সংক্ষিপ্ত
বর্তমানে বিসিসিআইয়ের (BCCI) নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। ভারতীয় ক্রিকেটার (Indian Cricketer) হিসেবেও বিশ্বকাপে (World Cup) প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। ৩ জানুয়ারি চেতন শর্মার জন্মদিন। জানুন তার কেরিয়ারের জানা-অজানা দিক।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অভূতপূর্ব সাফল্য, ভারতের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে (World Cup) হ্যাটট্রিক, বোলার হিসেবে খেললেও বিপদের সময় চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি, মদনলাল, সান্ধু যুগের পরে কপিল দেবের (Kapil Dev) বোলিং পার্টনার হওয়া। কিন্তু ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস যে এই সব কৃতিত্ব ভুলে ক্রিকেট বিশ্ব তাকে মনে রেখেছে এশিয়া কাপের (Asia Cup) ফাইনালে শেষ বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের হাতে ছক্কা খাওয়ার জন্য। তিনি চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। একটি ছয় তার ক্রিকেট জীবনকে অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু নিজের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন চেতন। আর বর্তমানে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের (Indian Cricket Team) নির্বাচক কমিটির প্রধান। ৩ জানুয়ারি চেতন শর্মার জন্মদিনে আরও একবার ফিরে দেখা চেতন শর্মার সংগ্রামের কাহিনি। একইসঙ্গে একটি ছয়ের জন্য 'খলনায়ক' নয়, জানুন 'নায়ক' চেতন শর্মার অজানা দিক।
চেতন শর্মার জন্ম হয়েছিল জানুয়ারির তিন তারিখে, ১৯৬৬ সালে। লুধিয়ানার সেই কিশোরের ক্রিকেটের প্রতি প্রেম জেগে উঠেছিল অনেক অল্প বয়েসে। দেশ প্রেম আজাদের হাতে হয়েছিল ২২ গজে হাতে খড়ি। কপিল দেবও ক্রিকেটীয় দীক্ষা নিয়েছিলেন দেশ প্রেম আজাদের কছে। ক্রিকেট প্রতি অগাধ ভালোবাসা, ভক্তি ও যোগ্যতার কারণেই অল্প বয়সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান চেতন শর্মা। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ১৯৮০ সালে নর্থ জোনের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। এরপরের দুই বছর তিনি খেলেছেন নানা বয়সভিত্তিক দলে। এরপর ১৯৮২ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে চেতনের। হরিয়ানার হয়ে রঞ্জি ট্রফির সেই মৌসুমটাতে তিনি ছয় ম্যাচ খেলেই চেতন নিয়েছিলেন ২৭ উইকেট। প্রথম মৌসুমের এই পারফর্ম্যান্সের পর তিনি ডাক পেয়েছিলেন দ্বিতীয় মৌসুমেও, সেখানেও উজ্জ্বল চেতন শর্মা। মাত্র নয় ম্যাচ খেলেই নিয়েছিলেন ৫১ উইকেট।
ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া সাফল্যের পর ভারতীয় দলের ক্যাপ মাথায় তুলতেও বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি চেতন শর্মাকে। ১৯৮৩ সালে ভারতীয় ওয়ান ডে দলে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৬০ রান দিয়ে ৩ উইকেট। পরের সিরিজে পাকিস্তানের সাথে টেস্ট ম্যাচে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে লাহোরে সেই টেস্ট থেকেই ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠেন। কপিল দেবের বোলিং পার্টনার হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। কিন্তু ১৯৮৬ সাবে শারজা হয়ে উঠছিল চেতন শর্মার ক্রিকেট কেরিয়ারের দুঃস্বপ্ন। অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। শেষ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান, চেতন শর্মার বলে ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। দেশ জুড়ে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ হন চেতন। দেশবাসীর কাছে 'খলনায়ক' হয়ে ওঠেন তিনি। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে ১৯৮৭ সালে নেহেরু কাপে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত পারফর্ম করেন চেতন শর্মা। ২৫৬ রানের তাড়া করতে নেমে দ্রুতই দুই উইকেট পড়ে যায় ভারতের, স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ৬৫ রান। ঠিক সে সময় টিম ম্যানেজমেন্ট ক্রিজে পাঠায় চেতন শর্মাকে। তখন পর্যন্ত চেতন শর্মা ওয়ানডেতে একটা ফিফটি অবধি করেননি, বাজি ধরাটা তাই সহজ ছিল না ভারতের জন্যে। তবে ৯৬ বলে ১০১ রানের ম্য়াচ উইনিং ইনিংস খেলে নিজের ব্য়াটিং দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছিলেন চেতন শর্মা।
এমন স্মরণীয় ইনিংস খেলার পরও ভারতীয় দলে তার জায়গা পাকা হয়নি। ৩ ম্য়াচ পরই বাদ পড়েন তিনি। তারপর দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৯৯২ সালে ফের দলে ফেরেন তিনি। তাও বেশিদিন নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। আস্তে আস্তে ক্রিকেটার অস্তাচলে চলে যান চেতন শর্মা। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন চেতন শর্মা। নিজের দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে ২৩টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৬৫টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন চেতন শর্মা। টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৬১ উইকেট এবং একদিনের ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৬৭ উইকেট। এছাড়াও প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন ১২১টা। তিন ধরণের ফরম্যাটে তাঁর সংগ্রহে আছে ৩৯৬, ৪৫৬ এবং ৩,৭১৪ রান। পরবর্তী সময়ে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও পত্রিকা ও সিনেমাতেও কাজ করেছেন ক্রিকেট নিয়ে। তবে কখনই হাল ছাড়ননি চেতন শর্মা। বর্তমানে তিনি বিসিসিআই নির্বাচক কমিটির প্রধান। ৫৬ তম জন্মদিনে সকাল থেকেই শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন চেতন শর্মা। বিসিসিআইয়ের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে শুভেচ্ছা। প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ও নির্বাচক কমিটির প্রধানকে জন্মদিনে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকেও জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা ও আগামীর সাফল্য় কামনা।