সংক্ষিপ্ত
- নেতাজি-র অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে সিনেমা
- গুমনামি নামে এই ছবি আসতে চলেছে পুজোতে
- ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়
- ছবি-র পোস্টার রিলিজেই কিন্তু তৈরি হয়েছে এক বড়সড় বিতর্ক
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু নিয়ে আজও বিতর্ক বিদ্যমান। জাপান সরকার থেকে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাইহোকু বিমানবন্দরের দুর্ঘটনাকে নেতাজির অন্তিম পরিণতি বলে দাবি করলেও তাতে কোনও সরকারি সিলমোহর লাগেনি। এমনকী, বাঙালি জাতি থেকে শুরু করে নেতাজি অনুগামী এবং বিভিন্ন নেতাজি গবেষকও তাইহোকু বিমানবন্দরের দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু দাবিকে দশকের পর দশক অস্বীকার-ই করে আসেছে। এমন এক বড়সড় বিতর্কে কার্যত ঘি ঢাললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি ১৮ অগাস্টকে নেতাজির মৃত্যুদিন বলে উল্লেখ করে তাঁর আগামী ছবির পোস্টার প্রকাশ করেছেন।
On the 74th anniversary of His 'death', presenting the official poster of #Gumnaami, a film by @srijitspeaketh | Releasing on #Puja2019. pic.twitter.com/x9izdkGU9g
টলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতাদের দলে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কেও ফেলা হয়। এমনকী, বাংলা বাণিজ্যিক ছবির বাজার-কে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজের কাঁধে বহন করেছেন। এর জন্য আজও টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে কলা-কুশলীরাও তাঁকে কুর্ণিশ জানান। কিন্তু, এহেন ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রসেনজিৎ-এর এই বিতর্কিত টুইট কোনওভাবেই মেনে নিতে চাইছেন না নেতাজি অনুরাগীরা। কীভাবে প্রসেনজিৎ এমন একটা ভুল করলেন, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
আরও পড়ুনঃ নতুন 'লাভ স্টোরি' বণি সেনগুপ্তর! বিপরীতে থাকছেন কে, প্রকাশ্যে পোস্টার
পুজোতেই মুক্তি পাচ্ছে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'গুমনামি'। এই ছবি-র মুখ্যচরিত্রে রয়েছে প্রসেনজিৎ। সেই 'গুমনামি'-র ছবি-র পোস্টার নিজের টুইটারে প্রকাশ করেছেন প্রসেনজিৎ। আর সেখানেই ১৮ অগাস্টকে তিনি নেতাজির মৃত্যুদিন বলে উল্লেখ করে লিখেছেন- 'তাঁর ৭৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী-তে গুমনামি-র পোস্টার পরিবেশন করলাম...'। প্রসেনজিৎকে এই টুইটের জন্য অনেকেই বাহবা দিলেও, বেশকিছু জন এই মৃত্যুদিন নিয়ে কটাক্ষও করেছেন।
এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, যদি ১৮ অগাস্ট নেতাজির মৃত্যুদিন হয়ে থাকে তাহলেও তো 'গুমনামি' ছবি হওয়া-রই কথা নয়। আবার আর একজন লিখেছেন, গুমনামিবাবা মারা গিয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। সুতরাং ৭৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী বলাটা ভুল। শুধু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নন, পিআইবি-ও ১৮ অগাস্টকে নেতাজি-র মৃত্যুদিন বলে উল্লেখ করেছে। আর এতে বিতর্ক আরও বেড়েছে। নেতাজি অনুগামী থেকে শুরু করে নেতাজির পরিবারেরর সদস্যরাও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালে বার্মা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। কোহিমা-য় নেতাজির আজাদহিন্দ বাহিনীর সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর তীব্র যুদ্ধ হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনী কোহিমা জয় করে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, জাপান মিত্র শক্তি-র কাছে আত্মসমর্পণ করায় আজাহ হিন্দ বাহিনী দূর্বল হয়ে পড়েছিল। নেতাজি-কে একটি বিমান তাইওয়ান হয়ে জাপানের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। কিন্তু, রেডিওবার্তায় সেদিন দাবি করা হয়েছিল তাইওয়ানের তাইহোকু বিমানবন্দরে ভেঙে পড়েছে একটি বিমান। এই বিমানেই নাকি ছিলেন নেতাজি। জাপানের রেনকোজি মন্দিরেও নেতাজির একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে এবং সেইখানে এক কলসি চিতাভষ্ম রাখা হয়েছে। জাপান সরকারের দাবি এটি নেতাজি-র চিতামভস্ম। কিন্তু, নেতাজি গবেষক দল থেকে বহু ব্যক্তি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দাবি করেছেন, ওইদিন তাইহোকু বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনার সত্যতা নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ ওই বিনমানবন্দরে সেদিন কোনও বিমানদুর্ঘটনার তথ্যের লিপিবদ্ধ প্রক্রিয়াতে বহু জায়গায় এর উল্লেখ-ই নেই। এমনকী, নেতাজির মৃত্যু রহস্য সমাধানে ভারত সরকার তদন্ত কমিটি বসিয়েছে। তার রিপোর্ট নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এমনকী মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট-কেও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে কানাঘুষোয় যে খবর সামনে এসেছে তাতে মুখার্জি কমিশনও তাইহোকু বিমানবন্দরে সেদিন কোনও বিমান দুর্ঘটনার তথ্য সঠিকভাবে পায়নি।
১৫ অগাস্ট মুক্তি পেয়েছে 'গুমনামিবাবা' ছবির টিজার। দেড় মিনিটের এই টিজারে সামনে উঠে এসেছে একাধিক ঘটনা। এই ছবির টিজার প্রকাশ্যে আসা মাত্রই তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন নেতাজি গবেষক দেবব্রত রায়। প্রকাশ্যেই তিনি অভিযোগ করেন, এই ছবিতে যেভাবে নেতাজিকে তুলে ধরা হচ্ছে তা কাল্পনিক, আরোপিত ও হাস্যকর। সম্প্রতিই এই অভিযোগ নিয়ে এসে শ্যুটিং বন্ধের কথাও জানান তিনি। এই সম্বন্ধীয় এক আইনি নোটিশ তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায় কে পাঠিয়েছেন।