
শুধু কোভিডের জন্য কাজ হারায়নি বাংলার পোশাক তৈরির কারিগরেরা (The Artisans of making Garments )। ব্র্যান্ডের দাপটে উৎসবের ( Durga Puja ) মাঝে দিশেহারা তাঁরা সবাই। দর্জির দোকানে এখন আর দেখা যায় না অর্ডার ক্লোজড লেখা বোর্ড , বরং বাধ্য হয়ে প্রাণের পেশার ছাড়ার পথে পা বাড়াচ্ছেন (Murshidabad) মুর্শিদাবাদের দক্ষ কারিগরেরা।
এক ধাক্কায় বদলে গেছে চেনা ছবি।ব্র্যান্ডেড পোশাকের দাপটে এখন বেজার মুখে গ্রাম বাংলার ছাপোষা পোশাক তৈরির কারিগররা।অগত্যা আজ বাজার পড়েছে দর্জিদেরও।তাই পুজোর একেবারে শেষ মুহূর্তে প্রায় অলস দুপুরে দিন কাটাতে হচ্ছে মুর্শিদাবাদের ট্রেলার মাষ্টারদের।কার্যত সেলাই মেশিনের আওয়াজ ভুলে মাছি হাঁকিয়েই দিন যাপন হচ্ছে তাদের। কয়েক বছর আগেও দেখা যেত মহালয়ার পর থেকে দর্জির দোকানে ঝুলিয়ে দেওয়া হত অর্ডার ক্লোজড লেখা বোর্ড । নতুন পোশাক পেতে দর্জির কাছে পুজার মুখে কত রকম কাকুতি মিনতি করতে দেখা যেত প্রতিবেশীদের , সেই চেনা ছবি রেডিমেডের ধাক্কাই কেমন যেন উধাও হয়ে গেলো।আর তাতেই মাথাই হাত জেলার দর্জি কুলের।পূজা মানেই নতুন জামা কাপড়।মুলত শার্ট, প্যান্ট অর্থাৎ বস্ত্র প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পছন্দের জামা প্যান্টের কাপড়ের কিনে দর্জির দোকানে যাওয়া । নানান কিসিমের শার্ট প্যান্ট বানাতে দর্জিকে কত রকমের ফিরিস্তি দেওয়া হত তার কোনও ইয়াত্তা ছিল না ।
আরও পড়ুন, Durga Puja2021: ছৌ শিল্পের আদলে ৩ সেমি অভিনব দুর্গা বানিয়ে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার শিল্পী
তারপর দর্জির দেওয় নির্দিষ্ট দিনে ফের দর্জির দোকানে উপস্থিত হয়ে দিতে হত ট্রায়াল । সেই ট্রায়ালে পোশাক পছন্দের হলে, দর্জি তবেই দিতেন ফিনিসিং সেলাই । ফলে পূজার হোক কিনবা সাধারণ জামা প্যান্ট, দর্জির কাছে গিয়ে বানানো ছিল রীতিমতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া।মানুষ তার ব্যাস্ত সময় সূচিতে সেই ঝক্কি নিতে নারাজ।তাই সময় বাঁচাতে হাল ফ্যাসানের জামাকাপড় এক লহমায় পছন্দ করে নিতে এখন ভরসা করছেন অন লাইন শপিং কিংবা আকর্ষণীয় নানান ছাড়ের টানে ব্র্যান্ডেড কোম্পানির শপিং মলই।তাই আধুনিকতার হাত ছানিতেও খানিকটা পিছিয়ে গেছে সাবেক কালের দর্জিরা।আর তাতেই ঘোর পুজার বাজারেও কেমন যেন কপালে হাত দর্জিদের ।এব্যাপারে লালগোলার ট্রেলার মাস্টার সত্যজিৎ দাস,ভগবানগোলার পল্টু শেখ , জিয়াগঞ্জের বাবলু শেখ রা বলছেন ,শুধু পুজার মরশুমে নয় ,সারা বছর আমাদের কদর ছিল । সেইদিন এখন অতীত । ঈদ থেকে পুজাতে সারারাত কাজ করতে হত,এমন কি দশমীর দিনেও ডেলিভারি দিয়েছি । কারিগরদের উৎসবের দিন গুলিতে বাড়তি মজুরি দিতে হত । রেডিমেড পোশাকের রমরমাতে আমরা বিপন্ন । নতুন ভাবে এই পেশাতে আর কেও আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না । ফলে এখনও যারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা জীবিকার সন্ধানে অন্য দিকে ঝুকছেন ।
অতীতের স্মৃতি ঘাটতে গিয়ে পল্টু শেখ বলেন , জামাই ষষ্টি থেকে নতুন জামা কাপড় বানানোর হিড়িক পড়ত আর রথ শেষ হলেই শুরু হত ঠ্যালা ঠেলি, বাধ্য হয়ে ভাদ্র মাসের মাঝা মাঝি সময়ে অডার নেওয়া বন্ধ করতে হত । সেই এখন সেলাই কল গুলো কেমন চুপ মেরে বসে আছে । সবই কালের নিয়তি ।পল্টু শেখ কালের নিয়তি বললেও নতুন প্রজন্ম থেকে প্রবীণ রা কিন্তু বলছেন অন্য কথা , তাদের বক্তব্য , এখন মানুষের কাছে অত সময় নেই যে একবার একবার কাপড়ের দোকান যাবেন আবার দর্জির কাছে , তার চেয়ে বরং একবার রেডিমেড দোকানে গিয়ে নিজের পছন্দের ফিটিংস করে নিলেই কেল্লা ফতে ।তাই উৎসবের মুখে ব্র্যান্ড আর বহুজাতিক অন লাইনই সংস্থার জোড়া দাপটে কার্যত বিকল্প কাজের সন্ধান ই খুঁজছেন গ্রাম বাংলার এই পোশাক কারিগররা।
আরও দেখুন, বিরিয়ানি থেকে তন্দুরি, রইল কলকাতার সেরা খাবারের ঠিকানার হদিশ
আরও দেখুন, কলকাতার কাছেই সেরা ৫ ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, থাকল ছবি সহ ঠিকানা
আরও দেখুন, মাছ ধরতে ভালবাসেন, বেরিয়ে পড়ুন কলকাতার কাছেই এই ঠিকানায়
আরও পড়ুন, ভাইরাসের ভয় নেই তেমন এখানে, ঘুরে আসুন ভুটানে