সংক্ষিপ্ত

বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার গ্রাহকদের উৎসাহ দিতে ভর্তুকির সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এই গাড়ি কিনলে ভর্তুকি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পেয়ে যান গ্রাহকরা। নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে এই সুবিধে নিতে আবেদন করতে পারবেন যে কেউ।

গোটা বিশ্ব দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানী বাঁচাতে ও পরিবেশের স্বার্থে এখন অনেকেই বৈদ্যুতিক যান অর্থ্যাৎ ইলেকট্রিক ভেহিকেল (EV) কেনার দিকেই ঝুঁকছেন। ভারতেও সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবর্তনগুলি মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV) এর ক্রমবর্ধমান ব্যাপ্তি নজরে পড়েছে। দূষণ কমাতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার তাগিদে বৈদ্যুতিক যানবাহন বিক্রির উদ্দেশ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা গ্রাহকদের জন্য আরও সাশ্রয়ী এবং অ্যাক্সেসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠেছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার গ্রাহকদের উৎসাহ দিতে ভর্তুকির সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এই গাড়ি কিনলে ভর্তুকি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পেয়ে যান গ্রাহকরা। নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে এই সুবিধে নিতে আবেদন করতে পারবেন যে কেউ। পরিবেশ-বান্ধব এবং শব্দমুক্ত, এই যানবাহনগুলি পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়িগুলির বিকল্প হয়ে উঠছে সময়ের হাত ধরে।

গাড়ি কিনতে চাইলে ২ চাকা, ৩ চাকা বা ৪ চাকার জন্য ভর্তুকি (Electric Vehicle Subsidy) দেবে সরকার। বর্তমানে দেশের অনেক মানুষেরই তাদের কাজের প্রয়োজনে ২ চাকা বা ৪ চাকার গাড়ির প্রয়োজন। আবার অনেকেই আছেন যারা শখে বাইক, গাড়ি কিনে থাকেন। তবে, সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ধরনের প্রযুক্তির প্রাধান্যও বাড়ছে।

প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য

অত্যাধিক পরিমানে পেট্রোল ও ডিজেল ব্যবহৃত বাইক ও চার চাকার গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় দূষণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আর তাই দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের দিকেই নজর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। পেট্রোল ও ডিজেল চালিত গাড়ির চাইতে পরিবেশের জন্য অনেক ভালো এই দূষণ মুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়ি।

তাই একপ্রকার দেশকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দেশবাসীকে গাড়ি কেনার স্বপ্নপূরণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে এসেছে নতুন একটি স্কিম। এই স্কিমটির নাম EPMS Scheme বা Electric Mobility Promotion Scheme Or EMPS Scheme 2024.

পেট্রোল ও ডিজেল চালিত যানবাহন বেশি ব্যবহার দেখা গেলেও বর্তমানে বিদ্যুত চালিত বা ব্যাটারি চালিত যানবাহনের আধিপত্য বাড়ছে। বলা ভালো, বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো পরিবেশ রক্ষার জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। এই গাড়ি গুলো তার মালিককে প্রতি মাসে পেট্রোল এবং ডিজেলের বড় অংকের খরচ থেকেও বাঁচায়। তবে, অনেক সময় বৈদ্যুতিক চালিত গাড়ির দাম বেশি মনে করে গ্রাহকরা গাড়ি কিনতে গিয়েও পিছিয়ে যান। তবে এবার সরকারি ভর্তুকি মিলবে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে। কীভাবে মিলবে এই ভর্তুকি জেনে নিন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে ভর্তুকি

সারা দেশের জনগণকে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য উৎসাহ দিতে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগটিকে ইলেকট্রিক মোবিলিটি প্রমোশন স্কিম নাম দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকেরা স্কুটার, গাড়ি, বাইক ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রে ছাড় পেতে এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারেন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা

  • বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হওয়ার কারণে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম বাড়লেও গ্রাহকের সমস্যা নেই।
  • বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবেশের জন্যও খুবই কার্যকর। এই গাড়িতে মোটেও পরিবেশে দূষণ হয় না।
  • এই গাড়ি অনেকবেশি ব্যবহারের ফলে সারা দেশে জ্বালানি খরচ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এরফলে জ্বালানী তেলের দামও কমবে।

বৈদ্যুতিক যানবাহন ভর্তুকি প্রকল্প

১) বৈদ্যুতিক যানবাহন ভর্তুকি প্রকল্পের অধীনে ২ চাকার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমান দেওয়া হচ্ছে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত ।

২) ই-রিক্সার মতো ছোটো ৩ চাকার গাড়ি কেনার জন্য ২৫০০০ টাকার পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে।

৩) চার চাকার জন্য ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি মিলবে, তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী প্রযোজ্য।

যে সমস্ত আবেদনকারীরা ইলেকট্রনিক গাড়ি কিনতে চান, তাঁদের ইভি যানবাহন সংস্থাগুলোতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করালে, তবেই এই ভর্তুকির সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে গ্রাহককে অবশ্যই ইলেকট্রনিক গাড়ি কেনার সময় প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের অনেক বেশি সুবিধা মিলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বৈদ্যুতিক যানবাহনের ভর্তুকির জন্য কীভাবে আবেদন করবেন তার ধাপগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক

ধাপ ১: অফিসিয়াল ইভি ভর্তুকি পোর্টালটি দেখুন

ইভি ভর্তুকির জন্য আবেদন করার জন্য প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব ডেডিকেটেড পোর্টাল রয়েছে। কেন্দ্রীয় ভর্তুকির জন্য, আপনাকে ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত অফিসিয়াল FAME ইন্ডিয়া পোর্টালটি দেখতে হবে। রাজ্যের নির্দিষ্ট ভর্তুকির জন্য, আপনার রাজ্যের ইভি পোর্টালটি দেখতে হবে।

ধাপ ২: প্রাসঙ্গিক স্কিমটি বেছে নিন

আপনার যানবাহনের ধরণের জন্য প্রযোজ্য ভর্তুকি স্কিমটি নির্বাচন করুন তা বৈদ্যুতিক ২ চাকার গাড়ি, ৩ চাকার গাড়ি, ৪ চাকার গাড়ি বা বাস যাই হোক না কেন। আপনি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় ভর্তুকির জন্য বিকল্পগুলি খুঁজে পাবেন।

ধাপ ৩: আবেদনপত্র পূরণ করুন

আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর, আধার কার্ড বা ব্যবসার জন্য GST/PAN -সহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদনপত্রটি পূরণ করুন। আপনাকে আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং আপনার ফটো আইডির একটি কপির মতো নথিও আপলোড করতে হবে।

ধাপ ৪: আপনার নথি জমা দিন

সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন। প্রক্রিয়াকরণে কোনও বিলম্ব এড়াতে সেগুলি স্পষ্ট কিনা তা নিশ্চিত করুন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি ক্যানসেলড চেক বা পাসবুকের কপিও জমা দিতে হতে পারে।

ধাপ ৫: যাচাইকরণ প্রক্রিয়া

জমা দেওয়ার পরে, আপনার নথিগুলি কর্তৃপক্ষ যাচাই করবে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে, আপনার আবেদন প্রক্রিয়া গৃহীত হবে এবং আপনি আপনার ভর্তুকি সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাবেন।

ধাপ ৬: আপনার আবেদন ট্র্যাক করুন

আপনার আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে আপডেট থাকতে, প্রাসঙ্গিক রাজ্য EV পোর্টালে যান এবং আপনার আবেদন আইডি বা গাড়ির বিবরণ ব্যবহার করে আপনার আবেদন ট্র্যাক করুন।

EV ভর্তুকির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • বৈদ্যুতিক যানবাহন ভর্তুকির জন্য আবেদন করার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রস্তুত রাখতে হবে:
  • গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি জমা করবেন।
  • গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় স্বাক্ষরের অনুলিপি জমা করবেন।
  • ব্যক্তিগত আবেদনকারীদের জন্য আধার কার্ড অথবা ব্যবসার জন্য GST সার্টিফিকেট বা প্যান কার্ড দেখাতে হবে।
  • গাড়ি নিবন্ধন শংসাপত্র (RC)
  • ক্যানসেলড চেক বা পাসবুক ব্যাংক স্টেটমেন্টের জন্য জমা দিতে হবে

