দেড় বছর ধরে চলছে করোনা মহামারিদেড় বছরে শহিদ প্রায় ১৫০০ চিকিৎসকজানালো ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনএই শহিদদের নামেও কি হবে কোনও স্মারকস্তম্ভ
প্রায় দেড় বছর হতে চলল ভারতে চলছে করোনাভাইরাস মহামারি। আর এই দেড় বছরে শহিদ হয়েছেন দেশের ১৫০০-রও বেশি বিশিষ্ট চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ভারতের জাতীয় চিকিত্সক দিবস। আর এই উপলক্ষে সেই ১৫০০ শহিদকে স্মরণ করল ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ (IMA)। এই বিশেষ দিনে তারা শুধু ডাক্তার নয়, করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অন্যান্য পেশায় থাকা ব্যক্তিদের 'অতুলনীয় সেবা'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে এই সংগঠন। তারা জানিয়েছে, এই বছরের চিকিত্সক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য 'সেভ দ্য সেভিয়ার্স' , অর্থাৎ 'রক্ষাকর্তাদের রক্ষা করুন'।
দিন দুয়েক আগেই আইএমএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোভিড মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় প্রায় ৭৯৮ জন চিকিৎসক শহিদ হয়েছেন। গত এপ্রিল-মে মাসে ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল এই মহামারি। গোটা দেশজুড়ে ব্যাপক চাপ পড়েছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে। সেই সময়, নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা দিতে গিয়েই এই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন। এর মধ্যে সবথেকে বেশি ডাক্তারের মৃত্যু হয়েছে দিল্লিতে। রাজধানীর বাসিন্দাদের রক্ষ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন ১২৮ জন চিকিৎসক। এরপরই রয়েছে বিহার। দ্বিতীয় তরঙ্গের বলি হয়েছেন সেই রাজ্যের ১১৪ জন চিকিৎসক। একই সময়ে উত্তরপ্রদেশে শহিদ হয়েছিলেন ৭৯ জন। কোভিড মহামারির প্রথম তরঙ্গ চলাকালীন মৃত্যু হয়েছিল ৭৪৮ জন চিকিৎসকের।
এই মহামারির সময়ে ভারতকে হারাতে হয়েছে বেশ কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য ডাক্তারবাবুকেও। দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় টিকা নিয়েও কোভিড -১৯-এ মৃত্যু হয়েছে পদ্মশ্রী পুরষ্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কে কে আগরওয়ালের। একসময় তিনি ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জাতী সভাপতি ছিলেন। করোনা মহামারির শুরু থেকে এই মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। মৃত্য়ু হয়েছে বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞ পদ্মশ্রী ডাক্তার অশোক পানাগারিয়া'রও। কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলেও, কোভিড পরবর্তী জটিলতা কেড়ে নিয়েছে তাঁকে।
তবে শুধু সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারই নয়, এই মহা বিপর্যয়ের সময়ে ডাক্তার-নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা কর্মীরা যেভাবে কোনও ছুটি ছাড়াই, একটানা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন, তাও অবিস্মরণীয়। বহু চিকিৎসক নিজেরা কোভিড-মুক্ত হতে পারলেও হারিয়েছেন নিকটাত্মীয়দের। তারপরও থামেননি তাঁরা, দেশকে রক্ষায় ফের ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মানসিক আঘাত সহ্য করেও লড়াই করে গিয়েছেন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে।
এই অবস্থায় ডাক্তার দিবসে সোশ্য়াল মিডিয়ায় অনেকেই এই ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসাকর্মীদের সম্মান জানানোর জন্য এই অনন্য প্রস্তাব তুলেছেন। কোনও যুদ্ধের পর দেশের শহিদ সেনানিদের স্মরণে স্মারকস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। করোনা যুদ্ধ শেষ হলে, এইসব শহিদ চিকিৎসা পরিষেবাদানকারীদের স্মরণেও একটি স্মারক স্তম্ভ স্থাপন করা হোক, এমনটাই চাইছেন নেটিজেনদের একাংশ।
