সংক্ষিপ্ত
ব্রিটেন-আমেরিকা/ ভোটের লড়াই হয় একের বিরুদ্ধে এক
ভারতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা আলাদা
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট জয়ের থেকেও বিরোধী ভোট ভাগ করেই সাফল্য পাওয়া যায় বেশি
আর ২০২১-এ অসমে সেই কৌশলই প্রয়োগ করল গেরুয়া শিবির
শমিকা মাইতি: ব্রিটেন বা আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের লড়াই হয় একের বিরুদ্ধে এক। কিন্তু ভারতে তা নয়। এখানে জেতার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের চেয়েও বিরোধীদের বিভাজনের রাজনীতি কাজ করে বেশি। অর্থাৎ বিরোধী ভোট ভাগ করে প্রতিপক্ষকে এমন দুর্বল করে দাও যে, শক্তিমান না হয়েও তোমাকে শক্তিশালী দেখায়। ২০২১ সালে আসাম বিধানসভা নির্বাচনে মসনদ দখলে রাখতে সেটারই চেষ্টা করছে বিজেপি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবীদার হিমন্ত বিশ্বশর্মা সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে মেনে নিয়েছেন, বিরোধী মহাজোটের মোকাবিলা করতে আর এক বিরোধী জোট এজেপি (আসাম জাতীয় পরিষদ) ও রাইজোর দলকে পরোক্ষে সাহায্য করছে তারা। উদ্দেশ্য, সিএএ বিরোধী ভোটব্যাঙ্ক ভাগ করে বিরোধীদের দুর্বল করা।
১৯৮০-র দশকে প্রণয় রায় ও অশোক কুমার লাহিড়ি বিরোধী শক্তির মাপকঠি হিসাবে ‘দ্য ইনডেক্স অফ অপোজিশন ইউনিট’ এক কথায় আইওইউ ধারণাটির প্রবর্তন করেন। ০ থেকে ১০০-র মধ্যে এর নম্বর হয়। হিসাবটা এইরকম, সবচেয়ে বেশি বিরোধী ভোট যে পেয়েছে তার শতাংশের হিসাবের সঙ্গে বিরোধী দলগুলি মিলে যত শতাংশ ভোট পেয়েছে তা ভাগ করা এবং তারপর একশো দিয়ে গুণ। সূচক ১০০ হলে বুঝতে হবে একটাই বিরোধী দল রয়েছে, অর্থাৎ মোট বিরোধী ভোট যা তার পুরোটাই পেয়েছে একটি দল।
বলাবাহুল্য, ভারতে আইওইউ সূচক একশো তো দূর তার আশপাশেও থাকে না। ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যতগুলো লোকসভা ভোট হয়েছে এই দেশে, তার গড় আইওইউ হল ৬৪। আসামে সেটা আরও কম, ৩৭। অর্থাৎ বিরোধী ভোট এখানে এতটাই ভাগ হয়ে যাচ্ছে যে কোনও আসনে জেতার জন্য ৫০ শতাংশের অনেক কম ভোট যথেষ্ট। ২০০৬, ২০১১ ও ২০১৬ বিধানসভা ভোটের গড় ফলাফল লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে মাত্র ২৯ শতাংশ আসনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে কোনও দল জিতেছে। বাকি সব ক’টিতে তার থেকে অনেক কম ভোট পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছে রাজনৈতিক দলগুলি।
এই প্রেক্ষিতে আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে কব্জা করতে বিরোধী জোট এককাট্টা করার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে কংগ্রেস। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাকি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাজোট গড়েছে তারা। কংগ্রেসের এই মহাজোটে সঙ্গী হয়েছে সিপিআই, সিপিএমের মতো বামপন্থী দলগুলি, বড়ো পিপলস ফ্রন্ট (বিপিএফ), আঞ্চলিক গণ মোর্চা (এজিএম) এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। জানুয়ারিতে যেখানে মনে হচ্ছিল, বিরোধীশক্তি নেই বলে আসামে বিজেপির ক্ষমতায় আসা একপ্রকার সুনিশ্চিত, গত তিন মাসে ভোটের হাওয়া পর্যবেক্ষণ করার পর তেমনটা বলছে না কেউ।
বিরোধী ভোট ভাগ করতে বিজেপি আবার মদত দিচ্ছে আসাম আঞ্চলিকতাবাদের ধ্ববজাধরী এজেপি-রাইজোর দলের জোটকে। যাতে সিএএ-বিরোধী ভোট একক ভাবে ভোগ না করতে পারে মহাজোট। কংগ্রেস বহু বার চেষ্টা করেও এই দুই দলকে মহাজোটের মধ্যে ঢোকাতে পারেনি। প্রসঙ্গত, এজেপি-রাইজোরদের পিছনে রয়েছে আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু), আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের (এজেওয়াইসিপি)-র মতো দল, যারা ১৯৭৯-৮৫তে অসম আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেই দিকে দিয়ে দেখলে এই জোট আবার অগপ-র ভোট কেটে পরোক্ষে বিজেপির জোটবন্ধে ক্ষতিও করবে।
আরও পড়ুন - বঙ্গের ভোট মানে শুধুই হিংসা নয়, গণতন্ত্রের উৎসবও বটে - দেখুন পঞ্চম দফা, ছবিতে ছবিতে
আরও পড়ুন - মোদীকে ঠিক কতবার, কী কী গালি দিয়েছেন মমতা - প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিলেন তথ্য
আরও পড়ুন - করোনা আবহে ভোট - মমতার হুঙ্কারেও কমছে না মোদীর সভা, তবে বদলে যাচ্ছে তার চেহারা
সব মিলিয়ে বলা যায়, আসামে ফের ভোট কাটাকুটির খেলাতে লুকিয়ে থাকবে জয়ের চাবিকাঠি। সুস্থ গণতন্ত্রের পক্ষে এই প্রবণতা মোটেই কাম্য নয়।