সংক্ষিপ্ত
- মুক্তির আগেই সিনেমাপ্রেমীদের মনে এক কৌতুহল
- আর এই কৌতুহল তৈরি করে দিয়েছে অভিযাত্রিক
- অতিমারির কারণে এখনও মুক্তি পায়নি অভিযাত্রীক
- পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র ভাগ করে নিলেন কিছু অভিজ্ঞতা
পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রর ছবি ‘অভিযাত্রিক’ তৈরির ঘোষণার দিন থেকেই, সিনেমাপ্রেমী থেকে সমালোচক সকলের দৃষ্টি ছিল এই ছবিতে। ছবির প্রযোজনার সঙ্গে মধুর ভণ্ডারকরের নাম থাকায় ছবিটি প্রথম থেকেই প্রচারের আলোয় ছিল। ছবি তৈরি হলেও কোভিড মহামারির কারণে রিলিজ এখনও আটকে। তবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার খবরে চলে আসে ‘অভিযাত্রিক’।
আলোচনার কারণ , এই ছবি তৈরি হয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের শেষ পর্ব নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় যে ছবি কাল্ট হয়ে রয়েছে, ‘অপুর সংসার ‘ যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় ‘অভিযাত্রিক’। এই ছবি ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে নানান চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি দেখার পর দর্শক ও সিনেমা সমালোচকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় খুশি পরিচালক শুভ্রজিৎ থেকে কলাকুশলী সকলেই।
‘অভিযাত্রিক’ ছবি বাংলা সিনেমার সাদাকালো সময়ের স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে। ছবির প্রতিটি ফ্রেম বলে দেয় ছবি তৈরিতে কতটা যত্ন নেওয়া হয়েছে। অভিযাত্রিক ছবিটি ৪০ এর দশকের সময়কে ধরে করা হয়েছে। তাই এই ছবি তৈরির নেপথ্যে টেকনিক্যাল ও প্রোডাকশন ডিজাইন একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই গল্পই পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন পরিচালক শুভ্রজিত মিত্র। তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি সুচরিতা দে।
পরিচালক এর কথায়, 'অভিযাত্রিক এমন একটি ছবি যার শুটিং এর জন্য টেকনিক্যাল ও প্রোডাকশন ডিজাইন খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের ৪০ এর দশকের ভারতবর্ষের সঠিক ভাবে চিত্রায়িত করতে হতো, যেটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ সব কিছুই বদলে গিয়েছে গত আট দশকে। তাই আমি ও আমার সিনিয়র টিম মেম্বাররা মিলে এমন ভাবে প্রেক্ষাপট সাজিয়েছি, যাতে সঠিক দৃশ্য পর্দায় দেখানো যায়। ভারতবর্ষের ৬৮ টি লোকেশন এ ৭ টি শিডিউলে শ্যুট করেছি।'
শুভ্রজিৎ আরও জানিয়েছেন যে- 'বারাসত, টাকি, বোলপুর, গুরুবাথান, চালসা, কলকাতার আউটডোর, ইন্ডোর, স্টুডিও সেট এ ছবির বিভিন্ন অংশ শ্যুট করা হয়েছে। যেহেতু এই ছবি সাদাকালোতে শ্যুট করার প্ল্যান ছিল তাই প্রোডাকশন ডিজাইন, সিনেমাটোগ্রার, আর্ট ডিরেক্টর ও ভিজুয়াল এফেক্ট সবাইকেই ব্যাক ক্লাসমেট করে করতে হয়েছে, মুলত তিনটি ধাপে শ্যুট হয়েছে প্রতিটি লোকেশন এ। খুব যত্ন সরকারে কাজ করা হয়েছে যার ফলে সিনেমায় সেই সাদাকালো এফেক্ট টা সঠিক ভাবে এসেছে।'
- বেনারস পার্ট-
