সংক্ষিপ্ত

সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে আসানসোলের সেনরেলে রোড ও ভগত সিং মোড়ে মাস্ক অভিযানে নামে পুলিশ। ডিসি সেন্ট্রাল এস এস কুলদ্বীপের নেতৃত্বে মাস্ক অভিযান শুরু হয়। মাস্কহীন ৯০ জন শহরবাসীকে প্যান্ডেমিক আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাগাতার পুলিশের এই অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে।  

জেলায় ইতিমধ্যেই ৬০ হাজারের গণ্ডি পার হয়ে গিয়েছে করোনা (Corona)। জেলায় সক্রিয় করোনা রোগীর (Corona Active Patient) সংখ্যা ৩০০। কিন্তু, তারপরও একেবারেই সচেতন নন শহরবাসী। এখনও পর্যন্ত রাস্তায় অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক (Mask)। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস ও ট্রেন (Bus and Train) চালানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও কোথাও সেই নিয়ম একেবারেই মানা হচ্ছে না। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে আসানসোলের (Asansol) সেনরেলে রোড ও ভগত সিং মোড়ে মাস্ক অভিযানে (Mask Operation) নামে পুলিশ। ডিসি সেন্ট্রাল এস এস কুলদ্বীপের নেতৃত্বে মাস্ক অভিযান শুরু হয়। মাস্কহীন ৯০ জন শহরবাসীকে প্যান্ডেমিক আইনে (Pandemic Act) গ্রেফতার করা হয়েছে। লাগাতার পুলিশের এই অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে।  

গোটা বাংলার সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা। সোমবার রাতে জেলায় করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৬০ হাজারের গণ্ডি পার করেছে। সোমবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে নতুন করে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন আসানসোল ও অন্যজন জামুড়িয়ার বাসিন্দা বলে জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার মধ্যে বিশেষ করে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, এই গতি না কমলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর এরই মধ্যে আসানসোল পুরনিগমের ১০৬টি ওয়ার্ডের জন্য নির্বাচনী প্রচার চলছে।

আসানসোল জেলা হাসপাতালে মঙ্গলবার ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতাল সুপার ডাক্তার নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, "আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ জন চিকিৎসক ও আরটিপিসিআর (প্যাথলজিক্যাল) ল্যাবরেটরির দশ জন কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১১জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। সোমবার সেই ওয়ার্ডে ভর্তি ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ৯৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৭৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।"

আরও পড়ুন- তৃতীয় ডোজ হবে না 'মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ', কোভিশিল্ড না কোভ্যাক্সিন - কোনটা পাবেন

অন্যদিকে, বার্নপুরের ইস্কো বা আইএসপি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী সহ ১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আরটিপিসিআর পরীক্ষার পর শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। চিত্তরঞ্জন রেল শহরেও করোনার প্রকোপ নতুন করে দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন রেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে এদিন হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। চিত্তরঞ্জন লাগোয়া রুপনারায়ণপুরের অবস্থা যথেষ্ট চিন্তাজনক। এই এলাকায় পুলিশকর্মী থেকে শুরু করে হোটেল মালিক এবং সাধারণ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাঁরা সবাই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।

আরও পড়ুন- চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন, কতটা প্রস্তুত রাজ্যের হাসপাতাল

আসানসোলে রেল ডিভিশনাল হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আসানসোল দক্ষিণ থানা সহ বেশ কয়েকটি থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন গত চারদিনে। এছাড়া আসানসোলের হটন রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা এদিন বন্ধ রাখা হয়। ব্যাঙ্কের তরফে মঙ্গলবার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ম্যানেজার ও এক কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখা হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গত এক সপ্তাহের করোনা আক্রান্তর পরিসংখ্যানের বিচার করে জেলার দুই মহকুমা আসানসোল ও দুর্গাপুরের ২ পুর এলাকা ও ৮টি ব্লক ভিত্তিক জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। তা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, জেলার ৮টি ব্লকের মধ্যে ৫টি ব্লকের ৬টিগ্রাম পঞ্চায়েত করোনা আক্রান্তের বিচারে সংবেদনশীল এলাকা। তার মধ্যে কাঁকসা ব্লকে রয়েছে দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এছাড়া অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও সালানপুরের ১ টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত। আসানসোল পুরনিগমের ৫ টি ওয়ার্ড ও দুর্গাপুরের ৩ টি ওয়ার্ডকে "হাই কেস লোড" এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আসানসোল পুরনিগমের ১৮টি ওয়ার্ড ও দুর্গাপুর পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডকে সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ শেখ ইউনুস বলেন, "স্বাস্থ্য দফতরের তরফে করোনা আক্রান্ত হওয়ার একটা পরিসংখ্যান বিচার করে এলাকা চিহ্নিত করে তার তালিকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। তবে গোটা জেলার অবস্থা যথেষ্ট ভালো নয়। ব্যাপকহারে করোনা হচ্ছে। মানুষকে আমরা মাস্ক ব্যবহারের জন্য এবং দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলছি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করলেও যতক্ষণ না পর্যন্ত বড় ধরনের ধরপাকড় শুরু হচ্ছে ততক্ষণ মানুষ সচেতন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাই তারা হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাচ্ছেন।"