সংক্ষিপ্ত
- করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশে দিশেহারা পরিবার
- মা-এর মৃত্যুতে করোনাভাইরাসকে সন্দেহ হাসপাতালের
- দেহ আটকে রেখে দিল হাসপাতাল, পরিবারকেও আইসোলেশনে
- কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ আসতেই উঠতে শুরু করল বহু প্রশ্ন
উপন্য়াসও হার মানে! দিনকয়েক আগে সর্দিজ্বর আর শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে এক মহিলা ভরতি হয়েছিলেন আরজিকর হাসপাতালে। তাঁর ছেলে থ্য়ালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালেই মহিলার মৃত্য়ু হয় আর সঙ্গে সঙ্গে দেহ আটকে দেওয়া হয় করোনা সন্দেহে। এদিকে সেই ফাঁকে স্থানীয় পৌরসভার লোক অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে বাড়িতে এসে তুলে নিয়ে যায় অন্য়দের। 'অন্য়'রা বলতে, ছেলে,দেওর আর ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মাকে। যে মরোমরো বৃদ্ধা আপাতত রাইসটিউবের সাহায্য়ে খাওয়াদাওয়া করছেন। এদিকে এর মধ্য়ে খবর আসে, মৃত মহিলার রিপোর্ট নেগেটিভ। তবু ছাড়া হয় না আইসোলেশনে থাকা পরিবারের সদস্য়দের। একমাত্র ছেড়ে দেওয়া হয় রাইসটিউব পরা বৃদ্ধাকে। শোনা যায়, আরজিকর যোগাযোগ করে বাঙ্গুর হাসপাতালে সঙ্গে। কিন্তু অভিযোগ, মৃত মহিলার ছেলেকে ছাড়তে রাজি হয় না বাঙ্গুর। দেহ পড়ে থাকে আরজিকরেই।
এদিকে এই ফাঁকে যে ওষুধের দোকানে কাজ করতেন বছর বত্রিশের ছেলে, সেই দোকান বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। যার ওপর এলাকার কয়েকহাজার মানুষ নির্ভরশীল। গুজব রটে যায়, ওই থ্য়ালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলের থেকেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় দোকান মালিকের মায়ের মৃত্য়ু হয়েছে। যদিও দিব্যি সুস্থ-সবল অবস্থাতেই রয়েছেন ওই ওষুধের দোকান মালিকের মা। সবমিলিয়ে নিউ ব্য়ারাকপুরের একটি নিম্নবিত্ত পরিবারকে ঘিরে যা ঘটে চলেছে দিনকয়েক ধরে, তা উপন্য়াস তো বটেই, যেকোনও বলিউডি ছবিরও চমৎকার থিম হতে পারে।
করোনা মোকাবিলায় রক্ষা করুন নিজেকে, মেনে চলুন 'হু' এর পরামর্শ
সাবধান, করোনা আতঙ্কের মধ্যে এই কাজ করলেই হতে পারে জেল
কী করে করোনার হাত থেকে রক্ষা করবেন আপনার বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের, রইল তারই টিপস
শরীরে কীভাবে থাবা বসায় করোনা, জানালেন বিশেষজ্ঞরা
জানা গিয়েছে, গত ৩১ মার্চ, নিউ ব্য়ারাকপুরের বছর পঞ্চান্নর মহিলা সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো কিছু উপসর্গ নিয়ে ভরতি হয়েছিলেন আরজিকরে। হাসপাতালেই মারা যান তিনি। করোনা সন্দেহে কর্তৃপক্ষ দেহ ছাড়তে রাজি হয়নি। ওই মৃতার বছর বত্রিশের থ্য়ালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলে, দেওর ও পঁচাত্তর বছরের মরোমরো অবস্থায় থাকা বৃদ্ধ মাকে কার্যত তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শোনা যায়, নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা ও স্থানীয় পুলিশের উদ্যোগে তাঁদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বেলেঘাটা আইডিতে। সেখানে কোনও পরীক্ষা হয় না। তারপর সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় এমআর বাঙ্গুরের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
এরপরই ক্লাইম্যাক্সে ওঠে পুরো 'গল্প'টা। আরজিকরে মৃত মহিলার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। অথচ তাঁর একমাত্র ছেলে বাঙ্গুরের আইসোলেশনে থাকায় হাসপাতালেও দেহ পড়ে থাকে আরজিকরেই। এরমধ্য়ে ছেড়ে দেওয়া হয় রাইসটিউব পরা মরোমরো বৃদ্ধাকে। আরজিকর কর্তৃপক্ষ মৃত মহিলার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে বাঙ্গুরকে। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও কোনও কাজ হয় না। প্রশ্ন ওঠে, সুস্থ লোককে এইভাবে করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে দেওয়া কি তাঁদেরকে আরও ঝুঁকির মধ্য়ে ফেলে দেওয়া নয়?
এদিকে নিউ ব্য়ারাকপুর পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনের অতি সক্রিয়তায় ঘটে যায় আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা। থ্য়ালাসেমিয়া আক্রান্ত ওই যুবক আইসোলেশনে থাকায় তিনি যে ওষুধের দোকানে কাজ করতেন, সেই দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে দোকানের ওপর নির্ভরশীল এলাকার কয়েকহাজার মানুষ।
কিন্তু নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার এই অতি সক্রিয়তার কারণ কী? পুরসভার ভাইস চেয়ারম্য়ান মিহির দে অবশ্য় প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বললেন, "দেখুন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ওঁদের ছাড়া হচ্ছে না। রিপোর্ট নেগেটিভ আসা সত্ত্বেও। এতে আমাদের কী করার আছে।"
অন্য়দিকে যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে মৃতার পরিবারের সদস্য়দের কার্যত আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে, সেই বাঙ্গুরের সুপার ডা. শিশির নস্করকে ফোন করা হয় এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে। ফোন পেয়ে শিশিরবাবু বিষয়টির খোঁজ নেন। তারপর খানিকক্ষণ বাদে জানান, "যেহেতু মৃত মহিলার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, তাই ওঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা একঘণ্টার মধ্য়েই ছেড়ে দিচ্ছি ওঁদের।"
প্রশ্ন উঠেছে, থ্য়ালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ওই ছেলের এবার কী হবে? ওষুধের দোকানের কাজটা তো গেলই। এবার মায়ের দেহ সৎকারের খরচা না-হয় কোনওরকমে জোগাড় করা গেল, কিন্তু তারপর পেট চলবে কী করে? আর তিনি যদি সুস্থ শরীরে আইসোলেশনে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন কোনওভাবে, তার দায় কে নেবে? নিউ ব্য়ারাকপুর পৌরসভা নাকি বাঙ্গুর হাসপাতাল?