'বেনারসে এর আগেও আমার ও আমার টিমের শ্যুটিং এর অভিজ্ঞতা ছিল। তবে এবারে যেটা সমস্যা ছিল সেগুলি হল, ৪০ এর দশকের থেকে আজকের বেনারস অনক উন্নত। সেই উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রিক পোল, বর্তমান মানুষের বেশভূষা , গলি থেকে গঙ্গার ঘাট সমস্যার বর্তমান সময়ের ছাপ। সেই সব কিছুকে সরাতে পোস্ট প্রোডাকশন এও অনক খাটতে হয়েছে। প্রতি ফ্রেম থেকে সরাতে হয়েছে বর্তমান উন্নয়নের সব কিছু। শ্যুট এর সময় জলের স্তর মেপে ঘাটে শ্যুট হয়ছে। জনতা কে সামলে কাজ করা একটা ঝক্কির কাজ ছিল। আমরা যখন শ্যুট করি সি সময়ে ছট পুজো ছিল, তাই সমস্যা অনেকটাই বেড়ে গেছিল। ছবির চিত্র গ্রাহক সুপ্রতিম ভোল ও ভি এস এক্স ডিজাইনার কৃষ্ণেন্দু ঘোষ একসঙ্গে টিমের করে কাজ এই ছবি অভিযাত্রিক। ছবি তৈরির সময় তো লেগেছিল। তবে ছবি তৈরির প্রি প্রডাকশন করতে আমার ৭ থেকে ৮ মাস লেগেছিল।'
নিশ্চিন্দিপুর রিক্রিয়েট-
'টাকি ও বোলপুর দুই জায়গার সমন্বয়ে আমরা নিশ্চিন্দিপুর-কে তৈরি করতে পেরেছি। বোলপুর অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করতে খুব বেশি অসুবিধে হয়নি। কারণ সেখানকার মানুষেরা শ্যুট দেখে অভ্যস্ত। মুলত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আরেক ভার্জিন লোকেশন বাছা হয়েছিল কারন ৪০ এর দশক ছবিতে ধরতে সুবিধা হয়েছে। টাকিতে মুলত অপুর বাড়ির দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে। কলকাতার কাছেই এতো বড় সেট ফেলে শ্যুট করা অনেক সুবিধা হয়েছে। মুলত দুই জায়গার সমন্বিত শ্যুটিং আমি নিশ্চিন্দিপুর কে পর্দায় দেখাতে পেরছি।'
সারানাথের সেট টাকিতে-- তার কিছু ছবি-
নর্থ-ইষ্ট-এর জঙ্গলে -
পরিচালক জানান- 'খাসিয়া পাহাড়ের দৃশ্য-র জন্য উত্তরবঙ্গের গুরুবাথান ও চেলসা-কে বেছে নিয়েছিলাম। তবে এখানে শ্যুট করতে অভিনেতা ও টিম কে সব জিনিসপত্র নিয়ে ট্রেক করে উঠতে হতো। মাল বওয়ার জন্য আমাদের দুটো ঘোড়া ছিল। নদীর তীরে শ্যুট করতে গিয়ে আমরা হড়পা বানের মুখেও পড়ি। কাজলের চরিত্রের অভিনেতা আয়ুষমান কে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে আনা হয় । তবে লোকাল যে কেয়ারটেকার ছিল সে সব সময় সাবধান করতো ,কারণ এই এলাকায় বন্য প্রাণী বিশেষ করে হাতি, চিতা, ভল্লক এর ভয় তো ছিলই, কিং কোবরা আর পাইথন ভর্তি ছিল।
কলকাতার শ্যুট-
আউটডোর ইন্ডোর মিলিয়ে ৩ ভাগে শ্যুট হয়েছে। কলকাতার মিউজিয়াম, ময়দানের ট্রাম লাইন, ভিক্টোরিয়া, গঙ্গার ঘাট পার্ক স্ট্রিটের কবরস্থান । উত্তর কলকাতার কিছু জায়গাএ পুরোনো বাড়ি, যেগুলি ভুতের বাড়ি বলে পরিচিত, স্টুডিও-তে আমরা একটা কাঠের রেল বগি বানিয়েছিলাম। সঙ্গে একটা রিমোট স্টেশন, যাতে ৪০ দশকের মতো সব কিছুই মনে হয়। আরও একটি সমস্যা হয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ ও ফ্রিডম ফাইটা- দের দৃশ্য চিত্রায়িত করতে। পুরনো গাড়ি, পুলিশ কুকুর, জুনিয়র আর্টিস্ট সব মিলিয়ে এতো বড় প্রেক্ষাপটে অভিযাত্রিক-এর শ্যুট দারুণ অভিজ্ঞতা। দর্শকদের মনেও এই দৃশ্য থেকে যাবে।
অবশ্যই ছবির অভিনেতাদের কথা বলা, আদবকায়দা ,পরিচ্ছদ সব মিলিয়ে 'অভিযাত্রিক '-এর তৈরির নেপথ্য কাহিনি রোমাঞ্চকর। অভিযাত্রিক বড় পর্দায় দেখার মত ছবি। তাই কোভিড ১৯ অতিমারি কাটিয়ে এই ছবি বড় পর্দায় মুক্তির অপেক্ষায়।