সংক্ষিপ্ত

 

  • গড়বেতা বিধানসভা ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে
  • ২০১৬-তে তৃণমূল জিতেছিল
  •  ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি
  • দাপুটে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষের খাসতালুক ছিল 

সমিকা মাইতি, প্রতিনিধি, গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। গড়বেতা ১ ব্লক ছাড়াও গড়বেতা ২ ব্লকের আমলাশুলি, জোগাড়ডাঙা, পিয়াশালা, সার্বথ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এই কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজেপি-র হয়ে লড়ছেন মদন রুইদাস, তৃণমূলের প্রার্থী উত্তরা সিংহ(হাজরা), সিপিএমের তপন ঘোষ। 
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২২২৮৯৩। ভোট পড়েছিল ১৯৫১৩৩। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৯১৩২৮টি (৪৬.৮) ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সোরেন পেয়েছিলেন ৮৪৫১৭টি ভোট। সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম পেয়েছিলেন ১০৩৪৩টি ভোট।
২০১৬ সালে তৃণমূল এই বিধানসভা কেন্দ্র দখল করলেও তার আগে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় রাজত্ব চালিয়েছে বামেরা। এমনকী ২০১১ সালেও প্রাক্তন সিপিএম মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ এই আসনে জিতেছিলেন। ২০১১-র জুন মাসে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ালে হাজতবাস হয়। পরে জামিন পেলেও এলাকায় ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল এত দিন। গত ডিসেম্বরে তিনি এলাকায় ঢোকার অনুমতি পান। সুশান্ত এবার শালবনি থেকে সিপিএমের হয়ে লড়ছেন, আর গড়বেতা থেকে লড়ছেন একসময়ের আর এক দাপুটে নেতা তপন ঘোষ। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের এই ‘অত্যাচারী মুখ’গুলোকে সাধারণ মানুষ ঘৃণা করে। ২ মে ভোটের ফল প্রকাশের পর সবুজ আবীরে ঢেকে যাবে গড়বেতা। অন্য দিকে, বিজেপি-র আশা, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ধারাকে এগিয়ে শেষ হাসি হাসবে তারাই। গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে উঠবে একসময়ের লালদুর্গ।    
 


গড়বেতা বিধানসভা আসনে কে-কত বার জয়ী

গড়বেতা আসনটি ১৯৬৭-২০০৬ পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ ছিল। 
১৯৬৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত হয় সিপিআই, নয় সিপিআই(এম) রাজত্ব করেছে এই দুই আসনে।
আট বারের বিধায়ক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে, ছয় বারের বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ।
২০১৬-তে তৃণমূল জেতে, ২০১৯-এ বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি।

 

১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনে গড়বেতা আসনটিতে জয়ী হন সিপিআই প্রার্থী সরোজ রায়। ১৯৫৭ সালে এই আসনটি দু’ভাগে ভাগ হওয়ার পর একটিতে সিপিআইয়ের তরফে সরোজবাবু ও অন্যটিতে কংগ্রেসের তরফে তুষার টুডু জেতেন। ১৯৬২-তে আবার একটিই আসন হয় এবং কংগ্রেসের হয়ে তুষারবাবু জেতেন। 
এরপর ১৯৬৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গড়বেতা আসনটি পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ ছিল।
গড়বেতা পশ্চিমে ১৯৬৭ সালে কংগ্রেসের হয়ে জেতেন পি সিংহরায়। এরপর পরপর তিন দশা ১৯৬৯-৭১-৭২-এ সিপিআইয়ের সরোজবাবু এই আসন থেকে জেতেন। ১৯৭৭ সালে সিপিআই প্রার্থী কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে গড়বেতা পশ্চিম থেকে লড়েন। এর আগে তিনি গড়বেতা পূর্ব আসনটি থেকে পরপর তিন বার (৬৯,৭১, ৭২) জিতেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমের আসনে সিপিআই(এম)-এর সন্তোষ বিশুই তাঁকে হারিয়ে দেন সেবার। ১৯৮২ সালে গড়বেতা পশ্চিম থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী অনাদি মল্লা কংগ্রেসের মদনমোহন গুড়িয়াকে হারিয়ে দেন। এরপর পরপর পাঁচ দফায় সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে (১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬) গড়বেতা পশ্চিম আসনটি থেকে বিধানসভা ভোটে জেতেন কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে।   
গড়বেতা পূর্ব আসনটিও বেশিরভাগ সময়ই সিপিআই(এম)-এর দখলে থেকেছে। ১৯৬৭ সালে জেতেন কংগ্রেসের কে কে চলক। ১৯৬৯, ৭১ ও ৭২ সালে এই আসনে জিতেছিলেন সিপিআই প্রার্থী কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে। তারপর দু’দফায় (১৯৭৭ ও ৮২) সিপিআই(এম) এর শুভেন্দু মণ্ডল এই আসন থেকে জেতেন। ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালে পরপর এই আসন থেকে জিতেছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিআই(এম) নেতা সুশান্ত ঘোষ। 

২০১১ সালে গড়বেতা পূর্ব ও পশ্চিম আসনটি ফের জুড়ে গিয়ে একটা হয়ে যায় এবং সেবারও সিপিআই(এম) প্রার্থী সুশান্ত ঘোষ ৮৬,০৪৭ ভোট পেয়ে কংগ্রেস প্রার্থী হেমা চৌবেকে (৭০,৯৭৭) হারিয়ে দেন। ২০১৬ সালে অবশেষে গড়বেতা আসন থেকে লাল রঙ মুছে দিতে সক্ষম হয় তৃণমূল। কিন্তু ২০১৯-এর ভোটে দেখা যায় বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম এই আসন থেকে ‘লিড’ পেয়েছেন।