সংক্ষিপ্ত

চলতি ২০২৪ সাল প্রায় শেষের পথে। 

এমনিতে গত বছর ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাত্র ৬ জন টাইকুন, অর্থাৎ অত্যন্ত ধনাঢ্য এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছিলেন তারা। যারা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ তৈরি করে আগের সব রেকর্ড কার্যত, ভেঙে দিয়েছিলেন। আর সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত ২রা এপ্রিল সর্বশেষ একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল।

সেখানে এই এক্সিকিউটিভ ক্লাবে এই বছর মোট ১৪জন জায়গা পাকা করে নেন। এই ১৪ জন হলেন শুধুমাত্র তারাই যাদের মোট সম্পদের মূল্য ডলারের হিসেবে অন্তত ১২ ডিজিটে গিয়ে ঠেকেছে। সেই লিস্ট অনুযায়ী, মেক্সিকান টাইকুন কার্লোস স্লিম, দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কিন্তু এতগুলো বছর তিনিও এই তথাকথিত "ওয়ান হান্ড্রেড বিলিয়নেয়ার" গ্রুপে প্রবেশ করতে পারেননি।

তার কারণ, সেই দেশের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, মাত্র অল্পের জন্য এই ক্লাবের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছিলেন তিনি সেই সময়। তবে এবার তিনি পেরেছেন। ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন অর্থাৎ জিডিপির দিকে তাকাতে হবে।

আর জিডিপি হল এমন বিষয়, যা একটি দেশে উৎপাদিত সমস্ত পণ্য এবং পরিষেবার সমষ্টি হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ, বোঝাই যায় যে, এই তালিকার একেকজন কোনও না কোনও দেশের জিডিপির সমান বা তারও বেশি সম্পদ নিয়ে বসে আছেন।

এই ১৪ জন ম্যাগনেটের অনেকের ব্যক্তিগত সম্পদ তো পানামা, উরুগুয়ে, কোস্টারিকা বা বলিভিয়ার মতো দেশের জিডিপিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফোর্বসের সিনিয়র এডিটর চেজ পিটারসন-উইথর্ন জানিয়েছেন, “এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের জন্য একটি আশ্চর্যজনক বছর ছিল। এমনকি, অনেকে যখন আর্থিক অনিশ্চয়তার সময় পেরিয়ে এসেছে, তখনও এই অতি-ধনীরা উন্নতি করে গেছেন।”

ফোর্বস জানিয়েছে, অভিজাতরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ধনী হবে এবং তাদের কাছে ১৪।২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ থাকবে। এই 'ফরটিন ক্লাব'-এর তালিকা উল্লেখ করা হচ্ছে, ফোর্বসের মতে যা এই গ্রহের টাইকুনদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র একটি গ্রুপ।

চলুন এক এক করে দেখে নেওয়া যাক, সেই তালিকায় কে কে আছে?

১. বার্নার্ড আর্নল্ট (ফ্রান্স)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ হল ২৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। আর্নল্টের সম্পদ ২০২৩ সালে, আগের বছরের তুলনায় ১০% বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেইসঙ্গে, তাঁর বিলাসবহুল ব্যবসা এলভিএমএইচ-এর জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।

তিনি লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর এবং সেফোরার মালিক।

২. ইলন মাস্ক (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ হল ১৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইলন মাস্ক বেশ কয়েকবার ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী’ খেতাব জিতেছেন এবং বেশ কয়েকবার শীর্ষস্থান থেকে আবার ছিটকেও গেছেন। আসলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের এই র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁর অবস্থান ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ার মূল কারণ হল, স্পেসএক্স, টেসলা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স হ্যান্ডল প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে।

৩. জেফ বেজোস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ হল ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।। অ্যামাজনের স্টক মার্কেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য বিদায়ী বছরে বেজোস আরও ধনী হয়েছেন।

৪. মার্ক জুকারবার্গ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদের পরিমাণ হল ১৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া মেটা ডিরেক্টরের জন্য গত বছর বেশ সমস্যায় জটিল ছিল। এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট শেয়ারের মূল্য ২০২১ সালে তার সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে এক লাফে প্রায় ৭৫% নেমে যায়। তা সত্ত্বেও গত বছরে আবার এই শেয়ারের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে।

৫. ল্যারি এলিসন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ হল ১৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকলের শেয়ার ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে। যা তাদের ভাগ্যের চাকা অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ল্যারি এলিসন কোম্পানির সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট পদে এখনও রয়ে গেছেন।

সেইসঙ্গে, তিনি এই কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তিবিদ এবং কর্মকর্তা সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার।

৬. ওয়ারেন বাফেট (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সফল একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত। তিনি মূলত বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে নামে একটি সিস্টেম পরিচালনা করেন। যার অধীনে বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। যেমন বীমা প্রতিষ্ঠান গেইকো, ব্যাটারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিউরাসেল এবং রেস্টুরেন্ট চেইন ডেইরি কুইন ইত্যাদি। বার্কশায়ারের শেয়ার রেকর্ড হারে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

৭. বিল গেটস (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদ হল ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই ২৩ বছর সময়ের মধ্যে ১৮ বার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা দখল করেছিলেন।

আর তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, ফোর্বস অনুযায়ী, প্রযুক্তিখাতে বেশ কঠিন প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেইসঙ্গে, ২০২১ সালে এক ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর অনুদানের জন্য বিল গেটস সেই তালিকা থেকে নেমে গেছেন।

৮. স্টিভ বলমার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডট-কম সমস্যার পর, মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বলমার ২০০০-২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ডট কম সংকট হল নব্বই দশকের শেষে প্রযুক্তির স্টক হঠাৎ বাড়তে শুরু করে, তখন অনেকে তাতে বিনিয়োগ করেন।

কিন্তু পরে আচমকাই এই স্টক হঠাৎ পড়েও যায়। যার প্রভাবে অনেক ডট কম রিলেটেড স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের ব্যবসার মূলধন খুইয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, অনেকেই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসে। স্টিভ বলমার অবশ্য সফলভাবেী এখন মাইক্রোসফট পরিচালনা করেছেন।

মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর, বলমার এনবিএ (ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন) এর লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স বাস্কেটবল দল কিনে নিয়েছিলেন, যার মান সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শুধুই বেড়ে চলেছে। আজ এটি এনবিএ-র পঞ্চম সবচেয়ে মূল্যবান দল।

৯. মুকেশ আম্বানি (ভারত)

তাঁর মোট সম্পদ হল ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আম্বানির সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর কোম্পানির এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিটি পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিযোগাযোগ, রিটেল এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোয় বিনিয়োগ করেছে।

১০. ল্যারি পেজ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ হল ১১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড সদস্য ল্যারি পেজ। সের্গেই ব্রিন এবং তিনি এই প্রযুক্তি জায়ান্টের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার হিসাবে রয়ে গেছেন এখনও।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।