জৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যায় অনুষ্ঠিত ফলহারিণী কালীপুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। অশুভ কর্মফল নাশ করে শুভফল প্রদানকারী এই রূপে দেবী কালী ভক্তদের সঙ্কট, ব্যাধি ও কষ্ট দূর করেন।
কথায় আছে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন। প্রতি মাসেই কোনও না কোনও দেব দেবী পুজিত হন। কিংবা থাকে কোনও পুজোর বিশেষ রীতি। হিন্দুদের প্রাচীন দেব দেবীর তালিকায় স্থান পান মহাদেব, বিষ্ণু থেকে শুরু মা কালী। প্রাচীন কাল থেকেই হিন্দু শাক্ত ধর্মবিশ্বাসে দেবী কালী ও বহুমাত্রিক ও শক্তিময়ী রূপ। তিনি কখনও ভয়ঙ্করী, তো কখনও পরমাপ্রকৃতি মাতৃস্নেহময়ী। আবার তিনি কখনও মুক্তিদায়িনী। তাঁর এই বৈচিত্র্য়ময় রূপাবলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুজো হল ফলহারিণী কালীপুজো। প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ফলহারিণী কালী পুজো। শাস্ত্র ও অলৌকিক বিশ্বাস অনুসারে, এই পুজোয় দেবী অশুভ কর্মফল নাশ করে ভক্তকে শুভফল প্রদান করে থাকেন।
এই ফলহারিণী কালী পুজোর আছে বিশেষ মাহাত্ম্য। ফলহারিণী শব্দটি সংস্কৃত উৎস থেকে এসেছে। ফল অর্থ কর্মফল বা কাজের ফল এবং হারিণী শব্দের অর্থ হরণ করেন যিনি। অর্থাৎ ফলহারিণী হলেন সেই দেবী যিনি অশুভ কর্মফল হরণ করেন এবং তাকে শুভফল দান করেন। এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই গৃহস্থ থেকে সাধু সকল স্তরের ভক্তগণ এই তিথিতে দেবী উপাসনায় ব্রতী হন।
মা কালীর ফলহারিণী রূপটি মূলত রক্ষাকর্ত্রী এবং ফলপ্রদাত্রী রূপ। এই রূপে দেবী ভক্তের সঙ্গে সঙ্কট, ব্যাধি, কষ্ট এবং কর্মজ স্ফলতা হরণ করেন।
ফলহারিণী কালী পুজো হয় জ্যৈষ্ঠ মাসে। জ্যৈষ্ট মাসে অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণত গ্রীষ্মের পড়ে। এবছর ২৬ মে পুজিত হচ্ছেন ফলহারিণী কালী। এই সময় নানা রকমের মরশুমি ফল পাওয়া যায়। যে কারণে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ, তালশাঁস, বেল, আনারস দিয়ে মা-কে পুজো দেওয়া হয়ে থাকে।
ফলহারিণী কালী পুজোর মূল উদ্দেশ্য হল অশুভ কর্মফল নাশ এবং শুভফল লাভ। ভক্তদের বিশ্বাস এই পুজো করলে রোগব্যাধি দূর হয়। বিদ্যাপ্রাপ্তি ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। অর্থসাফল্য ও কর্মজীবনের উন্নতি ঘটে। দাম্পত্যজীবনে শান্তি ফিরে আস। মানসিক ক্লেশ ও অস্থিরতা দূর হয়। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, অনেকে এই তিথিতে উপবাস পালন করে, রাতে দেবীর আরতি করেন এবং ভোররাতে ফল ও অন্যান্য উপচারে হোম ও পুষ্পাঞ্জলি দেন। এই রীতি মেনে পুজিত হন মা ফলহারিণী কালী।
অন্যদিকে, এই তিথিতে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস স্বয়ং এই তিথি শ্রী মা সারদা দেবীকে ষোড়শী রূপে পুজো করেছিলেন। তিনি সারদা মাকে দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী রূপে দেখেছিলেন এবং তাঁকে মহাশক্তির প্রতীক রূপে উপাসনা করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল ফলহারিণী তিথিতে। এই পুজোর দিনে আছে বিশেষ মাহাত্ম্য।
তেমনই দেবী কালী বহু রূপে পুজিত হন। দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী, মহাকালী, ভরতারিণী-সহ আরও অনেক কিছু।


