
Jalpaiguri News: তিস্তার এক প্রান্তে শারদীয়া দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই তিস্তার অপর পাড় মেতে উঠব একদিনের দুর্গাপুজোয়। একাদশী তিথিতে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ উল্লাডাবরি গ্রামে বড় ভান্ডানীতে থাকা ভান্ডানী মন্দিরে দেবী দুর্গা ভান্ডানী রুপে পূজিতা হন। কথিত আছে, বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ি ছেড়ে দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে কৈলাশে ফেরার সময় ঘন জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি সাধারণ নারীর রূপ ধরে ঘন জঙ্গলের ভেতর একটি গাছতলায় বসে কাঁদছিলেন। সেই সময় এক রাখাল গরু চড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি এক নারীকে কাঁদতে দেখে তাকে রাতে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। মাঝরাতে দেবি আসল মূর্তি ধারণ করেন। তিনি রাখালকে বলেন, ‘তুই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিস। তোর আতিথেয়তায় আমি তুষ্ট। বল তুই আমার থেকে কী বর চাস?’ তখন রাখাল বলেন, 'মা ঘন জঙ্গলে আমরা চাষ করতে পারি না। তাই আমাদের খুব খাদ্য কষ্ট। এই অঞ্চলকে তুমি শস্যশ্যমলা করে দাও।' তার কথা শুনে দেবী তুষ্ট হয়ে বর দেন। পরদিন সকাল থেকে তিস্তা ওপর পার শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে। সেই থেকে পাঁচ শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে ময়নাগুড়ির বড় ভান্ডানী গ্রামের মন্দিরে একাদশীর দিনে ভান্ডানী রূপে দেবী দুর্গার একদিনের দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
দেবীকে এখানে মহিষাসুরমর্দিনীর ভূমিকায় দেখা যায় না। দেবী এখানে সাধারণ নারী রূপী। তাই এখানে দেবী দুর্গা দ্বিভুজা এবং বাহন সিংহের বদলে বাঘের উপর অধিষ্ঠিতা। দেবীর সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ থাকেন। কিন্তু এই মূর্তিতে অসুর থাকে না। পুজো ঘিরে ময়নাগুড়ির ভান্ডানী অঞ্চলে প্রতিবার লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। রাতভর চলে পুজো মেলা। কয়েকশো পাঁঠা ও অগুন্তি পায়রা বলি হয়। পুজোয় কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাফ।
পুজো দিতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানালেন, ছোটবেলা থেকে এখানে পুজো দিতে আসেন। পুজো দিয়ে সারারাত মেলা দেখে বাড়ি ফেরেন। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি দীনেশ চন্দ্র রায় জানালেন, ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পুজো হয়ে আসছে। ধর্তীমোহন মল্লিকের বাবার হাত ধরে আজ থেকে ৫০০ বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয়। উত্তরবঙ্গ-সহ নেপাল, ভুটান থেকেও মানুষ আসে পুজো দিতে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।