সংক্ষিপ্ত
সদ্য সমাপ্ত ২ ম্যাচের ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড (India vs New Zealand) দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে প্রথম টেস্টে ভারতের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার রচিন রবীন্দ্র (Rachin Ravindra)। অনেক কিউই ক্রিকেটারের মতোই তাঁরও শিকড় কিন্তু, ভারতেই। তাঁর বাবা রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি (Ravindra Krishnamurthy) এবং মা দীপা আদতে বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) বাসিন্দা। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে তাঁরা নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন। ওয়েলিংটনেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন রচিন এবং তাঁর বোন আইসিরি। মাত্র ২২ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। রচিনের ক্রিকেট যাত্রায় কিন্তু দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর বাবা রবীন্দ্রের। পেশায় প্রযুক্তিবিদ হলেও তিনি ওয়েলিংটনের ক্রিকেট ক্লাব হাট হকসের চেয়ারম্যান এবং নিজেও আগে ক্রিকেট খেলতেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সহ-প্রকাশন কানাড়া প্রভার এক্সিকিউটিভ এডিটরকে একান্ত সাক্ষাৎকারে, রচিনের ক্রিকেট যাত্রার সম্পর্কে জানিয়েছেন রবীন্দ্র -
সদ্য সমাপ্ত ২ ম্যাচের ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড (India vs New Zealand) দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে প্রথম টেস্টে ভারতের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র (Rachin Ravindra)। অনেক কিউই ক্রিকেটারের মতোই তাঁরও শিকড় কিন্তু, ভারতেই। তাঁর বাবা রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি (Ravindra Krishnamurthy) এবং মা দীপা আদতে বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) বাসিন্দা। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে তাঁরা নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন। ওয়েলিংটনেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন রচিন এবং তাঁর বোন আইসিরি। মাত্র ২২ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। রাচিনের ক্রিকেট যাত্রায় কিন্তু দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর বাবা রবীন্দ্রের। পেশায় প্রযুক্তিবিদ হলেও তিনি ওয়েলিংটনের ক্রিকেট ক্লাব হাট হকসের চেয়ারম্যান এবং নিজেও আগে ক্রিকেট খেলতেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সহ-প্রকাশন কানাড়া প্রভার এক্সিকিউটিভ এডিটরকে একান্ত সাক্ষাৎকারে, রচিনের ক্রিকেট যাত্রার সম্পর্কে জানিয়েছেন রবীন্দ্র -
- আপনার, আপনার পরিবার, ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বলুন
আমরা (আমার স্ত্রী দীপা এবং আমি দুজনেই) আদতে ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা। ব্যাঙ্গালোরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমাদের বাবা-মারাও ছিলেন ব্যাঙ্গালোরের। বর্ধিত পরিবারের অনেকেই ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। ভারতীয় এবং কন্নড় ঐতিহ্য নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। রাচিন এবং আমার মেয়েও তাই। আমরা আমাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত এবং একই সঙ্গে হৃদয়ে কিউই। উভয়ের মিশ্রণই থাকা ভাল। স্পষ্টতই ভারতীয় হওয়ায় ক্রিকেটটা ছিল জীবনের অংশ। ভারতের যে কোনো পরিবারের মতো আমরা ক্রিকেট অনুসরণ করতাম। আমি ব্যাঙ্গালোরে এবং নিউজিল্যান্ডে কিছুটা ক্রিকেট খেলেছিও।
আরও পড়ুন - IND Vs NZ: চারে মিলে হল দুই, অভিনব 'নামমিলান্তি' বিসিসিআইয়ের
বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে রাচিন রবীন্দ্র
- আপনি কিভাবে নিউজিল্যান্ড চলে গেলেন? কেন সেখানে বসতি স্থাপন করলেন?
নিউজিল্যান্ড দারুণ জায়গা, বিশ্বের সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি। নিউজিল্যান্ডের মানুষ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। ওয়েলিংটনে যেখানে আমরা থাকি, সেখানটা আশির দশকের ব্যাঙ্গালোরের মতোই, শান্ত, ঠান্ডা আবহাওয়া। জায়গাটা সম্ভবত বাচ্চাদের বড় করার সেরা জায়গা। এখানে জীবনযাত্রা বেশ সহজ, বিশ্বের অনেক বড় শহরের মতো কোন পাগলামি নেই এবং ব্যাঙ্গালোর থেকে আগত লোকেদের জন্য বিশ্রামহীন জীবনধারার উপযুক্ত। আমাদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না যে ওখানে আমরা দীর্ঘমেয়াদে থাকতে চলেছি।
- আপনি কি এখনও বাড়িতে কন্নড়ে কথা বলেন?
