
এবার সিবিআই তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ কলকাতা হাইকোর্টের। খেজুরিতে দুই বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আবেদন খারিজ করে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সোমবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান যে, তিনি আর সিবিআই-এর উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। 'সিবিআই এখন গ্যালারি শো করছে' বলে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন বিচারপতি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বদলে এই মামলায় রাজ্য পুলিশের উপরেই তিনি আস্থা রাখতে চান বলে জানিয়ে দেন। ২৬ অগাস্ট মঙ্গলবার এই মামলায় নির্দেশ দেবেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
সূত্রের খবর, খেজুরির ২ বিজেপি কর্মী সুজিত দাস ও সুধীর পাইকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে আগেই জমা পড়েছিল ময়নাতদন্তের দ্বিতীয় রিপোর্ট। ময়নাতদন্তের প্রথম রিপোর্টে উল্লেখ ছিল যে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ বিজেপি কর্মীর। কিন্তু দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দেহে আঘাতের কথা। সেই রিপোর্ট দেখে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরের দিন অর্থাৎ গত ১২ জুলাই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় বছর তেইশের সুজিত দাস ও পঞ্চাশোর্ধ্ব সুধীরচন্দ্র পাইকের। অনুষ্ঠান স্থলের অনতিদুর থেকেই উদ্ধার হয় দু'জনের দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ দাবি করে, অনুষ্ঠান চলাকালীন অসাবধানতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু'জনের। যদিও, মৃতের পরিবার খুনের অভিযোগ তোলে। নিহত সুধীরচন্দ্র পাইকের ছেলে নন্দনকুমার পাইকও তাঁর বাবাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে দুই বিজেপি কর্মীর৷ যদিও পরিবার তা মানতে নারাজ। তারা আবার ময়নাতদন্তের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকের বক্তব্য রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় দুই পরিবার। পরিবারের আর্জি মেনে ডিভিশন বেঞ্চ দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি জানানো হয়, ওই মামলাটি শুনবে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চই।
দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশের প্রেক্ষিতে এসএসকেএম-এর ৩ জন চিকিৎসককে নিয়ে বোর্ডও গঠন করে দেওয়া হয়। গত ১৯ তারিখ হাইকোর্টে দুই বিজেপি কর্মীর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা পড়ে হাইকোর্টে৷ এসএসকেএম হাসপাতালের সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দুই বিজেপি কর্মীর দেহে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়৷ দুই সরকারি হাসপাতালের দুই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন ফারাকে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ৷ এরপরই মামলাকারীদের আইনজীবী সিবিআই তদন্তের আবেদন জানান হাইকোর্টে।
সোমবার এই মামলার শুনানিতে সিবিআই তদন্তের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি পর্যবেক্ষণে জানান, সিট গঠন করে এই মামলার তদন্ত করবে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।ডিআইজি সিআইডির নেতৃত্বে গঠিত হবে সিট। তদন্তকারী দলে থাকবেন হোমিসাইড শাখার অফিসারও। এক মাসের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। যদিও এদিন কোনও নির্দেশ দেননি তিনি। মঙ্গলবার এই মামলায় নির্দেশ দেবেন বিচারপতি ঘোষ। আইনজীবীদের একাংশের মতে, বিচারপতির পর্যবেক্ষণ থেকেই স্পষ্ট, এই মামলার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাতেই থাকবে।