সংক্ষিপ্ত

এবারের লোকসভা নির্বাচন একের পরে এক না‌‌টকীয় পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছে। আর সেই নাটুকে মুহূর্তগুলো জায়গা করে নিয়েছে ফেসবুক মিম-এ। প্রধানমন্ত্রী থেকে এলাকার দলীয় নেতা কেউই বাদ পড়েননি মিম দুনিয়ায়। 

সারা দেশ জুড়ে চলছে ভোট উৎসব। সাত দফায় নির্ধারণ হবে ৫৪৩ আসনের অধিকারী কারা। তবে শুধু এই সাত দিন নয়। নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই এবারের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থেকে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেরই উত্তেজনা চরমে। 

এক‌‌টা সময় ছিল, যখন ভোটের দিন বাড়িতে বাড়িতে নানা রকমের রান্না হতো। ছুটির মেজাজে রান্নাঘর থেকে ভেসে আসত নানা সুস্বাদু খাবারের গন্ধ। ভোটের আগের দিন রাতে মাংসের দোকানে লাইন দিত মানুষ। সেসব এখনও রয়েছে। কিন্তু ভোট নিয়ে হই হুল্লোড় এতই বেড়েছে যে তাকে উৎসবের থেকে কম কিছু বলা চলে না। 

এসবের মধ্যেই এবারের লোকসভা নির্বাচন একের পরে এক না‌‌টকীয় পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছে। আর সেই নাটুকে মুহূর্তগুলো জায়গা করে নিয়েছে ফেসবুক মিম-এ। প্রধানমন্ত্রী থেকে এলাকার দলীয় নেতা কেউই বাদ পড়েননি মিম দুনিয়ায়। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হয়েছে শয়ে শয়ে ফেসবুক পেজ, যাদের কাজই হলো নির্বাচনের প্রার্থীদের ‌ট্রল করা। নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা টুই‌টারে নিজেদের নামের আগে 'চৌকিদার' যুক্ত করার পরেই ফেসবুকে নতুন হ্যাশট্যাগ শুরু হয়েছে 'চৌকিদার চোর হ্যায়'। এমনকী, 'চৌকিদার চোর হ্যায়' নিয়ে গোটা একট র‍্যাপও তৈরি হয়েছে। এমসি গালিবের গাওয়া 'চৌকিদার চোর হ্যায়' র‍্যাপটি এই মুহূর্তে ফেসবুকে ভাইরাল। 

আবার একটি মিম খুব ভাইরাল হয়। মিমটিতে দেখা যাচ্ছে, মোদী-শাহ এমনই চৌকিদার যে তাঁরা বিজয় মাল্য বা নীরব মোদীকে ধরতে পারলেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে নরেন্দ্র মোদী শ্রীনগরে গিয়ে ফাঁকা একটি ছবি তোলেন। দেখা যাচ্ছে মোদী জনতার দিকে সৌজন্যের হাত নাড়ার ভঙ্গিতে ছবিটি তুলছেন। কিন্তু এলাকাটি জনমানবশূন্য। এমনকী ত্রিসীমানায় কাকপক্ষী পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। সেই ছবিটি নিয়ে তুমুল মিম তৈরি হয় ফেসবুকে। 

সম্প্রতি সাক্ষী মহারাজের অভিসাপের  ভয় দেখিয়ে ভোটভিক্ষা নিয়েও বহু মিম হয়েছে। এছাড়া এই মিম দুনিয়ায় হিট বিজেপি প্রার্থী যোগী আদিত্যনাথ ও সাধ্বী প্রজ্ঞাও। 

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিয়েও ফেসবুক ‌টুইটার জুড়ে মিম-এর বন্যা বয়েছে। 'পাপ্পু সো ডাফার' নামে একটি হ্যাশট্যাগ তৈরি করে তাঁকে ট্রল করা হয়েছে। হলিউডের ছবি 'ফিফটি শেডস অফ গ্রে'-র অভিনেতা জেমি ডোরন্যান-এর সঙ্গে মুখের সাদৃশ্য  থাকায়ও রাহুল ট্রল-এর শিকার হয়েছেন।

তবে এই ট্রল-এর দুনিয়ায় বেশ বড় জায়গা নিয়ে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলে নেতা নেত্রীরা। মমতার বক্তৃতা নিয়ে নেটিজেনরা রীতিমতো মিম-এর বন্য়া বইয়েছেন। এছাড়া মদন মিত্রকে নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম-এর ঝড় বইছে। ইদানিং মদন মিত্র ফেসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সেই লাইভের কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায় তিনি কীভাবে ট্রলের শিকার। যদিও তিনি নিজেই লাইভের মাধ্য়মে বলেছেন, কোনও হাসি ঠাট্টার জন্য নয়। তিনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্যই এই ফেসবুক লাইভ ব্যবহার করেন। কিন্তু তাও তাঁকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে একের পরে বিকৃত মিম ও ভিডিও। 

মিম-এর জগতে নতুন নাম লিখিয়েছেন যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। হাতে গ্লাভস পরে জনতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আর রিক্সায় তোয়ালে পেতে বসে তিনি পর পর মিম-এর শিকার হয়েছেন। একটি সভায় গিয়ে মাথা গরম করে বক্তব্য রাখার এক‌টি ভিডিও ভাইরাল হয় মিমির। আর একটি সভায় গিয়ে মমতাকে মা বলে সম্বোধন করায়ও ট্রলিং-এর শিকার হন মিমি। নুসরত জাহানের ৩৪ কে ৩৬ বলা নিয়েও ফেসবুক মিম ঝড় দেখেছেন। 

সবোর্পরি এবারের নির্বাচন  ঘিরে মানুষের উত্তেজনা কয়েকগুণ বেশি। ক্ষমতায় কোন দল আসবে তা নিয়ে কাটাছেড়া রয়েছে। তেমনই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও কোন দল কাকে কতটা টেক্কা দিল তা নিয়েও ভোটের আবহ তৈরি হয়েছে। তবে ২৩ মে-র পরে কোন দলের ভাগ্যে কোথায় দাঁড়ায় তা শুধু সময়ই বলতে পারে।