দীপা এবং আমি বেশিরভাগ কন্নড় বলি। স্পষ্টতই অনেক ইংরাজি কথাও চবে আসে। রাচিন এবং আইসিরি কন্নড় বলতে পারে না কিন্তু ওরা কন্নড় খুব ভালো বোঝে।
- রাহুল এবং সচিন থেকে রাচিন নামটি এসেছে বলে শুনেছি। তাই কি?
এটা আমার না, আমার স্ত্রীর পরিকল্পনা ছিল। আমি নিশ্চিত নই ও অত চিন্তা ভাবনা করে, দুটি নাম মিশ্রিত করে, রাচিন নামটা তৈরি করেছিল কিনা। আমরা নিজেরা এই নিয়ে কখনও আলোচনা করিনি। দীপা এই নামটা বলেছিল। আমার মনে হয়েছিল, নামটা সত্যিই সুন্দর। উচ্চারণ এবং বানান সহজ। পরে জেনেছিলাম, নামটা এই দুটি নামের সমন্বয়ে গঠিত।
- রাচিন কীভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল? কী তাকে খেলায় আকৃষ্ট করেছিল?
আমি একজন ডাই হার্ড ক্রিকেট ফ্যান। আমার স্ত্রী দীপাও একজন প্রবল ক্রিকেট ভক্ত। আমরা টেলিভিশনে নিয়মিত ক্রিকেট দেখতাম। সেটা অবশ্যই রাচিনকে প্রভাবিত করেছে। তবে শুরুতে রচিনের শরীরে সমস্যা ছিল। যখন ওর বয়স ছিল ১ বথর, সেই সময় ওর হৃদয়ে একটি ছোট ছিদ্র ধরা পড়ে। তবে, তিন বছর পর তা ভরাট হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তাররা যখন বলেছিলেন ও পুরো স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে, রচিন প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিল, 'এখন কি আমি সারাদিন বিনা বাধায় ক্রিকেট খেলতে পারব?'
ছোট থেকেই ছিল রাচিনের ক্রিকেটে আগ্রহ
- রাচিনের একজন পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পিছনে আপনি কীভাবে সাহায্য করেছেন?
আমি ওর প্রচেষ্টার কৃতিত্ব নিতে চাই না। হ্যাঁ, আমি ওকে সাহায্য করেছি এবং ওকে ট্রেনিং দিয়েছি, কিন্তু ওর প্রচেষ্টাটাই আসল ছিল। আমিও ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। স্পষ্টতই আমার স্ত্রী দীপাও ওর জন্য অনেক কিছু করেছে। যে কোনও মা যেমনটা করে থাকে। সাব জিরো তাপমাত্রায় প্রতিদিন ভোর ৫টায় ও রচিনকে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করে দিত। দুই সন্তানের হোমওয়ার্ক করানো এবং স্কুলের পড়াশোনা দেখানো - সবই করত ও। সেই সঙ্গে রচিনের সাফল্যের পিছনে রয়েছেন অনেক প্রশিক্ষক এবং ইভান টিসেরা, মার্ক বোর্থউইক, পল উইজম্যান, বব কার্টার, শ্রীরাম কৃষ্ণমূর্তি, গ্লেন পকনেল, ব্রুস এডগার এবং আরও বেশ কয়েকজন ভালো মানুষ। জে অরুণ কুমার, শ্রীধরন শ্রীরাম, সৈয়দ শাহাবুদ্দিন, জাভাগাল শ্রীনাথের মতো ভারতীয় ক্রিকেটাররাও ওর ক্রিকেট এবং চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল।
- আপনি কখনও ভেবেছিলেন যে, তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে খেলতে পারবেন?
এটি একটা দীর্ঘ যাত্রা। আমার সবসময়ই এমন একটা আশা ছিল। খেলাটা ভালবাসে বলে, রচিন ক্রিকেটে যে পরিমাণ সময় দিত, ওর অনুশীলন, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি - তার যে ফল মিলবে, তা আমি জানতাম। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে, রচিন সবসময়ই তার বেশি বয়সীদের থেকে ভালো খেলত। ১২ বছর বয়সেই অনুর্ধ্ব ১৫ দলে সুযোগ পেয়েছিল, ১৩ বছরে অনুর্ধ্ব ১৭-তে এবং ১৫ বছর বয়সে ও অনুর্ধ্ব-১৯ নিউজিল্যান্ড দলে খেলেছিল। তাই আমরা সবসময়ই জানতাম ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জায়গা করে নেবে। তবে তারপরও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
- রাচিন তার টেস্ট অভিষেক করল এবং তাও আপনার জন্মভূমিতে। কেমন ছিল অনুভূতি?
জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা দারুণ সম্মানের। স্পষ্টতই ও এখনও পর্যন্ত যা অর্জন করেছে, তাতে আমরা গর্বিত। ভারতীয় ক্রিকেট দল টেস্টের শীর্ষস্থানীয় দল। সেই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক করাটা দেখা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল।
ব্ল্যাকক্যাপস জার্সি গায়ে পরিবারের সঙ্গে রাচিন
- ৯১ বলে ১৮* রানের তার দুর্দান্ত ইনিংসটি নিউজিল্যান্ডকে ড্র করতে সাহায্য করেছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। ভারতে খেলা এবং খুব ভালো কিছু স্পিন বোলারের বিরুদ্ধে। ওকে যে চাপ সামলাতে হয়েছে, তা আমি পুরোপুরি কল্পনাও করতে পারি না। বলটি এক ইঞ্চি কম ঘুরলে ব্য়াটের বাইরের কানায় লগতে পারে। এটা ছিল মিলিমিটারের খেলা। চাপের মধ্যে ভাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতাই কোনও বড় খেলোয়াড়দের আলাদা করে দেয়। সৌভাগ্যবশত ওর মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে। অভিষেক খেলাতেই তাকে দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
- রাচিনের লড়াইটা এমন এক দলের বিরুদ্ধে এসেছিল যার কোচ আপনার ক্রিকেট আইডল রাহুল দ্রাবিড়। সেই মুহূর্ত সম্পর্কে বলুন।
সেটি ছিল একটা চেরিস করার মতো মুহূর্ত। ভারতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা ড্র করা সহজ কাজ নয়। রাহুল দ্রাবিড়ের খেলা থেকে রচিন নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। কারণ রাহুল দ্রাবিড় শুধু আমার নয়, রচিনেরও একজন আইডল। নিঃসন্দেহে রাহুল প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণার একটি ধারাবাহিক উৎস।
- অভিষেক টেস্টেই ব্যাট হাতে দাগ কেটেছেন। রচিনকে কি পরবর্তীকালে নিজেকে একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবে দেখতে চায়, নাকি বোলিং অলরাউন্ডার?
ও এখান থেকে কোথায় যাবে, তা নির্ধারণ করা আমার উপর নির্ভর করে না। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং এবং নেতৃত্বের ট্রেনিং-এ ও সমান সময় দিয়েছে। শুধু ব্যাটিং বা বোলিং নয় খেলার সব ক্ষেত্রেই ওকে উন্নতি করতে দেখলে ভালো লাগবে। ফিল্ডিং খেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং যে দিনগুলিতে ও ব্যাট এবং বলে অবদান রাখতে পারবে না, সেই দিনগুলিতে ও ফিল্ডিং-এ অবদান রাখতে পারে। বর্তমান সময়ে খেলার সমস্ত দিক সমান গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ও সব বিভাগেই সমানভাবে অগ্রসর হবে।
টেস্ট অভিষেকে বল হাতে রাচিন রবীন্দ্র
- রাচিন কি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলবে? নিলাম পুলে নাম লেখানোর কোনও পরিকল্পনা আছে?
ওর সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে। সামনে দীর্ঘ কঠিন রাস্তা পড়ে আছে। এতটা সামনের কথা এখনই ভাবছি না। একবারে একটি করে খেলা নিয়ে ও ভাবুক, তার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকুক। আইপিএল যে একটি প্রিমিয়ার টুর্নামেন্ট এবং এতে অংশ নেওয়া প্রতিটি ক্রিকেটার নিজের উন্নতি করতে পারে, সেই বিষয়টা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে, আনার মতে, আইপিএল খেলতে গেলে, অনেকগুলো শর্ত পূর্ণ করতে হবে। ও সেই শর্তগুলো পূর্ণ করে কিনা, তা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি বিচার করবে। বিষয়টা ওর এজেন্ট ঠিক করবে।
- রচিনের ক্রিকেটিং আইডল কারা?
বড় হওয়ার পথে রচিনের পছন্দের তালিকায় অনেক খেলোয়াড় ছিল। সবে সবচেয়ে পছন্দের ছিলেন সচিন ও রাহুল। এছাড়া, পন্টিং, লারা, হেডেন, ইনজামামদেরও ও খেলতে দেখেছে। সে এক অসাধারণ ক্রিকেটিয় যুগ ছিল। রচিনের ক্রিকেট আদর্শের মধ্যে সচিন, রাহুল ছাড়া ছিলেন রস টেলর। অন্যদিকে, বল হাতে ট্রেন্ট বোল্ট এবং ড্যানিয়েল ভেট্টরি ছিলেন ওর আদর্শ।