সংক্ষিপ্ত

  • দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছে
  • এসএসকেএম-এ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন স্বামী
  • লকডাউনে পোর্ট ব্লেয়ারে আটকে স্ত্রী ও সন্তান
  • দেখা হবে তো? বাড়ছে উৎকণ্ঠা
লকডাউনের শহরে 'গভীর অসুখ'। বিপদের সময়ে মুখ ফিরেছেন ছোট ভাই, এমনকী বাবা-মাও। স্ত্রী ও সন্তানের থেকে বহু দূরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন প্রৌঢ়। অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বেহালায়, বারিকপাড়া রোডে।

আরও পড়ুুন: মেয়ে মারা গিয়েছে বিহারে, বাংলায় লকডাউনে আটকে দিনমজুর মা

অভিজিৎ সরকার। সপরিবারে থাকেন আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে। তবে শিকড় কিন্তু কলকাতাতেই। বেহালায় ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারিকপাড়া রোডে পৈতৃক বাড়ি অভিজিতের। সেই বাড়িতে ছোট ছেলের পরিবারের সঙ্গে থাকেন বৃদ্ধ বাবা-মা। স্ত্রী শম্পা জানিয়েছেন, কিডনির অসুখের চিকিৎসা করাতে ১১ মার্চ একাই কলকাতায় আসেন তাঁর স্বামী। কিন্তু পারিবারিক  বিবাদের কারণে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি দেওর অরিজিৎ। বড়ছেলের পাশে দাঁড়াননি শ্বশুরমশাইও। বাধ্য হয়ে অভিজিৎকে আশ্রয় নিতে হয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনিই গুরুতর অসুস্থ ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ততদিনে দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে ডায়ালেসিস চালু করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন অভিজিৎ। 


 
আরও পড়ুন: রাজ্য়ে নিজামুদ্দিন ফেরতদের সংস্পর্শে এসেছিলেন টলিউড অভিনেত্র্রীর বাবা!

আরও পড়ুন: অশীতিপর বৃদ্ধের ডাকে সাহায্য করতে ছুটল পুলিশ, প্রাক্তন অধ্যাপক এগিয়ে দিলেন চেক করোনা -তহবিলে

হাসপাতালে তখন রোগীর চিকিৎসা চলছে। করোনা সতর্কতায় দেশজুড়ে জারি হয়ে যায় লকডাউন। বেহালার বাড়িতে অভিজিৎ ও অরিজিতের সঙ্গে বড় হয়েছেন তাঁদের এক তুতো ভাই দীপাঞ্জন দাস। তিনি পাকাপাকিভাবে এখন থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ফোনে দীপাঞ্জন জানিয়েছেন, 'লকডাউন জারি হওয়ার পর বড়দা-কে আর হাসপাতালে রাখতে রাজি হয়নি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। শ্যালক দুর্গাপুরে নিয়ে গিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করে।' বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে শেষপর্যন্ত অবশ্য অভিজিৎ-কে আবারও ভর্তি করা হয় এসএসকেএম-এই। শারীরিক অবস্থা এখন রীতিমতো সংকটজনক, ডায়ালেসিস চলছে। 



এদিকে কলকাতায় যখন স্বামীর এই অবস্থা, তখন পোর্ট ব্লেয়ার বসে ছটফট করছেন অভিজিতের স্ত্রী শম্পা ও একমাত্র ছেলে সাগ্নিক। লকডাউন জারি হওয়ার আগেই চলে এসেছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু ছেলের পরীক্ষার কারণে পোর্ট ব্লেয়ারে থেকে গিয়েছিলেন শম্পা। কিন্তু এখন যে আসবেন, সে উপায়ও নেই।  লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই গৃহবধূ। তাঁর কাতর আর্জি, 'শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওর কোনও খোঁজ-খবর রাখে না। স্বামীকে দেখার মতো কেউ নেই। লকডাউনে আমার মতো যাঁরা বিপাকে পড়েছে, তাদের জন্য কি সরকার কিছুই করবে না?' স্ত্রীর সই ছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপনের তালিকায় অভিজিতের নামও ঢোকানো যাচ্ছে না। 

কী বলছেন অভিজিতের ভাই ও বাবা? পাড়া-প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন,লকডাউনের মাঝেও আগে যদিবা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোতেন, এখন নিজেদের পুরোপুরি ঘরবন্দি করে ফেলেছেন তাঁরা।  এমনকী, বাড়ির দরজা-জানলাও সর্বক্ষণই বন্ধ থাকে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও দু'জনের কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি।