কলকাতার বাজে কদমতলা ঘাট বা বাবুঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে গিয়ে পরিচয় হলো দুজন তামিল মহিলার সঙ্গে।সুদূর তামিল থেকে এসেছেন তারা এবার মায়ের টানে

মণ্ডপে মণ্ডপে হানি সিংহের গান বা অবাঙালি সংস্কৃতিকে নিয়ে যে জোরদার মাতামাতি চারিদিকে - তা দেখে রকের কাকু জেঠুদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় " আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো ভুলেই যাচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতিকে , আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এমনভাবে পুজো কাটাতাম তেমনভাবে খাওয়া দাওয়া করতাম "- পাড়ার রকের কাকুদের এই বোরিং গালগল্প আমরা এক আধবার সবাই শুনেছি। আবার তার্কিক লোকজন বলেন " বাংলায় তো এখন গণেশ পুজো হচ্ছে বাংলা আর বাংলা রইলো কি " এইযে বাঙালীয়ানাকে সবসময় একটা প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয় সেটা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি। যারা এরকম করেন তাদের যোগ্য জবাব দিয়েই বলছি বাঙালিয়ানাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলতে পারে এমন জিনিসপত্র তৈরী হয়নি এখনো। বাঙালি সংস্কৃতি এতো ঠুনকো নয় যে আপনার বাজে সমালোচনায় তার কিছু যাবে আসবে। সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা বলি যেটা শুনে আমার মতো আপনারাও ঠিক এমন ভাবতে বাধ্য হবেন। 

দশমীর বিকেল। কলকাতার বাজে কদমতলা ঘাট বা বাবুঘাটে গেছিলাম প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে। গিয়ে পরিচয় হলো দুজন তামিল মহিলার সঙ্গে। তারা বসিরহাট থেকে এসেছেন তাদের বন্ধুর বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন করতে।প্রিয়া আর প্রীতি দুজন দিদি- বোন । দুজনেই এখন থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ওনারা তামিল- সেটা শুনে খানিক অবাক হয়েছিলাম এইকারণেই, যে ওনারা কিন্তু দুর্ধষ্য বাংলা বলেন। আলাপচারিতার ফাঁকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম "এতো ভালো বাংলা শিখলেন কোথা থেকে ?" বললেন ওনারা তামিলনাড়ুর হলেও , একসময় কিন্তু থাকতেন কলকাতার পূর্ণদাস রোডে। বড়ো হয়েছেন ওখানেই। তারপর একটা সময় পরে কর্মসূত্রে চলে যান ব্যাঙ্গালুরুতে। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতিকে ভুলতে পারেননি আজও। তাই ২৫ বছর পর আবার ফিরে এসেছেন মা দুর্গার টানে, বাংলায়।

এতো বছর বাদে আবার ফিরে আসা কেন ? শুধুই কি আনন্দ করতে ? কেন ব্যাঙ্গালুরুতে কি আনন্দের উৎসের অভাব ? একেবারেই না। এসেছেন শুধুমাত্র বাঙালি সংস্কৃতির টানে। কারণ একবার যারা বাংলার প্রেমে পড়েন তারা আর ভুলতে পারেন না বাংলাকে।ঠিক যেমন প্রিয়া আর প্রীতি ভুলতে পারেননি। কথার ফাঁকেই প্রীতি বলেন যে মায়ের চোখ আঁকা দেখে তার নাকি বিশেষ একরকম অনুভূতি হয়। ছোটবেলায় তিনি যখন দেখতেন মহালয়ায় মায়ের চোখ আঁকা হচ্ছে -এঘটনা বরাবরই তাকে অন্যরকম আবেগে ভাসাতো । প্রিয়া, প্রীতির চেয়ে খানিক ছোট, তাই ছোটবেলার এতো কথা তার মনে নেই। তবে তার চোখে মুখে যেটা স্পষ্ট তা হলো আনন্দের ছাপ। পুজোর এই চারটে দিন চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছেন তিনি।খুব এনজয় করেছেন কলকাতার প্যান্ডেল হপিং । কলকাতার পুজোতে প্যান্ডেল হপিং এর জন্য রাস্তায় যে জনসমুদ্র নামে তা সুষ্ঠ ভাবে ম্যানেজ করার জন্য প্রশাসনিক কার্যকর্তাদেরও ধন্যবাদ দিলেন তিনি। কলকাতার সাথে ব্যাঙ্গালোরের পুজোর পার্থক্য কি তা জিজ্ঞাসা করায় , প্রীতি বলেন যে কলকাতার পুজোর মধ্যে যে গ্রান্ড ব্যাপার আছে সেটা অন্য কোনো জায়গার পুজোতে তিনি খুঁজে পান না কিছতেই । কর্মসূত্রে তিনি মুম্বাইতেও থেকেছিলেন বেশ কিছু বছর। সেখানকার দুগ্গাপুজোর কথা তুলেও তিনি বলেন ,যে কলকাতার সেই আমেজ কোথাও মিসিং থাকে বাইরে।

তারপর আরো বেশ কিছুক্ষন কথোপকথনের পর তাড়া থাকায় তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে হয় তাদের। কিন্তু আলাপ করে যা বুঝলাম তা হলো জাতে তামিল হলেও মনে প্রাণে কিন্তু তারা একেবারে বাঙালি। তাই বাঙালিয়ানা বিষয়টির মধ্যে যে বাঙালিদের একার আধিপত্য থাকবে সেই দাবি করাটা এখন বোকামো। তাই প্রীতি প্রিয়াদের মতো মানুষরা যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে নিস্বারথভাবেই মন-প্রান থেকে এত ভালোবাসেন , ,মা দুগ্গার কাছে প্রাথনা করবো যে তারা যেন এইভাবেই বার বার ফিরে আসতে পারেন বাংলায়। শুভ বিজয়া। দুগ্গা দুগ্গা। 

আরও পড়ুন বিজয়া দশমীতে বাগবাজার সর্বজনীনের সিঁদুর খেলা, দেখুন ভিডিও

আরও পড়ুন দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা পুজো যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লী, থিম 'ত্রিকাল'

আরও পড়ুননজরকাড়া সুরুচি সঙ্ঘ-এর এবারের থিম 'পৃথিবী আবার শান্ত হবে'

আরও পড়ুন'পুজোর আড্ডা ,পুজোর সংখ্যাতেই দিন কাটতো আমার' - পুজোর কথায় কুণাল ঘোষ

আরও পড়ুন ৭৭ বছরে কিসের আবার রাজনীতি ? পুজো প্ল্যানে ট্রাভেলে রয়েছে গোপালপুর

আরও পড়ুন পুজো মানেই বন্ধুদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া ,আর মাঝে মাঝে মণ্ডপে গোলচক্কর -আর কি বলছেন সুজন চক্রবর্তী

আরও পড়ুন উমার মতোই পুজোর একদিন বাপের বাড়িতে ফেরেন মালা , বললেন “রাজনীতিবিদদের বন্ধু হয় না”

আরও পড়ুন ৩ দিনে ৫০টা ঠাকুর উদ্বোধনের পরিকল্পনা, পুজো এভাবেই কাটাচ্ছেন বিধায়ক দেবাশীষ কুমার

আরও পড়ুনপুজোতে কলকাতায় থাকলেও ,এবার কিন্তু মুক্তেশ্বর ,নৈনিতাল ,আলমোড়ার টানেই কাটবে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের পুজো