লকডাউন আরও বাড়ুক চাইছে দিল্লি, তবে 'অন্য মডেলে' - বাংলা কি করবে অনুসরণ, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
হয় লকডাউন, নয়তো মৃত্যু
বস্তুত, ভারতের জাতীয় রাজধানীতে বর্তমানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত 'জরুরী অবস্থা' দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯'এর দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রায় বিধ্বস্ত। প্রতিদিনই ২৫,০০০-এরও বেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছে। আইসিইউ শয্যার সংখ্যা শূন্যয় ঠেকেছে। অক্সিজেন, কোভিড-এর বিভিন্ন ওষুধের চরম সংকট। করোনা পরীক্ষার কিটেরও অভাব রয়েছে। শ্মশান-কবরস্থানের বাইরে মৃতদেহের লম্বা লাইন। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে যেখানে করোনা ইতিবাচকতার হার ছিল ১০ শতাংশ, চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩ শতাংশ। এই অবস্থায় অধিকাংশ দিল্লিবাসী মনে করছেন, বর্তমানে তাদের শহরের অবস্থাটা হল, হয় লকডাউন, নয়তো মৃত্যু। তাই দৈনিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যাটা ১০,০০০-এর নিচে এবং পজিটিভিটির হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে না আসা পর্যন্ত লকডাউনই চাইছেন তাঁরা।
৭৫ শতাংশই চাইছেন লকডাউন
'লোকাল সাইকেলস' সংস্থার সমীক্ষায়, দিল্লির ১১ টি জেলার ৩২,০০০ এরও বেশি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশই চেয়েছেন, লকডাউন বা কারফিউ-এর মেয়াদ অন্তত আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হোক। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৮% ছিলেন পুরুষ এবং ৩২% মহিলা। এরমধ্যে ৩১% চাইছেন লকডাউনের মেয়াদ ৩ সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হোক। ২৯% চেয়েছেন আরও ২ সপ্তাহের লকডাউন এবং ১৫% বলেছেন ১ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা। এই সমীক্ষা অনুযায়ী দিল্লির মাত্র ৫% মানুষ লকডাউন বা কারফিউ-এর সমাপ্তি এবং সমস্ত কোভিড বিধিনিষেধের অপসারণ চেয়েছেন। আর ১৩% মানুষ বলেছেন, লকডাউন তুলে নাইট কারফিউ বা রাত্রীকালীন কারফিউ চালু করা হোক।
লকডাউনের বিশেষ মডেল
তবে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, জীবন-জীবিকার ও ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। অর্থনৈতিক এই ক্ষতি হ্রাস করতে লকডাউনের এক বিশেষ মডেল চেয়েছেন দিল্লিবাসী। সকলেই সাফ জানিয়েছেন লকডাউনের মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের হোম ডেলিভারির অনুমতি দিতে হবে। খুচরা ব্যবসায়ী বা স্থানীয় দোকান এবং ওয়েবসাইট বা মোবইল অ্যাপগুলির মাধ্যমে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। এই প্রয়োজনী পণ্যের মধ্যে সংসার চালানোর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-আটা-সবজির পাশাপাশি শিশুদের অনলাইনে ক্লাস বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর কাজে লাগা বিভিন্ন পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। ৮৪% বাসিন্দা লকডাউন চলাকালীন এইসব পণ্যগুলির হোম ডেলিভারির পক্ষে মত দিয়েছেন। ৪৩% চেয়েছেন শুধু মুদি দোকানের জিনিস ও ওষুধের মতো পণ্যের হোম ডেলিভারি, আর ৪১% সমস্ত সামগ্রীর হোম ডেলিভারি চেয়েছেন। ১৩% মানুষ অবশ্য চেয়েছেন দোকানে গিয়েই কেনাকাটা করতে। তাঁদের দাবি দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে খুচরা দোকানগুলি খোলা হোক।
চাল-ডাল-ওষুধ শুধু নয়
প্রয়োজনীয় পন্যের তালিকায় মুদি দোকানের জিনিস ও ওষুধের বাইরে দিল্লিবাসী জানিয়েছেন, শিশুদের ঘরে ব্যস্ত রাখার জন্য খেলনা, বই, স্টেশনারি আইটেম, অনলাইন ক্লাসের সরঞ্জাম, পোশাক, জুতো, ইত্যাদি, এয়ার কন্ডিশনার, কুলার, ফ্যান, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, আসবাবের মতো ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কথা। সমীক্ষায় অংশগ্্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ অনলাইন ক্লাসের পণ্য চেয়েছেন, ৪০% বলেছেন শিশুদের পোশাকের কথা, ৩১% বলেছেন শিশুদের ঘরে ব্যস্ত রাখার জিনিসের প্রয়োজনের কথা। একইভাবে, দিল্লির বাসিন্দাদের ৪৮% বলেছেন ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তার কথা, ৪৫% বলেছেন এয়ার কন্ডিশনার, কুলার, পাখা, এবং ২৭% বলেছেন ঘরের বিভিন্ন সরঞ্জাম, বিছানাপত্র এবং গৃহসজ্জার পণ্যের প্রয়োজনের কথা।
বাংলা কি অনুসরণ করবে দিল্লিকে
কাজেই, দিল্লির বেশিরভাগ বাসিন্দাই ৩ মে পরও কমপক্ষে ১-২ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে। তবে তাঁরা এমন লকডাউন চাইছেন যেখানে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির হোম ডেলিভারি চালু থাকে এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম একেবারে স্তব্ধ না হয়ে যায়। এর জন্য সমস্ত মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং খুচরা ব্যবসার দোকানগুলি শুধুমাত্র হোম ডেলিভারির জন্য খোলার অনুমতি দেওয়া হোক, এমনটাই চাইছেন তাঁরা। এতে করে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনেও মানুষের জীবন-জীবিকা স্তব্ধ হয়ে যাবে না, স্বল্প ও মাঝারি ব্যবসাগুলি বন্ধের মুখে পড়বে না এবং ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেকটাই হ্রাস পাবে। পশ্চিমবঙ্গেও এখন কোভিড পরিস্থিতি দ্রুত দিল্লির পথে এগোচ্ছে। দিল্লি মডেলের লকডাউন এই রাজ্য গ্রহণ করে কিনা, সেটাই দেখার।