ইংরেজি স্কুলের বেল ছেড়ে বাংলার পুরানো ক্লাসের ঘণ্টা শোনার সময় কোথায়? অ, আ,ক,খ এখন আর বর্ণ বলেই ভাবতে চায় না এক শ্রেণির মানুষ। তাঁদের কাছে যত শিক্ষা লুকিয়ে থাকে শুধু ABCDতে।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সালে নিজের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে রক্ত ঝরিয়ে ছিল হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু আজও সেই লড়াইয়ের দাম দিতে কি পারল বাঙালিরা? ভাষা দিবসের গর্ব এখন শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালেই সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বাংলা নিয়ে গদগদ পোস্ট করলেও ছেলে-মেয়েকে দামি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলেই পড়াতে চান বেশিরভাগ বাবা-মা। স্কুলে বাংলা থাকলেও ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজে জায়গা পায় হিন্দি, ইংরেজি। ছেলে বাংলা পড়তে বা বলতে পারে না বলে গর্ব বোধ করেন বাঙালিরা!
কিন্তু সত্যিই কি এই বাংলার প্রতি অনিহাটা গর্বের! না লজ্জার? নিজের মা-কে মা না বলে অন্যের মা-কে মা বলাটা কি সত্যিই অহঙ্কারের? এই নিয়ে আজও জোর তর্ক চলে বাংলার অন্দরেই। এদিকে যতই বাংলা গর্ব হোক না কেন, ছাত্রের অভাবে একেবারে বন্ধের মুখে শ'য়ে শ'য়ে বাংলা মিডিয়াম স্কুল। ছাত্ররা দলে দলে ভিড় করছে ইংরেজি শিক্ষায়। ইংরেজি স্কুলের বেল ছেড়ে বাংলার পুরানো ক্লাসের ঘণ্টা শোনার সময় কোথায়? অ, আ,ক,খ এখন আর বর্ণ বলেই ভাবতে চায় না এক শ্রেণির মানুষ। তাঁদের কাছে যত শিক্ষা লুকিয়ে থাকে শুধু ABCDতে।
কিন্তু নিজের ভাষা ছেড়ে বিদেশি ছাড়ার প্রতি এত টান জন্মালো বাঙালির?
ইংরেজদের ভারত দখলের পরে এক শ্রেণির বাঙালিরা নিজেদের ইংরেজদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় মেতে উঠেছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে সমান সমান হতে তখন বাড়ির প্রত্যেকে বিলেতি আদপ কায়দায়কেই আপন করে নেন। তারপর এই ইংরেজ ঘেঁষা সংস্কৃতি ও ইংরেজ তোষণের জন্যেই স্বাধীনতা পেতে সময় লেগে যায় ২০০ বছর। সেই ২০০ বছরের ছাপ এখনও ভুলতে পারছেন না এক শ্রেণির বাঙালিরা। তাঁদের আজও ধারনা সমাজে নিজেকে উচ্চতর প্রমাণ করতে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর তাঁদের কাছে বাংলা মানে" ন্যাকা ন্যাকা, অসহ্য ল্যাঙ্গুয়েজ"। তাই লালের জায়গায় রেড আর কালোর জায়গায় ব্ল্যাক বলতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর জন্য দায়ী অনেকটা আমার আপনার মতো সাধারণ বাঙালিরাই। যারা প্রথম দিন থেকে নামী কর্পোরেটে ছোঁড়া ইংরেজি প্রশ্নের বাংলায় উত্তর দিই নি বা ইংরেজি স্কুলে পড়ার সময় বাংলাকে অপশনাল করে রেখে দিয়েছি। যারা পাশে ঠিক করে ইংরেজি না বলতে পারা বন্ধুকে দেখে ঠাট্টা করি, হাসি। সামান্য ২ পাতা ইংরেজি বলতে পেরে নিজেকে উচ্চ শিক্ষিতের আসনে বসিয়ে দিয়েছি আমরা নিজেই।
কেউ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে একটা বাংলা কথায় চারটে ইংরেজি মিশিয়ে বললে তাঁকে ‘ট্যালেন্টেড’ তকমা দিয়ে ফেলি। নিজেদের দোষেই হারিয়ে যাচ্ছে নিজেদের গর্ব। আমরা বুঝতে পারি না নিজেদের ভাষা নিয়ে গর্ব করাটা আমাদের অহঙ্কার। এ শুধুই আমাদের। জন্মানোর সময় যতই বড় হাসপাতালে জন্মাই না কেন মাতৃভাষার জায়াগায় বাংলাই বসবে, আর মৃত্যুর সময় শেষ নিশ্বাসটাও বাংলার নামেই নেওয়া হবে। তাই আজ বাঙালিদের কাছে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজের তকমা পেলেও চিরকাল শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকবে “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা”
