সংক্ষিপ্ত

দুর্গাপুজোর সময় গণেশ দেবতার পাশে স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে স্থাপন করা হয় কলা বউকে। আপাতদৃষ্টিতে তাঁকেই গণেশের স্ত্রী বলে মনে করা হলেও, প্রকৃত ঘটনা কিন্তু মোটেই তা নয়।

দুর্গাপুজোর মণ্ডপে আমরা শ্রী গণেশের পাশে দেখতে পাই কলাবৌকে। মহাসপ্তমীর সকালে তাঁকে স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে স্থাপন করা হয় সিদ্ধিদাতার পাশটিতে। এই রীতির মাধ্যমেই তিনদিনের দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। আপাতদৃষ্টিতে তাঁকেই গণেশের স্ত্রী বলে মনে করা হলেও, প্রকৃত ঘটনা কিন্তু মোটেই তা নয়। পুরাণ অনুসারে, সিদ্ধি বিনায়ক আসলে দু'জন স্ত্রীয়ের পতিদেব। সেই দুই নারীর নাম, ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবতা গণেশ একবার তপস্যায় রত ছিলেন। সেই সময় তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন দেবী তুলসী। অপূর্ব সুন্দর গণেশ দেবতাকে দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিয়ে করতে চান। ভগবান গণেশ তখন নিজেকে ব্রহ্মচারী বলে জানিয়ে দেবী তুলসীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মর্মাহত হন দেবী তুলসী। তিনি দেবতাকে অভিশাপ দেন যে, একটা নয়, একের পর এক, মোট দুটো বিয়ে হবে গণেশের। এই অভিশাপে গণপতিও অতি ক্ষুব্ধ হন, তিনিও দেবী তুলসীকে পালটা অভিশাপ দেন যে, ‘আপনার বিয়ে হবে একজন অসুরের সঙ্গে।’ এই কারণেই শ্রী গণেশের পুজোয় তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয় না এবং তাঁর দুজন স্ত্রী হয়, যাঁরা হলেন, ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি।

গণেশের বিয়ে সম্পর্কে আরও একটি কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। এক কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান গণেশ ব্রহ্মচারী থাকতে চেয়েছিলেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, তাঁর বড় পেট এবং হাতির মতো মুখের কারণে তাঁকে কেউ বিয়ে করবে না। এই কারণে তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করা শুরু করেন। এমনকী তিনি অন্যান্য দেবতাদের বিবাহেও বাধা সৃষ্টি করতেন। তাঁর এরূপ ব্যবহারে স্বর্গের অন্যান্য দেবতারা তাঁর ওপর বিরক্ত হয়ে ভগবান ব্রহ্মার স্মরনাপন্ন হন। 

ব্রহ্মার যোগবলে দু'জন নারীর আবির্ভাব ঘটে, তাঁরা হলেন ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি।  তাঁরা দুজনেই ব্রহ্মা দেবের মানস কন্যা। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা শ্রী গণেশের কাছে গিয়ে তাঁর দুই কন্যাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। গণপতি তাঁদের শিক্ষা দেওয়ার ভার নেন। বিনায়কের কাছে পড়াশোনা করার ছলে ঋদ্ধি ও সিদ্ধি তাঁকে অন্য দেবতাদের বিয়ে ভেঙে দেওয়া থেকে বিভ্রান্ত করত। গণপতি একসময় জানতে পারলেন যে, কোনও সমস্যা ছাড়াই সমস্ত বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ তিনি ঋদ্ধি ও সিদ্ধির ওপর ভীষণ রেগে গেলেন। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রহ্মার দুই কন্যাকে তিনি অভিশাপ দিতে লাগলেন। ব্রহ্মা তখন সেখানে পৌঁছে গণেশের কাছে প্রস্তাব দেন ঋদ্ধি ও সিদ্ধিকে বিয়ে করার জন্য। গণেশ সেই প্রস্তাবে সম্মত হন এবং তাঁর সঙ্গে দুই কন্যারই বিয়ে সম্পন্ন হয়। ঋদ্ধি ও সিদ্ধির গর্ভে দু'জন পুত্রের জন্ম হয়েছিল, যাদের নাম শুভ এবং লাভ।

আরও পড়ুন- 
 Ganesh Puja: ভগবান গণেশের সঙ্গে লাল রঙের সম্পর্ক কী? জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
Ganesh Kartikeya Story: দাদা কার্তিকের সঙ্গে ব্যাপক ঝগড়া বেঁধে গেল দেবতা গণেশের, শিব-পার্বতী কী করলেন তারপর?
সংসারে সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য গণেশের মূর্তি রাখেন অনেকেই, কিন্তু সিদ্ধিদাতাকে ঠিক কীভাবে রাখলে তবেই ফিরবে সৌভাগ্য?
Ganesh Chaturthi: শিশুপুত্র গণেশের মাথায় কীভাবে এল হাতির মস্তক? জেনে নিন পুরাণের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী