সংক্ষিপ্ত
অনেকেই বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের (Novel Coronavirus) নয়া রূপ ওমিক্রন (Omicron) আসলে একটি 'প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন' (Natural Vaccine)। সত্যিই কি তাই, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
নভেল করোনাভাইরাসের (Novel Coronavirus) নয়া রূপ ওমিক্রন (Omicron) গোটা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ মহামারির তৃতীয় তরঙ্গকে (COVID-19 Pandemic Third Wave) জাগিয়ে তুলেছে। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক (Union Health Ministry) জানিয়েছে, ভারতের মোট ২৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই রূপান্তর। এরই মধ্যে গোটা বিশ্বজুড়েই একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে, ওমিক্রন আসলে একটি 'প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন' (Natural Vaccine)। সত্যিই কি তাই? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন -
কোভিড-১৯'এর ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট, কোভিডের অন্যান্য রূপান্তরগুলির তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। তবে এর সংক্রমণ থেকে অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই হালকা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা এবং মৃত্যুর পরিমাণ অনেকটাই কম। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই অনেকেই দাবি করছেন, করোনা মহামারির ক্ষেত্রে ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি, মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) এক স্বাস্থ্য আধিকারিকও এমন দাবি করেছেন। তবে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিল (Shahid Jameel) কিন্তু, এই মতের সঙ্গে একেবারেই সহমত নন। বরং তিনি বলেছেন, ওমিক্রন যে একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন, এই ধারণাটি আসলে কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি বিপজ্জনক ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্লান্তিই একটা আত্মতুষ্টির জন্ম দিয়েছে। এই সময়ে উপলব্ধ প্রমাণের বদলে অনেকেই এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বসে থাকছেন। ইনসাকগের (INASACOG) উপদেষ্টা গোষ্ঠীর প্রাক্তন প্রধান জামিল বলেছেন, যারা বলছেন ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক টিকা, তাঁরা 'দীর্ঘমেয়াদি কোভিড' সমস্যার কথা বিবেচনা করছেন না। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে এর আগে দেখা গিয়েছে, সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার ৬ মাস পরেও, কারোর কারোর ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং কিডনির মতো অজ্ঞে খুব হালকা সংক্রমণ থেকে যায়। ওমিক্রনের দীর্ঘমেয়াদী কী প্রভাব পড়তে পারে, এখনও জানা নেই। দীর্ঘমেয়াদি কোভিড রোগীদের অনেককেই ব্রেন ফগিং (Brain Fogging), ইনএপ্রোপ্রিয়েট সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়ার (Inappropriate Sinus Tachycardia) মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের (Public Health Foundation of India) অধ্যাপক এবং লাইফকোর্স এপিডেমিওলজির (Lifecourse Epidemiology) প্রধান গিরিধারা আর বাবু (Giridhara R Babu) বলেছেন, বিশেষ করে ভারতে, যেখানে জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপুষ্টি, বায়ু দূষণ এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা ব্যাপকভাবে রয়েছে, স্বেচ্ছায় তাদের এমন স্বল্পজানা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে দেওয়াটা আর যাই হোক বিজ্ঞানসম্মত নয়। ওমিক্রন যতই হালকা হোক, এটি কোনো ভ্যাকসিন নয়। এটি ভাইরাস। এর থেকে অল্প সংখ্যক হলেও, বেশ কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, আইসিইউ বেড লেগেছে এবং এই রূপান্তরের কারণে কারোর কারোর মৃত্যুও ঘটছে। কাজেই এই ধরণের ভুল তথ্য থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন ভাইরাস ও মহামারি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে টিকাদানের বিকল্প, প্রাকৃতিক সংক্রমণ হতে পারে না।
তবে, লখনউ-এর রিজেন্সি হেলথ হাসপাতালের (Regency Health, Lucknow) ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রদান যশ জাভেরির (Yash Javeri) মতে, ওমিক্রনের উচ্চতর সংক্রামকতা এবং কম তীব্রতা মহামারীকে থামাতে সাহায্য করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ শুধুমাত্র এই রূপান্তরের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে না, বরং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (Delta Variant) বিরুদ্ধে উচ্চতর সুরক্ষা প্রদান করে। কম তীব্রতার সঙ্গে এর উচ্চতর সংক্রামকতার কারণে, ওমিক্রন গোষ্ঠী অনাক্রম্যতার হার আরও বেশি বাড়াতে পারে। ফলে ওমিক্রন কোভিড মহামারির অবসান ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। তবে, তাই বলে, কোভিডের বিরুদ্ধে যে যে প্রতিরোধক ব্যবস্থা রয়েছে, তা তুলে দিলে চলবে না।