সংক্ষিপ্ত
কোন বাংলার পুজো বেশি টানে ‘রাজচন্দ্র’কে? সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন গাজি আব্দুন নূর। প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরেই বললেন- 'আমি জানি, দুর্গাপুজোর বোধন থেকে ষষ্ঠীর আগমন। নবপত্রিকা স্নান থেকে সংকল্প, খুঁটিয়ে। প্রশ্ন করুন, কী করে?'
দুই বাংলার পুজো দু’রকম। তিনি দেখেছেন। দেখতে দেখতে বুঝেছেন, পুজো, উৎসব— সবার জন্য। তাই তিনি ভিনধর্মী হয়েও দুর্গাপুজো দেখেন। দুর্গাপুজোয় মাতেন। তিনি গাজি আব্দুন নূর। এ পার বাংলা যাঁকে ছোট পর্দায় রানি রাসমণির জমিদার স্বামী ‘রাজচন্দ্র দাস’ হিসেবে চেনে। এশিয়ানেট নিউজের জন্য ঢাকায় বসে কলম ধরলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা।
আমি গাজি আব্দুন নূর। আপনাদের থেকে একটু আলাদা। কেন? জাতের ফেরে। তার পরেও আমি জানি, দুর্গাপুজোর বোধন থেকে ষষ্ঠীর আগমন। নবপত্রিকা স্নান থেকে সংকল্প, খুঁটিয়ে। প্রশ্ন করুন, কী করে? পড়াশোনা এবং অভিনয় কারণে এ পার বাংলায় ছিলাম। ছোট পর্দায় ‘রানি রাসমণি’ ধারাবাহিকে জানবাজারের জমিদার রাজচন্দ্র দাস হতে গিয়ে সেই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সেই বাড়ির পুজোও দেখেছি তো। তা ছাড়া, বাংলাদেশে দুর্গাপুজো হয় না, এমনটা নয়। তাই আপনাদের উৎসব আমার প্রিয় পরব।
কলকাতার পাশাপাশি যশোহরও আমার সাকিন। কলকাতা থেকে ফিরে গত কয়েক বছর যশোরে পুজো কাটিয়েছি। এ বছর ঠিক করেছি বন্ধুদের নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির আর ঢাকার বাকি মণ্ডপগুলোতে যাব। গত দু’বছর করোনার কারণে পায়ে বেড়ি। ইচ্ছে থাকলেও বিধিনিষেধ মেনে ঘুরতে পারিনি। অদ্ভুত অস্বস্তিতে ছেয়েছিল মন। পুজোর ক’দিন। আপনারা কি জানেন, পুরনো ঢাকায় দুর্গাপুজায় বেশ ধুমধাম হয়? ওই জাঁকজমক বড্ড প্রিয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটা জায়গা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই পুজো হচ্ছে।
তার পরেও বলব, কলকাতার পুজোর সঙ্গে বাংলাদেশের পুজোয় মিলের চেয়ে যেন অমিলটাই চোখ টানে। কলকাতায় আলোর চমক, থিমের পুজো। বাংলাদেশ এখনও তুলনায় সাবেকি। এখানে অন্তরের টান বেশি। এই সাবেকিয়ানা, আন্তরিকতা কলকাতাতেও একটা সময় ছিল। এখন সবই স্মৃতির মোড়কে মোড়া। সবেতেই যেন বাণিজ্যের চোখ ঝলসানো আলো। যদিও থিমের পুজো আমার খুব খারাপ লাগে না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই মণ্ডপ ঘুরে থিম বোঝার ঝোঁক ছিল। এটা আমার নেশা বলতে পারেন। অভিনয়ে আসার পর মুখ ঢেকে কিংবা অনেক রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছি। আমাদের এই টো টো কোম্পানির একটা বড় দল ছিল। বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোতে আজও দেবী মা সাবেকি। ভাগ্যিস থিম পুজোর চল এখনও আছড়ে পড়েনি এ পার বাংলায়!
এ বছর প্রথম ঢাকার পুজোয় ঘুরব। মনে মনে বেশ উত্তেজিত। সেই ছোটবেলার মতো অনেক পরিকল্পনা করে ফেলেছি। এখন একটাই প্রার্থনা, আমার মা যেন সুস্থ থাকেন। শুনলে অবাক হবেন, আপনাদের মতো আমিও এই উৎসবে কেনাকাটা করি! উপহার দিই, পাই। গত দু’বছর সব থমকে থাকার পরে এ বছর আমি মহাব্যস্ত। তাই কেনাকাটা এখনও শেষ হয়নি। তাড়াতাড়ি কেনাকাটা শেষ করে ফেলব। তার পর দেওয়া-থোওয়ার পালাও মেটাতে হবে। তার পর চারটে দিন আমারও ছুটি। সব দায়িত্ব সরিয়ে রেখে নিজের মুখোমুখি। পুজো জুড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। উৎসব মানেই ভরপেট ভূরিভোজ। পেশায় অভিনেতা। সারা বছর নিয়ম মেনে খাওয়া। চারটে দিন আমার মেজাজ, আমি আক্ষরিক অর্থেই রাজা!
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই খুব ইচ্ছে, সুযোগ পেলে সেখানকার মণ্ডপগুলোও ঘুরে দেখার। সারা বছর যেমন তেমন। প্রাণ খুলে বাঁচার সুযোগ হাতেগোণা কয়েকটি পরব-উৎসবের দিন। আপনারাই বলুন, চেটেপুটে জীবন উপভোগের সুযোগ কখনও ছাড়ে কেউ?
অনুলিখন- উপালি মুখোপাধ্যায়, একান্ত সাক্ষাতকার সংগ্রাহক প্রতিনিধি- উপালি মুখোপাধ্যায়
আরও পড়ুন-
দক্ষিণ সুইডেনের হেলসিংবর্গের কনকনে ঠাণ্ডায় এই প্রথমবার তিথি মেনে দুর্গাপুজো, দুই বাংলার সমন্বয়ে নারীশক্তি
পুজোর আড্ডা- 'ম্যাডক্স না গেলে পুজো পুজো মনে হয় না'- সোহিনী
Durga Puja 2022 : নতুন জামা, পেনসিল হিল, পুজোয় বেড়াতে যাওয়া, জাঙ্ক ফুড খাওয়া' - ঋতুপর্ণা