চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর এবার আদিত্য-এল ১ অভিযান নিয়ে আশাবাদী ইসরো। শনিবার সূর্যের রহস্য উদঘাটনের জন্য উৎক্ষেপণ করা হবে ইসরোর মহাকাশযান। এই অভিযান ঘিরে সারা দেশে উৎসাহ তুঙ্গে।
শনিবার শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে আদিত্য-এল ১ মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ হতে চলেছে। এই উৎক্ষেপণের দিকে তাকিয়ে সারা দেশ। শ্রীহরিকোটায় এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ২ পড়ুয়া। ইতিমধ্যেই শ্রীহরিকোটায় পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা ইয়ং হরাইজনস স্কুলের দুই পড়ুয়া নীলার্ক পাহাড়ি ও নীলাব্জ পাহাড়ি। ইসরোর অন্যতম অগ্রণী স্পেস টিউটর সংস্থা ‘নাসো’র দেশব্যাপী পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ভারতের প্রথম সূর্য অভিযান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে তারা। ভারতের সূর্য অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি বহুদিনের। এ বিষয়ে উৎসাহের শেষ ছিল না দশম শ্রেণির নীলার্ক পাহাড়ি ও চতুর্থ শ্রেণির নীলাব্জ পাহাড়ির। দুই ভাই দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত নাসো-র অ্যাস্ট্রোনমি পরীক্ষায় দুটি পৃথক বিভাগে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সেই সুবাদে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারা ‘গ্র্যান্ড প্রাইজ’ হিসাবে আদিত্য এল ১ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছে।
শ্রীহরিকোটায় পৌঁছে রীতিমতো উত্তেজিত নীলার্ক ও নীলাব্জ। নীলার্ক জানিয়েছে, ‘শ্রীহরিকোটায় এখন সাজো সাজো রব। বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আদিত্য-এল ১ নিয়ে প্রচণ্ড উৎসাহী। যে পিএসএলভি সি ৫৭ রকেটের মাধ্যমে আদিত্য-এল ১ উৎক্ষেপণ করা হবে, তার মডেল বিভিন্ন রেলস্টেশনে রাখা আছে। ইতিমধ্যে, পিএসএলভি সি৫৭ রকেটটি শ্রীহরিকোটার সেকেন্ড লঞ্চ প্যাডে নিয়ে আসা হয়েছে। খানিকটা দূর থেকে আমরা সেটা দেখার সুযোগ পেয়েছি।’
আদিত্য-এল ১-এর কারিগরি ও স্থাপনার বিষয়ে নানান খুঁটিনাটিও নীলার্ক, নীলাব্জর ঠোঁটস্থ। নীলার্ক জানিয়েছে, ‘ইতালিয়-ফরাসি গণিতবিদ জোসেফ লুই ল্যাগরেঞ্জের নামে নামকরণ হয়েছে ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’ বা ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’। এই পয়েন্টে স্যাটেলাইট স্থাপিত হলে সবসময় সূর্যের উপর নজরদারি করা সম্ভব হবে। স্থানটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। এর ফলে ভারত সহ সারা বিশ্বের কাছে বহু অজানা দিক উঠে আসবে। সূর্য নিয়ে গবেষণায় ভারত পৌঁছে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে।’
নীলার্ক এর আগে ৫০টিরও বেশি অলিম্পিয়াডে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। ডিসকভারি স্কুল সুপার লিগে তাদের টিম ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ওয়ান্ডার্স’ দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যাওয়ার ছাড়পত্র পায়। যদিও ভিসা সংক্রান্ত জটের কারণে নাসা-য় এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এর আগে লাদাখ অবজার্ভেটরি ও তিরুবনন্তপুরমের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল নীলার্ক। অতি সম্প্রতি, আর্যভট্ট ম্যাথেমেটিক্স অলিম্পিয়াডে পৃথক বিভাগে নীলার্ক প্রথম ও নীলাব্জ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেস সায়েন্স অলিম্পিয়াডে নীলার্ক পেয়েছে প্রথম স্থান। ইন্টারন্যাশনাল এইরোস্পেস অলিম্পিয়াডেও পরপর ২ বছর প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড অফ স্টেম অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিতেও পরপর ২ বছর প্রথম হয়েছে। পিসা প্রতিযোগিতায় ভারতে অর্জন করেছে প্রথম স্থান। মাত্র ০.২৫ নম্বরের জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অলিম্পিয়াডে পেয়েছে দ্বিতীয় স্থান এবং নিখরচায় দ্বিতীয়বার নাসা যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
নীলার্কর পাশাপাশি ভাই নীলাব্জও ডজনখানেক অলিম্পিয়াডে প্রথম ৩-এ নিজের জায়গা করে নিয়েছে। সবমিলিয়ে ২ ভাই পেয়েছে ১৫০-রও বেশি মেডেল-ট্রফি। নীলার্ক ও নীলাব্জ ২ জনেরই ইচ্ছা, ভবিষ্যতে ইসরোতে দেশের সেরা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দেবে। শ্রীহরিকোটায় নীলার্ক ও নীলাব্জের সঙ্গী হয়েছেন তাদের মা নীলাঞ্জনা মাইতি। তিনিও ছেলেদের এই অভাবনীয় সুযোগ প্রাপ্তিতে বেজায় খুশি।
আরও পড়ুন-
Aditya L1: আদিত্য এল১-এর গন্তব্য ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট১, জানুন সূর্য পথের বিশেষ এই স্থান সম্পর্কে
Aditya L1: ঠিক কত টাকা খরচ হবে ইসরোর সূর্য অভিযানে, জানুন কে তৈরি করেছে আদিত্য এল১ মহাকাশ যান
নিরাপদ পথের সন্ধানে ব্যস্ত রোভার প্রজ্ঞান, ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়