্মীরা অংশ নেবেন, তাঁদের সকলের জন্য মাস্ক, ফেস শিল্ড এবং স্যানিটাইজার-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শারীরিক দূরত্বের বিধি মেনে একটি গণনা হলে ১৪-এর পরিবর্তে সর্বাধিক ৭টি টেবিল পাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি কোথাও স্থান সংকুলান হয়, সেই ক্ষেত্রে আরও বেশি টেবিল পাতা হবে।
শিলিগুড়ি কলেজের গণনাকেন্দ্রে চলছে এক কাউন্টিং এজেন্টের করোনা পরীক্ষা
বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাঁদের ভাগ্য গণনা হবে, সেইসব প্রার্থী এবং তাঁদের এজেন্টদেরও। কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে, গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে প্রার্থী এবং এজেন্টদের হয় আরটিপিসিআর কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দাখিল করতে হবে, নয়তো টিকার দুটি ডোজই নেওয়ার শংসাপত্র দেখাতে হবে। ইতিমধ্যেই কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের প্রার্থীদের ও এজেন্টদের নেতিবাচক পরীক্ষার রিপোর্ট বা টিকাদান শংসাপত্রের সঙ্গে নামের একটি করে তালিকা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা না মেটাতে পারলে, প্রার্থী বা তাঁর এজেন্ট হয়েও গণনা কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। সেইসঙ্গে গণনা কেন্দ্রের বাইরেও যাতে ভিড় না জমে, তার জন্য প্রত্যেকটি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই বিধি যারা ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন - 'লকডাউন, ভারত শিখুক চিনকে দেখে', করোনা মোকাবিলায় ৩ দফা পদক্ষেপের নিদান ডা. ফাউচির
আরও পড়ুন - লকডাউন আরও বাড়ুক চাইছে দিল্লি, তবে 'অন্য মডেলে' - বাংলা কি করবে অনুসরণ, দেখুন
আরও পড়ুন - মস্কো থেকে আজই আসছে দেড় কোটি ডোজ স্পুটনিক ভি, করোনা-যুদ্ধে ভারতের তৃতীয় অস্ত্র
রাজ্যে ভোট নিয়ে মানুষের উত্তেজনায় জল ঢেলেছে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে একদিনে কোভিড-১৯-এ ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মহামারির শুরু থেকে একক দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্রেও রেকর্ড ভাঙা বৃদ্ধি ঘটেছে। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যের ১৭,৪১১ জন মানুষ নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে বিজয় সমাবেশ যদি হয়ও, তবে তা নির্বাচন কমিশনের জারি করা কোভিড প্রোটোকল মেনেই করা হবে। ইতিমধ্যেই কমিশন রাজ্যে রোডশো এবং গাড়ি বা বাইক মিছিল নিষিদ্ধ করেছে।