সংক্ষিপ্ত
জানা যায়, রায় বাহাদুরের পুত্র রবীন্দ্র নারায়ণ সিংহ দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হন। প্রিয় পুত্রের আরোগ্য কামনায় প্রায় ৭৭ বছর আগে নেহালিয়া সিংহ বাড়ির দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু, পুজার সময়কালে রবীন্দ্র নারায়ণের মৃত্যু হয়।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্বদেশী বিপ্লবীদের (Freedom fighter) হাত ধরে চালু হওয়া মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) নেহালিয়া এলাকার সিংহ বাড়ির দুর্গাপুজোকে (Durga Puja) ঘিরে উন্মাদনা চরমে। পরবর্তীতে রায় সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ বাহাদুর প্রতিষ্ঠিত এই পুজো, শোকে-দুঃখে একদিন তিনি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে ফের এই পুজো শুরু হয়। বর্তমানে সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ প্রতিষ্ঠিত ওই পুজো বারোয়ারি (barowari durga puja) হলেও, নিয়ম মেনে নিরঞ্জনের দিন সিংহ বাড়ির দুয়ারে নামানো হয় প্রতিমা। সিংহ পরিবার প্রতিমা দর্শন করলে তবেই ভাগীরথীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
জানা যায়, রায় বাহাদুরের পুত্র রবীন্দ্র নারায়ণ সিংহ দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হন। প্রিয় পুত্রের আরোগ্য কামনায় প্রায় ৭৭ বছর আগে নেহালিয়া সিংহ বাড়ির দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু, পুজার সময়কালে রবীন্দ্র নারায়ণের মৃত্যু হয়। পুত্রের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি সুরেন্দ্র নারায়ণ। এর ফলে শোকে এই পুজো চিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে গৌর চন্দ্র সিংহ রায়ের উদ্যোগে ১৯৪৫ সালে ফের ওই পুজার আয়োজন করা হয়, আর তখন থেকেই বারোয়ারি পুজো হিসেবে পালিত হয়ে আসছে সিংহ বাড়ির পুজো।
আরও পড়ুন- করোনা আবহে এবার ভক্তশূন্য বেলুড় মঠে নেই আড়ম্বর কেবল বিধি মেনে সম্পন্ন হল কুমারী পুজো
রায় বাহাদুরের প্রিয় পাত্র হিসেবে প্রথম থেকেই ওই পুজোর পুরোহিত হিসেবে কাজ করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সত্যব্রত ভট্টাচার্য। মূলত সত্যব্রতর হাত ধরেই এই মন্দির জেলার স্বদেশী আন্দোলনের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আনাগোনা শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রামী দুর্গা পদ সিংহ, জগদানন্দ বাজপেয়ী, শৈলেন অধিকারী, শ্যামা প্রসাদ সিংহ চৌধুরী, স্মৃতি কুমার মজুমদারদের মত বিপ্লবীর। তখন প্রতিমা গড়তেন যামিনী পাল। একচালার ওই প্রতিমা বর্তমানে চার চালায় পরিণত হয়েছে আর এখন প্রতিমা গড়ছেন আর এন পাল। তবে প্রতিমায় সাবেকিয়ানার রেওয়াজ আজও বর্তমান।
আরও পড়ুন- বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর দিন কালীঘাট থেকে আসে বলির মাংস
সিংহ বাড়ির প্রথা মেনে এখনও অষ্টমীর দিনে প্রতিমাকে সোনার নথ পরানো হয়। কোনও গাড়িতে নয়, নিয়ম মেনে এখনও ২১ জন বেহারা ঘাড়ে করে প্রতিমাকে নিরঞ্জন দিতে নিয়ে যান। তবে মন্দির থেকে নিরঞ্জনে যাওয়ার পথে রায়বাহাদুরের সিংহ দুয়ারে প্রতিমা নামানো হয়, সেখানে সিংহ পরিবার মাকে দর্শন করলে তবেই ভাগীরথীতে নিয়ে গিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। নেহালিয়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সদস্যদের চাঁদা থেকেই পুজোর সব আয়োজন করা হয়। এ প্রসঙ্গে কমিটির কোষাধ্যক্ষ সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, "পাড়ার প্রবাসীরা পুজোর কদিন সব ভুলে হাজির হন নেহালিয়াতে। পুজো হয় রায়বাহাদুরের প্রচলিত নিয়ম রীতি মেনেই।"