EV ভর্তুকির জন্য আবেদন করার সময় এড়াতে হবে এই সাধারণ ভুলগুলি

ভুল তথ্য: জমা দেওয়ার আগে সমস্ত বিবরণ দুবার পরীক্ষা করুন।

অনুপস্থিত নথি: নিশ্চিত করুন যে আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করেছেন।

বৈদ্যুতিক যানবাহন কেনার আগে এই বিষয়গুলি ভালো করে জেনে নিন

১. যে গাড়ি নেবেন তার অনুসন্ধান করবেন: বৈদ্যুতিক গাড়ির যে মডেলগুলো মিলছে সেগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করবেন। দেখবেন সেই গাড়ি এক বার চার্জ দিলে কত কিলোমিটার চলবে। এই গাড়ির জন্য শহরে বা শহরতলিতে চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামো কেমন রয়েছে। গাড়িটি নিতে হলে অন রোড দাম কত পড়বে। বিষয়গুলো ভাল করে যাচাই করে নিন।

২. প্রয়োজনীয়তা পর্যবেক্ষন: অনুমান করে নিন প্রতি মাসে কতটা পথ আপনি গাড়ি চালাবেন। সপ্তাহ বা মাসের হিসেব করে দেখে নিন কোন গাড়ি আপনার জন্য সাশ্রয়ী।

৩. ভর্তুকির বিষয়টি দেখে নিন: আপনার পছন্দের বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য সরকারি ভর্তুকি কত পাবেন, সেটা আগেভাগে জেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

৪. চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামো দেখে নিন: বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেখে নিন নিজের এলাকায় এবং সাধারণত যে পথে আপনাকে বেশি করে বের হতে হবে সেই রুটে চার্জ দেওয়ার সুবিধা রয়েছে কিনা। বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলেও, এ বিষয়টা যাচাই করে নেবেন।

৫. টেস্ট ড্রাইভ করে দেখে নেওয়া উচিত: গাড়ি কেনার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন যে কেনার আগে অবশ্যই এক বার টেস্ট ড্রাইভ নেওয়া উচিত। কারণ হল, টেস্ট ড্রাইভ করলেই ওই গাড়িতে চড়ার আরাম বা চালানোর সুবিধার মতো বিষয়গুলি সামনে আসবে।

গাড়ি কেনার পর প্রথম কাজ

সবার প্রথমে গাড়ি চার্জ করার একটা পয়েন্ট বাড়ির সুবিধা মত জায়গায় বানিয়ে নিন। বৈদ্যুতিক গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম হলেও, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখবেন এই গাড়ির ব্যাটারি খুব দামি হয়। তাই ব্যাটারির ওয়ারেন্টির শর্ত ঠিকমতো বুঝে কিনবেন।

যেহেতু বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রধান অংশ যেহেতু ব্যাটারি, তাই তার রক্ষনাবেক্ষণের জন্য টিপস জেনে নিন:

১. বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির আয়ু ঠিক রাখতে চেষ্টা করবেন ধীরে ধীরে আকসেলেরেটরে চাপ দিতে।

২. কোথাও যেতে গেলে চার্জ দেওয়ার জায়গা ঠিক করে নেওয়া দরকার: বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করলে, আগে দেখে নিন আপনার গাড়ি একবার চার্জ করলে কতটা পথ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যতটা পথ যেতে পারে, তার আগেই মনে করে যেন কোথাও চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার রুটে চার্জিং স্টেশন খুঁজতে গাড়ি কোম্পানির অ্যাপ কিন্তু আপনার উপকারে আসবে।

৩. অত্যধিক চার্জ মোটেও দিতে যাবেন না: মনে রাখা দরকার ব্যাটারি সব থেকে সার্ভিস দেয় মাঝারি চার্জের অবস্থায় রাখলে, বিশেষজ্ঞদের মতে ২০% থেকে ৮০% চার্জে ব্যাটারি অবস্থা ভাল থাকে। তাই ভুলেও সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখতে যাবেন না।

৫. ঠান্ডায় বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত: খুব ঠান্ডা ব্যাটারির পক্ষে ভাল না, বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকবেন। তাই শীতের সময় খুব ঠান্ডা পড়েছে মনে হলে, চেষ্টা করুন গাড়ি ঢেকে রাখতে বা গ্যারেজের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখতে।