সংক্ষিপ্ত
কুলীন সমাজের বুকে দুর্গাপুজোর এমন রীতি একেবারেই কার্যত বে-নজির। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে মুর্শিদাবাদের কাপাসডাঙ্গা এলাকায় সেই প্রথা। একদিকে যেমন অদ্ভুত ভাবে প্রতি ১২ বছর অন্তর দেবীর প্রতিমা তৈরি করার পরেই ঘট সহ তার বিসর্জন হয়।
প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদ- এমন ঘটনা জানলে চোখ কপালে তোলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর হবে নাই বা কেন। কুলীন সমাজের বুকে দুর্গাপুজোর এমন রীতি একেবারেই কার্যত বেনোজির। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে মুর্শিদাবাদের কাপাসডাঙ্গা এলাকায় সেই প্রথা। একদিকে যেমন অদ্ভুত ভাবে প্রতি ১২ বছর অন্তর দেবীর প্রতিমা তৈরি করার পরেই ঘট সহ তার বিসর্জন হয়। অর্থাৎ ১২ বছর ধরে ঘট সহ দেবী মূর্তি মন্দিরেই থাকে টানা।
এখানেই শেষ নয় রয়েছে আরও, স্বপ্নাদেশে নদীর জল থেকে ভেসে ওঠা দেবীর কাঠামো পাবার পরে মন্দিরে দেবীর পুজো করেন তপশিলি সম্প্রদায় পুরোহিত। আর ঘটনাচক্রে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ অনুযায়ী এবছর ১২ তম বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে নতুন করে দেবীর প্রতিমা তৈরি হয়েছে। ফলেনবমীর শেষ মুহূর্তের উৎসাহ উন্মাদনা চরমে পৌঁছেছে এখানে।তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রাচীন ওই পুজো ঘিরে বাসিন্দারা উন্মাদনায় মেতেছেন। আশ্বিনে দেবীর পুজো ব্রাহ্মণ দিয়ে করা হলেও, সারা বছর ধরে দেবীর নিত্য পুজো করেন তফসিলি সম্প্রদায়ের সেবাইতরা।
আরও পড়ুন, Durga Puja: আজ দশমীতে শোভাবাজার রাজবাড়িতে বিষাদের সুর, বিসর্জন নিয়ে কড়া নজরদারি গঙ্গায়
স্বপ্নাদেশ থেকেই গ্রামের ওই পুজোর প্রচলন হয় বলে স্থানীয়রা জানান। কারও মতে এটি ২৫০-৩০০বছরের প্রাচীন, অনেকে আবার এটি আরও প্রাচীন বলে মনে করেন। তবে প্রথম থেকেই গ্রামের এই পুজো চালিয়ে আসছেন তফসিলি সম্প্রদায়ের লোকজন। বাসিন্দারা জানান, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের গোবিন্দ দাস ওরফে গোবিন্দ বাগদি ওই পুজোর প্রচলন করেন। দেবী স্বপ্নাদেশে জানান, গ্রামের পশ্চিম দিকে যে নদী বয়ে গিয়েছে সেখানে একটি কাঠ ভেসে আসবে। ওই কাঠ দিয়ে দেবীর কাঠামো তৈরি করে পুজোর প্রচলন করতে হবে। একইসঙ্গে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দুর্গা ও মহেশ্বরেরপুজো চালিয়ে যেতে হবে। সেইমতো ওই সময়কার স্থানীয় জমিদারের আর্থিক সাহায্য নিয়ে পুজোর প্রচলন হয়। পরবর্তীতে মাটির আটচালা মন্দির তৈরি করা হয়। যদিও গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক সাহায্য নিয়ে মন্দিরটি সম্প্রতি কংক্রিটের করা হয়েছে।
একই মন্দিরে মহেশ্বর ও দুর্গার পুজো হয়। আশ্বিনের দুর্গা পুজোতে যেমন জৌলুস দেখা যায়, তেমনি চৈত্র মাসে মহেশ্বরের পুজোতেও একই জৌলুস দেখা যায়। দেবীর স্বপ্নাদেশমতো একই মন্দিরে দুই পুজো হয়। তবে প্রথা অনুযায়ী প্রতি ১২বছর অন্তর দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি হয়। পুজো শেষে প্রতিমা বিসর্জন করা হয় না। পুজোর ঘটও বিসর্জন করা হয় না। ১২বছরে একবার ঘট ভরা হয়। ১২ বছর পেরলে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। গ্রামের বাসিন্দারা , আশ্বিনে দেবীর পুজো ব্রাহ্মণ দিয়ে করা হয়। কিন্তু এখানে দেবীর নিত্যপুজো হয়। ওই নিত্যপুজো করেন বাগদি সম্প্রদায়ের সেবাইতরা। এটাই এখানকার নিয়ম।বর্তমানে ওই পুজোর চারজন সেবাইত ও রয়েছেন।
তাঁরা এক সপ্তাহ অন্তর পালা করে দেবীর নিত্যপুজো চালিয়ে যান। নবমীর এমন ক্ষণে কাপাসডাঙ্গা এই পুজো নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী মিলন বাগদি, রাজু দাস তারা বলেন,"এমন ব্যতিক্রমী পুজো খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। আর এই বছরটা আরো বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ১২ বছরের অপেক্ষার পরে ফের তৈরি হয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন দেবীর মূর্তি।তবে নবমীর মধ্যে আমাদের মনে বিষাদের পাশাপাশি আনন্দ রয়েছে কারণ মায়ের বিসর্জন হবে না মা এখানেই মন্দিরা থাকবেন আগামী আরও ১২ বছরের জন্য"।
আরও দেখুন, বিরিয়ানি থেকে তন্দুরি, রইল কলকাতার সেরা খাবারের ঠিকানার হদিশ
মায়ের প্রতিমা আর ঘট বিসর্জন করা হবে না নদীতে, পুরাতন ৩০০ বছরের মন্দির এর মধ্যেই আজ দশমী থেকে টানা ২০৩২ সাল পর্যন্ত অধিষ্ঠিত থাকবে। শুধু তাই নয়, পুজোও চলবে এই একই প্রতিমায় ৩০০ বছরের পুজোয় আজব কান্ড নবমীতে বিষাদের মধ্যেই আনন্দ! ১২ বছরের মাহেন্দ্রক্ষণ কাটিয়ে মায়ের মূর্তি ও ঘটের বিসর্জন নয় মন্দিরেই স্থায়িত্ব, নিত্যপুজোয় কুলীন সম্প্রদায়ের পরিবর্তে তপশিলি সম্প্রদায় হাতে।