হাওড়ার খালনাকে বলে লক্ষ্মীগ্রাম। বাংলার এই গ্রামে হয় ২৫০ টিরও বেশি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার
খালনার লক্ষ্মীপুজো বারোয়ারি। দুর্গাপুজোর মতই বারোয়ারি। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই পুজো চলে তিন দিন ধরে। বলা হয় প্রায় তিনশো বছর ধরে নাকি এই গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঐতিহ্যমণ্ডিত লক্ষ্মীপুজোর চল রয়েছে। আর দেড়শো বছর ধরে সম্মিলিত পুজো চলে আসছে। কীভাবে শুরু হল এই লক্ষ্মীপুজো? জেনে নেব সেই ইতিহাস।
কলকাতার খুব কাছেই এক বর্ধিষ্ণু গ্রামে ২৫০টিরও বেশি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয়। আর সেটা কলকাতার দুর্গাপুজোকেও হার মানাতে পারে জাঁকজমকে। হাওড়ার জয়পুরের খালনা গ্রাম এই লক্ষ্মীপুজোর জাঁকজমকের কারণে আজ ‘লক্ষ্মীগ্রাম’ নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে।
খালনার সবচেয়ে প্রাচীন লক্ষ্মীপুজো হয় ক্ষুদিরামতলা সর্বজনীনে। শুধুমাত্র খালনা গ্রামেই দেড়শোর বেশি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয়। যারমধ্যে ৩৫-৪০টি পুজো হয় বড় বাজেটের পুজো।ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় প্রায় ১৫০ বছর আগে এই গ্রামে ব্যাপকভাবে সম্মিলিত উদ্যোগে লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে বংশ পরম্পরায় যা হয়ে আসছে। মা লক্ষ্মীর এত ভক্ত দুই বাংলার আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই গ্রামের চারুময়ী লক্ষ্মীতলা, কৃষ্ণরায়তলা ক্ষুদিরামতলার পুজো সুপ্রাচীন। ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজোগুলি দেখতে ভিড় জমান বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো ছাড়াও কালীমাতা তরুণ সঙ্ঘ, আনন্দময়ী তরুণ সঙ্ঘ, মিতালি সঙ্ঘ, আমরা সবাই, রাজবংশী পাড়া সর্বজনীন, খালনা হরিসভা, এ টু জেড ক্লাবের মত পুজোগুলিও বেশ পুরনো।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, হাওড়ার সবথেকে প্রাচীন গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম এই খালনা গ্রাম। এই গ্রামের বেশিরিভাগ মানুষই নানাবিধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। ফলে তাঁরা ব্যবসার কারণে দুর্গাপুজোর সময় আনন্দ করতে পারতেন না। যার জেরে তারা দুর্গাপুজোর ঠিক পরেই আয়োজন করতেন লক্ষ্মীপুজোর।
গ্রামের কিছু প্রবীনের কথায়, "খালনা গ্রামটি ভৌগোলিকভাবে একটু নীচু এলাকা হওয়ার কারণে প্রায় বছরেই দুর্গাপুজোর সময় ভারী বৃষ্টি বা নদীতে জোয়ার এলে পুরো গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়তো। আর তার উপর খালনা গ্রামে এমনিতেই প্রচুর খাল-বিল, নদী-নালা রয়েছে। তাই বন্যার কারণে মানুষ দুর্গাপুজো করতে পারত না। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঠিক করেন দুর্গাপুজো না করে গ্রামে লক্ষ্মীপুজো করা হবে। দেড়শো বছর আগে প্রথম পুজো করার কথা ভাবা হয়। প্রথমদিকে এই লক্ষ্মীপুজো এলাহিভাবে আযোজন করলে পরে সাধারণভাবে আয়োজন করলেও, পরবর্তীকালে সকলে একত্রে মিলে চাঁদা তুলে বারোয়ারি লক্ষ্মীপূজার রীতি শুরু হয়।"
চন্দননগরের যেমন জগদ্ধাত্রী পুজো, কলকাতার যেমন দুর্গাপুজো, তেমনই হাওড়ার খালনা গ্রামের লক্ষ্মীপুজোর প্রসিদ্ধি। বিজয়া দশমী শেষ হলেই এই গ্রামে শুরু হয়ে যায় লক্ষ্মীপুজোর তোড়জোড়।
আরও পড়ুন-
উভয় বঙ্গেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর, তাহলে কি দুর্গাপুজোর মতোই মাটি হবে লক্ষ্মীপুজোর আমেজ?
মা-মেয়ের সঙ্গে ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই কি হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডলকে খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টা বান্ধবীর বাবার?
লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেগে থাকার বার্তা? জানুন 'কোজাগরী'-র প্রকৃত অর্থ