সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর গোয়াতে পা রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানে সংগঠনকে পোক্ত করার গুরুদায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল সুপ্রিয়র কাঁধে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election) বিপুল ভোট পেয়ে তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় (Third Time in Power) এসেছে তৃণমূল (TMC)। বাংলায় জয়ের পর এবার তাদের লক্ষ্য অসম (Assam), ত্রিপুরা (Tripura) ও গোয়া (Goa)। এই মুহূর্তে গোয়ায় নিজেদের সংগঠন সাজানোর দিকে মন দিয়েছে তৃণমূল। দেশের সবথেকে ছোট অঙ্গরাজ্য হলেও এর গুরুত্ব এখন খুবই বেশি। সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর সেখানে পা রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর সেখানে সংগঠনকে পোক্ত করার গুরুদায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে সদ্য বিজেপি (BJP) ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) কাঁধে। তার জন্য ইতিমধ্যেই গোয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। আর এই বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "গোয়া যেন টালিগঞ্জ (Tollygunge) না হয়ে যায়।"
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই তিক্ততা বাড়তে শুরু করেছিল। জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা থেকেও বাদ পড়েন তিনি। তারপর সোশ্যাল মিডিয়াতেই একের পর এক বেসুরো মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। অবশেষে ১৮ সেপ্টেম্বর আচমকা বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ঘাসফুলে যোগ দিয়েই গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বাবুল বলেছিলেন, "আমি রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকার লোক নই। যে দল খেলাবে সেই দলেই খেলব। দিদি ও অভিষেক আমাকে বড় সুযোগ দিয়েছেন। বিজেপিতে কাজ করতে পারছিলাম না। আমি খুশি, তৃণমূল আমার উপর ভরসা করেছে।" আর যোগ দেওয়ার এক মাসের মধ্যে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার হল বাবুলকে।
আরও পড়ুন- ১৫ নভেম্বর থেকে রাজ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ, মুখ্যসচিবকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
গোয়ায় সংগঠন মজবুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাবুলকে। তার জন্য ইতিমধ্যেই গোয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। গোয়ায় পাড়ি দেওয়ার আগে বাবুল বলেন, "আমি কাজ করতে চেয়েছিলাম, তাই দিদি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।" আর এই বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, "আগে তো গোয়ায় তৃণমূল কাজ শুরু করুক। তারপরে কি হবে দেখা যাবে।" বাবুলকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ভালো লোককেই দায়িত্ব দিয়েছে। টালিগঞ্জের মত অবস্থা যেন গোয়ায় না হয়।"
আরও পড়ুন- ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, চিকিৎসা চলছে দিল্লিতে
উল্লেখ্য, বিজেপির টিকিটে আসানসোল থেকে পরপর দু'বার সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল। এরপর বিজেপির টিকিটে বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জ থেকে লড়াই করেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ ছিল অরূপ বিশ্বাস। নির্বাচনী প্রচারে দুই বিশ্বাস ভাইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রে জেতার বিষয়ও বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু, ফল প্রকাশের পরই হতাশ হন। তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই একটু একটু করে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল। আর আজ কটাক্ষের মাধ্যমে তৃণমূলকে সেই বিষয়টিই মনে করিয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন- রাজ্যে হাজার ছুঁতে চলেছে করোনার দৈনিক সংক্রমণ, পুজোর পর কলকাতা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ
তবে বাবুলের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্ক যে একেবারেই ভালো নয় তা বোঝা গিয়েছিল অনেক আগেই। দলে থাকাকালীন অবশ্য দিলীপের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খোলেননি। কিন্তু, দল ছাড়ার পরই একের পর এক আক্রমণ শানান বাবুল। তাঁর দলত্যাগের পর দিলীপ বলেছিলেন, “উনি তারকা। দলের হননি কখনও। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আবেগ দিয়ে রাজনীতি করেন।” অবশ্য সে যাই হোক না কেন তৃণমূল সুপ্রিমোর দেওয়ার এই দায়িত্ব এখন বাবুল ঠিক করে পালন করতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার।