সংক্ষিপ্ত

বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের (Omicron) আতঙ্ক। রবিবার, সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে যে  দেশগুলি থেকে, সেগুলি থেকে আগত যাত্রীদের জন্য নতুন কোভিড নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক (Union Health Ministry)।
 

'অ্যাট রিস্ক' দেশ (At Risk Countries) অর্থাৎ যে দেশগুলি থেকে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট (New Corona Variant) ভারতে সংক্রামিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেই দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীরা, আরটি-পিসিআর কোভিড পরীক্ষা (RT-PCR Covid Test) করে তার ফলাফল না আসা পর্যন্ত বিমানবন্দর ছাড়তেই পারবেন না। এমনকী অন্য কোনও কানেক্টিং ফ্লাইট ধরারও সুযোগ পাবেন না তাঁরা। কোভিড-১৯'এর নতুন ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের (Omicron) আবির্ভাবে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর, রবিবার (২৮ নভেম্বর) এমনই কড়া সিদ্ধান্ত নিল ভারত। 

গত ২৬ নভেম্বরই এই 'অ্যাট রিস্ক' দেশগুলির তালিকা আপডেট করেছে ভারত সরকার। এই তালিকায় রয়েছে ইউরোপিয় ইউনিয়নের সমস্ত দেশ, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, চিন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবোয়ে , সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইসরাইল। এই দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ভারতে প্রবেশের সময় অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই দেশগুলি ছাড়া, অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা ছাড়াই বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে, এঁদের মধ্যেও, যে কোনও ৫ শতাংশ যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হবে বিমানবন্দরে, এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক (Union Health Ministry)।

আরও পড়ুন - Omicron: চিনের চাপে কাত WHO, কেন 'ন্যু'-এর বদলে নতুন ভেরিয়েন্টের নাম 'ওমিক্রন'

আরও পড়ুন - Covid-19 Restrictions: ওমিক্রন আতঙ্কে নতুন করে ১০ দফা বিধিনিষেধ, ফের কি লকডাউনের পথে কর্ণাটক

আরও পড়ুন - Omicron: ওমিক্রন নিয়ে আশঙ্ক করা চিকিৎসকের উল্টো সুর, জানালেন রোগের লক্ষণগুলি

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি উড়ান থেকে সেই ৫ শতাংশ যাত্রীকে চিহ্নিত করবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলি। এর মধ্যে যতটা সম্ভব ভিন্ন ভিন্ন দেশের যাত্রীদের নাম রাখা হবে। এই যাত্রীরা, বিমান থেকে নামার পর, সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থা বা অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক (Ministry of Civil Aviation) তাদেরকে করোনা আরটিপিসিআর টেস্টের পরীক্ষার জায়গায় নিয়ে যাবে। এই পরীক্ষার খরচ বহন করবে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকই। এই নির্দেশিকা ১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত জারি থাকবে। এই নতুন নির্দেশিকার ফলে ১১ নভেম্বর বা তার পরে জারি করা নির্দেশিকাগুলির আর কোনও মূল্য থাকল না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, 'অ্যাট রিস্ক' তালিকাভুক্ত দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের, বিমান ধরার আগেই এয়ারলাইন্সগুলির পক্ষ থেকে, ওমিক্রণ সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ভারতে নামার পর তাদের যে কঠোর কোভিড প্রোটোকল মানতে হবে, সেই সম্পর্কে জানিয়ে দেবে। এতে করে ভারতে আসার পর কেউ কোভিড প্রোটোকল মানার বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস বা ট্রাভেল এজেন্সিগুলি, যাত্রীদের টিকিটের সঙ্গেই নতুন কোভিড নির্দেশিকা অনুযায়ী কী কী করা যাবে, আর কী কী করা যাবে না - তা বিশদে জানিয়ে দেবে। 

এই যাত্রীদের কোভিড প্রোটকল শুরু হবে যাত্রার আগে থেকেই। উড়ানের নির্ধারিত সময়ের আগের ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাঁদের প্রথম আরটি-পিসিআর কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। যাত্রার আগে 'এয়ার সুবিধা' পোর্টালে (Air Subidha Portal) সেই নেতিবাচক রিপোর্ট আপলোড করে, নিজেকে সুস্থ বলে ঘোষণা করতে হবে। ফ্লাইটে ওঠার আগে আবার তাদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। শুধুমাত্র উপসর্গহীন যাত্রীরাই বিমানে ওঠার অনুমতি পাবেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সব যাত্রীদের আরোগ্য সেতু অ্যাপ (Arogya Setu App) ডাউনলোড করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ভারতে আসার পরই তাদের দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষা হবে। এর জন্য তাঁদের নমুনা জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে সেই পরীক্ষার ফলাফলের জন্য। পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলে, তাঁরা কানেক্টিং বিমানে উঠতে পারবেন। আর বিমানবন্দর ছেড়ে শহরে প্রবেশ করলে, তাঁদের ৭ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। অষ্টম দিনে তাঁদের আবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। সেইবারও ফল নেতিবাচক হলে, পরের সাত দিনের তাঁদের নিজেদেরই স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। 

আর যদি, বিমানবন্দরের কোভিড পরীক্ষার ফল ইতিবাচক আসে, তাহলে তাদের নমুনা ইনসাকগ ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্কে (INSACOG Laboratory Network) পাঠানো হবে জিনোমিক পরীক্ষার জন্য। তাদের আলাদা আইসোলেশন পরিষেবায় নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর তাদের কনট্যাক্ট ট্রেসিং-সহ অন্যান্য নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল অনুসরণ করা হবে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিত্সা পরিষেবাও দেওয়া হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন তাদের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে আসার আগের এবং পরের - কোনও কোভিড পরীক্ষাই করতে হবে না। তবে, আসার পথে বা হোম কোয়ারেন্টাইনের থাকাকালীন যদি তাদের দেহে কোভিড-১৯'এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়, সেই ক্ষেত্রে তাদেরও পরীক্ষা করা হবে এবং নির্ধারিত প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিত্সা করা হবে।

যেই ব্যক্তি কোভিড ইতিবাচক বলে সনাক্ত হবেন, তাঁর সঙ্গে একই সারিতে বসা ব্যক্তিদের এবং সামনের তিন সারি এবং পিছনের তিন সারিতে বসা ব্যক্তিদের এবং কেবিন ক্রুদের আলাদা করে কোয়ারেন্টাইন করা হবে। এছাড়াও, হোম কোয়ারেন্টাইনে তাকাকালীন পজিটিভ সনাক্ত হওয়া যাত্রীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে এবং আইসিএমআর (ICMR)-এর প্রোটোকল অনুসারে পরীক্ষা করা হবে।