সংক্ষিপ্ত
ভিনরাজ্য থেকে চারদিন হেঁটে গ্রামে ফিরেছেন ওরা
কিন্তু তারপর থেকে বলতে গেলে অনাহারেই দিন কাটছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে
নেই সঠিক শোওয়া বা পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থাও
সবটাই নাকি পঞ্চায়েত প্রধানের কল্যানে
করোনাভাইরাস না খিদে - কিসের জ্বালায় মৃত্য়ু আসবে, এখন সেই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের পিম্পরি-শদিপুর গ্রামের ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। ২৪ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন হয়ো যাওয়ার পর এঁরা সকলেই মুম্বই থেকে ৪ দিন ধরে ১৪০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গ্রামে ফিরেছিলেন। তারপর থেকে তাঁদের গ্রামের স্কুলে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু, সেখানে তাঁদের না আছে খাওয়ার ব্যবস্থা, না আছে থাকার বন্দোবস্ত। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা? ২০ জনের ভাগ্যে জুটেছে ১টি বালতি, আর ১টি ডেটল সাবান, যা তাঁরা মাঝখান থেকে কেটে ২টো বানিয়েছেন।
তাঁদের অভিযোগ তাঁরা গ্রামে এসে পৌঁছনোর পর গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তথা বিজেপি নেতা ওমপ্রকাশ ভার্মা ২০ জনের জন্য ৫ কিলো চাল, ২ কিলো আলু এবং ২৫০ গ্রাম সর্ষের তেল রেশন হিসাবে দিয়েছিলেন। কিন্ত বলেছিলেন, গ্যাস সিলিন্ডার নেই, তাদের স্কুলের আশপাশ থেকে কাঠ কুড়িয়ে রান্না করে নিতে হবে। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের চোখে পড়ে যায়, রেশন ঘরে দুটি এলপিজি সিলিন্ডার রাখা আছে। সেই কথা তুললে পঞ্চায়েত প্রধান তাদের দেওয়া রেশনটুকুও কেড়ে নেন বলে অভিযোগ।
শুধু তাই নয়, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যাতে তাঁরা মেনে চলতে পারেন, তারও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ওই স্কুলে তিনটি শৌচাগার থাকলেও তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১টি। একেবারে শুরুতে যখন প্রসাসনিক কর্তারা এসেছিলেন, তখন তাঁদের একটিমাত্র বালতি ও একটি ডেটল সাবান দেওয়া হয়েছিল। সেই সাবানি তারা দুই ভাগ করে নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। সেইসঙ্গে স্কুলে আরও অনেকগুলি ঘর তালাবন্ধ থাকলেও তাঁদের থাকার জন্য একটি ছোট্ট ঘর খুলে দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়নি শোওয়ার জন্য কোনও বালিস-তোশকও।
এই অবস্থায় তাঁরা গ্রামে নিজেদের বাড়ির লোককে দিয়ে বালিস-তোষক আনাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে শোওয়ার জন্য সরকার যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজার রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তা তাদের পক্ষে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। খাবার দাবার-ও দুইবেলা তাঁদের বাড়ির লোকেরাই দিয়ে যাচ্ছেন, যা কোরারেন্টাইন সেন্টারে হওয়ারই কথা নয়। পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, এই পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন নিজেদের বাড়ি থেকে আনানো খাবার খাচ্ছেন, বা বাড়ির দেওয়া তোষকে ঘুমোতে যাচ্ছে, ওমপ্রকাশ সেই দৃশ্য তাঁর মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করে তা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দাবি করছেন, তাদের সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে সরকারের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকরা অভিযোগ জানালে, তারা লকডাউন বিধি ভাঙছেন বলে পুলিশে রিপোর্ট করার হুমকিও দিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান।
পঞ্চায়েত প্রদানের অবশ্য দাবি, এই কোনও অভিযোগই সত্যি নয়। তিনি তাঁদের নিজেদের রান্না করে খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা নাকি কেউ রান্না করতে জানেন না হলে, রান্না করতে পারেননি। গ্রামের কেউ তাদের জন্য রান্না করে দিতেো রাদি নন, কারণ তাঁরা নিম্নবর্গীয় হিন্দু, নয়তো মুসলমান। আর পরিচ্ছন্নতা বা শোওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর সাফাই পঞ্চায়েত দপ্তরে তিনি অনেক আর্জি জানিয়েছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সাহায্য মিলছে না।
লকডাউন ভেঙে বিপাকে স্বয়ং রাহুল-প্রিয়ঙ্কা, সত্যিই কি তাই, দেখুন ভাইরাল ভিডিও
১৪ এপ্রিলের পর জোড়া কৌশলে চলবে করোনা-যুদ্ধ, জেনে নিন মোদী সরকারের পরিকল্পনা
আসছে মোদী সরকারের দ্বিতীয় করোনা আর্থিক প্যাকেজ, এবার পরিমাণ কয়েক লক্ষ কোটি টাকার
এদিকে সীতাপুরের জেলাশাসক পরিষ্কার দায় চাপাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত পরিকাঠামোর উপর। তিনি বলেন, 'আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, তবে গ্রামপ্রধান ও গ্রাম পঞ্চায়েতের স্তরে অনিয়ম ও গাফিলতি রয়েছে'। তবে তিনি বিষয়টি দেখভালের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লক উন্নয়ন অফিসারকে গ্রামে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।
অনিয়ম ও গফিলতির এই অভিযোগের পাশাপাশি পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগও রয়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁর দুই আত্মীয়ও সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফিরেছেন। তাঁদের কিন্তু বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়নি। তাঁরা গ্রামের মধ্য়ে দিব্বি ঘুরে বেরাচ্ছেন। আর এই চিত্র শুধু একি গ্রাম বা জেলার নয়, উত্তরপ্রদেশের বিবিন্ন জেলার গ্রামে গ্রামে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে।